হ্যাজলউডদের শংকা কাটিয়ে নতুনের চমকে প্রথমের দেখা পাবে বেঙ্গালুরু?
এলেন কারা, গেলেন কারা
অস্ট্রেলিয়ার জেসন বেহরেনডরফকে ট্রেডে মুম্বাইয়ে পাঠিয়েছে বেঙ্গালুরু। আরেক বাঁহাতি পেসারকে অবশ্য অন্তর্ভুক্ত করেছে, ইংল্যান্ডের রিস টপলি। গতবছরের স্কোয়াড থেকে বেঙ্গালুরু ছেটে ফেলেছে ক্যারিবিয়ান শেরফেন রাদারফোর্ডকেও। দলে এনেছিল উইল জ্যাকসকে, ইনজুরিতে জ্যাকস ছিটকে পড়ায় তার জায়গায় এনেছে মাইকেল ব্রেসওয়েলকে। আরও কয়েক অপরিচিত দেশিকে বিদায় করে এনেছে নতুন কয়েকজন, যাদের মধ্যে পরিচিত হওয়ার মতো আছেন আভিনাশ সিং।
সম্ভাব্য সেরা একাদশ
ওপেনিংয়ে দুর্দান্ত বিকল্প বিধ্বংসী কিউই ব্যাটার ফিন অ্যালেন। সুযোগ পেলে আরেক বিকল্প মাইকেল ব্রেসওয়েলও হয়ে উঠতে পারেন ভয়ঙ্কর। ইংলিশ অলরাউন্ডার ডেভিড উইলিকেও প্রয়োজনে ডাকা যেতে পারে।
১। ডু প্লেসি
২। কোহলি
৩। রাওয়াত / প্রাভুদেসাই
৪। ম্যাক্সওয়েল
৫। লমরর
৬। কার্তিক
৭। শাহবাজ
৮। হাসারাঙ্গা
৯। হার্শাল
১০। সিরাজ
১১। টপলি
ব্যাটিং: টপ অর্ডারে অস্বস্তির মাঝে স্বস্তি কোহলির ফর্ম
গত মৌসুমে পাওয়ারপ্লেতে ৭.২৫ রান রেটে ব্যাট করেছে বেঙ্গালুরু, টুর্নামেন্টে হায়দরবাদের পরে এত ধীরগতিতে পাওয়ারপ্লেতে আর কোনই দল ব্যাট করেনি। টপ অর্ডারে পেয়েছে ১২৮.৯১ স্ট্রাইক রেটের ব্যাটিং। এর বড় কারণ বিরাট কোহলি, গেল দুই আসর নিজের মানের ধারেকাছের ব্যাটিংও যে করতে পারেননি। ২৫.৭২ গড়ে কোহলি ব্যাট করেছেন ১১৮ স্ট্রাইক রেটে। ওপেনিংয়ে অনুজ রাওয়াত সুযোগ লুফে নিতে পারেননি সেভাবে, ডু প্লেসি রান করলেও টুর্নামেন্ট শেষে তার স্ট্রাইক রেটও ১৩০ পেরোয়নি। তারপরও বেঙ্গালুরু ব্যাটিংয়ে সাফল্যের সূর্য দেখেছে দুর্দান্ত মিডল অর্ডারের বদৌলতে।
নাম্বার ৪ থেকে ৮ পজিশনে ব্যাট করা ব্যাটাররা খেলেছেন ১৪০.৯০ স্ট্রাইক রেটে, ওভারপ্রতি ৯.১৮ রান করে তুলেছেন। এত ভালো মিডল অর্ডার ব্যাটিং আর পেয়েছে মাত্র এক দলই। বেঙ্গালুরুকে শিরোপার শিখরে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ হবে মিডল অর্ডার। ভারত-কামব্যাকের স্বপ্ন শেষে কার্তিকের আইপিএল স্বপ্ন পূরণে গেল আসরের কাছাকাছি মানের ব্যাটিং হলেই চলবে! ভালো দিক, আইপিএলের আগে আগেই ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন ম্যাক্সওয়েল। তাদের ভালোই সঙ্গ দিতে সক্ষম শাহবাজ।
গেল মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে সম্ভাবনার সুবাতাস নিয়েই হাজির হয়েছিলেন রজত পাতিদার। মাত্র ৭ ম্যাচ খেলেই ১৫৩ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৩৩৩ রান। কিন্ত এবার ইনজুরিতে অন্তত টুর্নামেন্টের প্রথমার্ধে ছিটকে পড়া পাতিদার আসলে বাড়িয়েই দিয়েছেন বেঙ্গালুরুর চিন্তা। কোহলি ওপেনিংয়ে, নিলামের সময়ে নিশ্চিত করেছিলেন বেঙ্গালুরুর ক্রিকেট ডিরেক্টর মাইক হেসন। সেক্ষেত্রে তিন নাম্বারে সুযোগ পেতে পারেন কারা? বাঁহাতি রাওয়াত আছেন, শাহবাজকেও বাজিয়ে দেখলে মন্দ হয় না। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে অভ্যস্ত ডেভিড উইলিও তো বাজির ঘোড়া হতে পারেন!
বেঙ্গালুরুর লম্বা ব্যাটিং লাইনআপে হাসারাঙ্গা ও হার্শালের জায়গা হতে পারে আটে ও নয়ে। তবে আইপিএলের মঞ্চে ব্যাট হাতে বিবর্ণ হাসারাঙ্গা, স্ট্রাইক রেট ১০০ এর কম, গড় ৫.৪৩। হাসারাঙ্গার সাথে হার্শালের ব্যাটে অন্তত কিছু রান পেতে চাইবে বেঙ্গালুরু। তবু সবমিলিয়ে ব্যাটিং বিবেচনায় ভালো কিছুর প্রত্যাশাই করবে বেঙ্গালুরু সমর্থকেরা। তা কোহলি ফিরেছেন ফর্মে, বেঙ্গালুরুর জন্য এর চেয়ে বড় প্রত্যাশার উপকরণ আর কী হতে পারে!
বোলিং : চোটের হোচট এড়াতে প্রস্তত, তবে সামনে বড়সড় চ্যালেঞ্জ
ইনজুরির কবলে পড়ে জস হ্যাজলউডের এবারের আইপিএল শঙ্কার মুখে। তাকে হারানোর ধাক্কা সামলাতে যদিও একেবারে অপ্রস্তত নয় বেঙ্গালুরুর বোলিং লাইনআপ। বাঁহাতি দীর্ঘদেহী পেসার রিস টপলির কাঁধে সেক্ষেত্রে থাকবে বড় দায়িত্ব। পেস বিভাগে বিদেশি বিকল্প আর আছেন ডেভিড উইলি। এই দুই ইংলিশ পেসারের একজনেরই হয়তো জায়গা হবে। যে ফর্মে আছেন, বোলিং বিবেচনায় প্রথম পছন্দ নিশ্চয়ই টপলিই হবেন।
পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ে উন্নতি আনা হবে টপলির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গেল আসরে পাওয়ারপ্লেতে সবচেয়ে বেশি ইকোনমি(৮.৪৫) ছিল বেঙ্গালুরুরই। নতুন বলের কারিগর সিরাজের উপর বেঙ্গালুরু রেখে আসছে ভরপুর ভরসা। কিন্ত গত আসরে সিরাজ প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও অবদান রাখতে পারেননি। ডেথেও বেঙ্গালুরু যে খরচায় বোলিং করেছে, ১০.৯৩ এর চেয়ে ভালো ইকোনমি ছিল ছয়টি দলের। হোম-অ্যাওয়ে তে ফেরা আইপিএলে চিন্নাস্বামীর ছোট বাউন্ডারি হার্শালের বড় পরীক্ষা নিতেই তৈরি হয়ে আছে। হাসারাঙ্গার জন্যও তা হবে বড়সড় চ্যালেঞ্জ। গেল আসরে ২৬ উইকেট নেওয়া হাসারাঙ্গার সঙ্গে শাহবাজ ও ম্যাক্সওয়েল মিলে স্পিন বিভাগ যথেষ্টই শক্তিশালী। অপশন হিসেবে আছে কার্ন শর্মার লেগ স্পিন, ব্রেসওয়েলের অফ স্পিন।
বেঙ্গালুরুর বোলিংয়ে যে চমকের অপেক্ষা করছে, তিনি আভিনাশ সিং। পেসের ঝড় তুলতে পারেন বলে যে সুনাম, এবার সেটি আইপিএলের মঞ্চে দেখানোর মোক্ষম সুযোগ। দেশি পেসারদের মধ্যে আস্থা রাখার মতো আছেন আকাশ দীপ ও সিদ্ধার্থ কল।
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
শাহবাজ আহমেদ গেল আসরে যা সুযোগ পেয়েছেন, তাতে পরিসংখ্যান ততটা উজ্বল না দেখালেও মাঝেমধ্যেই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছেন। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার ১২১ স্ট্রাইক রেটে পেয়েছেন দুইশের বেশি রান। ভারত জাতীয় দলে অভিষিক্ত হয়ে যাওয়া শাহবাজের উপরে রাখা চোখের সংখ্যা বেড়েছে নিশ্চিতভাবেই।
গেলবারের অবস্থান
গত তিন আসরেই প্লেঅফে যাওয়া বেঙ্গালুরর ২০২২ আইপিএলে বিদায় ঘটেছিল কোয়ালিফায়ারেই।