• আইপিএল ২০২৪
  • " />

     

    কোহলির স্পিনে স্ট্রাইক রেট সমস্যায় সমাধান সুইপ?

    কোহলির স্পিনে স্ট্রাইক রেট সমস্যায় সমাধান সুইপ?    

    আইপিএলে রবিবার গুজরাটের বিপক্ষে ৪৪ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেছেন বিরাট কোহলি। রান বিবেচনায় এমন ইনিংসের অভাব নেই তার ক্যারিয়ারে। আইপিএলেই তো পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস আছে আরও ৬১টি। কিন্তু এই ইনিংস ব্যতিক্রম- তার সুইপ খেলা এবং সুইপের সমাহারে স্পিনের বিপক্ষে সরদারির কারণেই। 

    প্রতিপক্ষের আক্রমণে স্পিন এলেই কোহলির রানের গতি কমে যাচ্ছে, এমনটা হয়তো নজরে পড়েছে আপনার। স্পিনের বিপক্ষে কোহলির স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনাও হয়নি কম। যেটিকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০১৬ সালের আইপিএল থেকে গুজরাটের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত সময়ে ফিরে তাকালেই পরিস্কার হয় তা। এইসময়ে কোহলির পেসের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক রেট যেখানে ১৪৪, স্পিনের বিপক্ষে তা ১২২। তাই বলে স্পিনে যে দুর্বল ভারতের এই কিংবদন্তি, তা কিন্তু বলা যায় না। স্পিনে প্রতি উইকেট খুইয়ে ফেলার বিনিময়ে রান যে তিনি ঠিকই তুলেছেন ৫১। পেসের বেলায় যে গড় ৩৭। 

    স্পিনের বিপক্ষে আসলে সাবলীলভাবেই খেলে যান কোহলি। নিয়মিতই স্ট্রাইক বদল করতে সক্ষম তিনি। এই সময়ে স্পিনারদের বিপক্ষে তো গড়ে ১০০ বলে ৫২টি সিঙ্গেল বের করেছেন। স্পিন যা মোকাবেলা করেছেন, তার মধ্যে ২৮ শতাংশের বেশি ডট না দেওয়া বলে দিচ্ছে- রান বের করা কঠিন হচ্ছে না তার জন্য। পেসের বিরুদ্ধে ভালো স্ট্রাইক থাকলেও সেখানে মুখোমুখি হওয়া বলের ৩২ শতাংশই ছিল ডট। স্পিনে তাহলে বিপত্তি বাধে কোথায়? উচ্চ স্ট্রাইক রেটের জন্য মূল যে ব্যাপার, স্পিনে সেই বাউন্ডারি হাঁকানোতেই পিছিয়ে যান কোহলি। চলতি মৌসুমসহ গত নয় মৌসুমে যা বল খেলেছেন স্পিনারদের, তার মধ্যে ১১.৫০ ভাগ বলে তিনি ছক্কা কিংবা চার মারতে পেরেছেন। আর পেসে ১৯.৬৯ শতাংশ বলেই বাউন্ডারি বের করতে সমর্থ হয়েছেন তিনি।

    কোহলির স্পিনে আটকা পড়ে যাওয়া নিয়ে এবারের আইপিএলেও সমালোচনা হচ্ছে যথেষ্টই। পাওয়ারপ্লের পর তার রানের গতি কমে যাওয়া, কিংবা পাওয়ারপ্লেতে স্পিনের বিপক্ষে আক্রমণে না যাওয়া নিয়েই মূলত। আহমেদাবাদে ৭০ রানের ইনিংসের আগে পাওয়ারপ্লেতে স্পিনারদের ৩৭ বল খেলেছেন কোহলি, তার মধ্যে ছক্কা মারতে পারেননি একটিও। সবমিলিয়ে আনতে পারেননি ৩৮ রানের বেশি। আবার পাওয়ারপ্লের পর স্পিনে তার স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১১৪। 

    এমন অবস্থায় রবিবার অপেক্ষা করছিলেন রশিদ খান, নূর আহমেদ ও সাই কিশোর। ম্যাচের আগে আলোচনায় ছিল এই স্পিনত্রয়ীর নেওয়া পরীক্ষায় কেমন করবেন কোহলি। শেষমেশ কোহলি যে ৭০ রান করলেন, তার মধ্যে ৬১ রানই আনলেন স্পিনেই। বল খরচ করলেন না ৩৪টির বেশি। স্পিনের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এত বেশি রান তিনি আনেননি আর কখনোই। গুজরাটের স্পিনত্রয়ীর বলে তার স্ট্রাইক রেট ছিল সেদিন- ১৭৯.৪১। 

    এই সাফল্যের পেছনে বড় একটি কারণ সুইপ। কোহলিকে তার জীবনে সুইপ করতে দেখেছেন কতবার? একেবারে ‘না’ বলতে পারবেন না জানি। তবে কোহলি যেসব শট খেলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে কম যদি বলেন, তাহলে এই সুইপের কথাই বলতে হয়। 

    কিন্তু সুইপ তো স্পিনের বিপক্ষে অনেক কার্যকরী এক অস্ত্র। ভালো বলেও সুইপে বাউন্ডারি আদায় করে নেওয়া সম্ভব বলেই। বাউন্ডারি হিটিংয়ের জন্য অন্যতম এই সুইপ ছাড়াই কোহলি অজস্র সাফল্যের গল্প লিখেছেন। কিন্তু সেটির গুরুত্ব তারও নিশ্চয়ই অজানা নয়। রবিবার যেমন খেললেন ৬টি সুইপ। এত লম্বা ক্যারিয়ার, সেখানে এত বেশি সুইপ তিনি আর খেলেননি কখনোই। ৬ সুইপে মেরেছেন ২টি করে চার ও ছক্কা, রান মোট এনেছেন ২২। 

    যেদিন সর্বোচ্চ সুইপ খেললেন, সেদিন স্পিনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রানও পেলেন। এটা এমনিতেই ‘ঘটে গেছে’ বলে দেওয়া যায় না। স্পিনের বিরুদ্ধে বাউন্ডারির জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়ের একটি হচ্ছে সুইপ, সেটির সঙ্গে মিশে থাকবে তাই স্পিনে সাফল্য। স্পিনে সুইপই কি তাহলে কোহলির স্ট্রাইক রেট সমস্যার সমাধান? একমাত্র সমাধান না হলেও নিঃসন্দেহেই তা হবে বড় হাতিয়ার।

    কিন্তু যে শটটা দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে ব্যবহার করেননি খুব বেশি, ক্যারিয়ারের শেষবেলায় এসে সেটিতে সিদ্ধহস্ত হওয়ার ইচ্ছাশক্তি কি থাকবে কোহলির মাঝে? অবশ্য ম্যাচশেষে যেভাবে আগুন ছড়ালেন কথা দিয়ে, তাতে সন্দেহ থাকে না একটুও। 

    মুরালি কার্তিকের এক প্রশ্ন ছিল এমন- সাত মৌসুমে পাঁচশের বেশি রান, ৪০০ রানের উপরে দশ মৌসুমে, আপনি কি কখনো এসব পরিসংখ্যান দেখেন? কোহলি বলেন, ‘সত্যি বলতে না। যেসব লোক স্ট্রাইক রেট ও আমি স্পিন ভালো খেলতে পারি না বলে, তারা এসব নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। কিন্তু আমার কাছে দলের জন্য ম্যাচ জেতানোই আসল। এবং পনেরো বছর ধরে আপনার সেটা করে আসার পেছনে কারণ আছে- কারণ আপনি তা দিনের পর দিন করে আসছেন, আপনার দলকে জিতিয়েছেন।’

    ‘আমি নিশ্চিত না আপনি ওই পরিস্থিতিতে ছিলেন যে বক্সে বসবেন আর খেলা নিয়ে কথা বলবেন। আমি আসলে মনে করি না এটা একই জিনিষ (মাঠে গিয়ে খেলার মতো)। তো আমার জন্য, আমার কাজটাই করে যাওয়া আসল। লোকেরা তার নিজের অনুমান নিয়ে কথা বলতে পারে, কিন্তু যারা দিনের পর দিন তা করে এসেছে, তারা জানে কী ঘটছে।’

    স্পিন ভালো খেলেন না, এমন সমালোচনা সম্পর্কে তিনিও অবগত তাহলে। কথায় স্পষ্ট, প্রমাণের তাগিদ এখনও ঝরঝরে। এই সমালোচনাও উড়িয়ে দেওয়ার তাগিদ নিশ্চয়ই তার মনের কোণে লুকিয়ে আছে। সুইপ, স্পিনে সাফল্য মিলিয়ে রবিবারের ৭০ রানের ইনিংসটাই হয়ে গিয়েছিল ব্যতিক্রমী। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সুইপ খেলা, স্পিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি রান- এই হিসেবে এটি ব্যতিক্রমীই হয়ে থাকুক, সেটা নিশ্চয়ই চাইবেন না কোহলি।