• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    মায়ের ক্যান্সার, রেস্টুরেন্টের শেফ থেকে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ক্রিকেটের নায়ক মোনাংক প্যাটেল

    মায়ের ক্যান্সার, রেস্টুরেন্টের শেফ থেকে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র-ক্রিকেটের নায়ক মোনাংক প্যাটেল    

    ভারতের ক্রিকেটার মুনাফ প্যাটেল, পার্থিব প্যাটেল, আক্সার প্যাটেলের নাম আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন। সেই প্যাটেল নামের একজনই এবার পাকিস্তানকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে ভারতে নাড়ি পোতা হলেও মোনাঙ্ক প্যাটেল যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক, পাকিস্তানকে হারানোর ঐতিহাসিক ম্যাচের নায়কও বটে।


    ১৯৯৩ সালের পহেলা মে গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন মোনাঙ্ক দিলিপভাই প্যাটেল। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী ছিলেন তিনি, কিন্তু জন্মভূমি ভারতের হয়ে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খুব বেশি সুবিধা করতে না পেরে ২০১৪ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। 

    এর দুই বছর পরে শুরু করেন রেস্তোরাঁর ব্যবসা। “টেরিয়াকি ম্যাডনেস” নামক চাইনিজ রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি। পাশাপাশি চলতে থাকে ক্রিকেটও।রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা সময় দিতে হতো তাঁকে।ব্যবসার উন্নতির জন্য শেফের পাশাপাশি ম্যানেজারের দায়িত্বও নিজেই পালন করতে থাকেন তিনি। এভাবে কেটে যায় দুই বছর।


    এরপরই জীবনে একটা ধাক্কা খেতে হয় মোনাঙ্ককে। ধরা পড়ে তাঁর মায়ের ক্যান্সার। মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগানোর জন্য রেস্তোরাঁটা বিক্রি করে দিতে হয় তাঁকে। অসুস্থ মা আর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র তিন হাজার ডলার নিয়ে তিনি পাড়ি জমান নিউ জার্সিতে। এরই মাঝে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে অভিষেক হয় মোনাঙ্কের। আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে লিস্ট-এ মর্যাদার ওই টুর্নামেন্টে নিজ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে উগান্ডার বিপক্ষে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিও পেয়ে যান মোনাঙ্ক। এদিকে মোনাঙ্কের মা তখন মৃত্যুশয্যায়। ছেলেকে কঠোর পরিশ্রম করে ক্রিকেটে লেগে থাকার উপদেশ দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।মায়ের শেষ কথাগুলো ভীষণভাবে স্পর্শ করলো মোনাঙ্ককে। নেপাল সফরটাও তাঁর জন্য ছিল খুবই হতাশার। 

    সন্দ্বীপ লামিচানের বলগুলো সামলাতেই পারছিলেন না তিনি, দলে জায়গা প্রাপ্তি নিয়েও তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না মোনাঙ্ক, মায়ের বলা শেষ বাক্যটা তাড়া করে ফিরছিলো তাঁকে। বিছানা ছেড়ে উঠে নোটপ্যাড হাতে নিলেন তিনি। চার পৃষ্ঠা জুড়ে লিখলেন একটা কথাই, “আমি কঠোর পরিশ্রম করবো।”নতুন কোচ অরুণ কুমারের সাথে কথা বললেন মোনাঙ্ক, জানালেন, যেকোন মূল্যে পরের টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যে পরিশ্রম শুরু করলেন তিনি। আর ভাগ্য বোধ হয় একেই বলে!  কোভিড মহামারীর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ ছিল ওয়ার্ল্ড কাপ লিগ টুতে, আর প্রতিপক্ষ দলটার নাম ছিল নেপাল। লামিচানে-জুজু এবার আর তাড়া করতে পারলো না মোনাঙ্ককে।

     নিজে সেঞ্চুরি করে, দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন মোনাঙ্ক।এরপরের গল্পটা ইচ্ছা, সাধনা আর পরিশ্রমের পরে স্বপ্নকে বাস্তবতায় পরিণত করার। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মোনাঙ্ক প্যাটেলকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলেছেন ৪৭টা ওয়ানডে আর ২৭টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। আর এখন তো বিশ্বকাপে অধিনায়কত্বই করছেন, দেশকে দেখাচ্ছেন নতুন আশা।বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়, বিশ্বকাপে কানাডা আর পাকিস্তানকে পরাজিত করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্নের পরিধি এখন অনেক বড়। দৃষ্টিসীমায় চলে এসেছে সুপার এইটে খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনাও। আর সেই স্বপ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলই।

    তবে মোনাঙ্ককে নিশ্চিতভাবেই ছুঁয়ে যাচ্ছে আরো কিছু আবেগ। জন্মভূমি ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবেন এই বুধবারে, টস করবেন প্রিয় ক্রিকেটার রোহিত শর্মার সাথে । দশ বছর আগে যখন ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন, ঘুণাক্ষরেও কি ভাবতে পেরেছিলেন এসব? 


    স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপান্তরিত হতে দেখতে কেমন লাগে, মোনাঙ্ক প্যাটেল?