• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    হিমালয়কন্যা নেপালে যেভাবে ক্রিকেটের উত্থান

    হিমালয়কন্যা নেপালে যেভাবে ক্রিকেটের উত্থান    

    বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান- এশিয়ার এই পাঁচ ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের সাথে যোগ হতে পারে আরেকটি দেশ। ক্রিকেট সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকলেও ক্রিকেট-উন্মাদনায় নেপাল এখন পরিচিত হয়ে উঠছে। এশিয়া কাপের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ধীরে ধীরে বড় টুর্নামেন্টে নিয়মিত হতে শুরু করেছে হিমালয়কন্যা নেপাল।

    উনিশ শতক থেকে নেপালের জনগণের কাছে ক্রিকেটের গ্রহণযোগ্যতার তৈরির চেষ্টা করা হলেও সেই চেষ্টা তেমন সফল হয়নি। ১৮৭৭ সালে ড্যানিয়েল রাইট তাঁর “হিস্ট্রি অব নেপাল” বইয়ে লেখেন, “বিভিন্ন সময়ে নেপালের তরুণদেরকে ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলায় আগ্রহী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে এগুলোকে মানুষ তেমন পছন্দ করেনি।”

    তবে পরবর্তীতে, নেপালের মানুষ ধীরে ধীরে ক্রিকেটকে আপন করে নিতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “দ্যা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল”। ১৯৮৮ সালে আইসিসিতে যুক্ত হয় নেপাল।তবে একবিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত ক্রিকেটে খুব বেশি উন্নতি হয়নি তাদের। ২০০২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মতো দুই টেস্ট খেলুড়ে দেশকে পরাজিত করে আলোচনায় আসে নেপাল। এরপর ২০০৪ এবং ২০০৬ সালে তারা হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ডও পরাজিত হয় নেপালের কাছে।

    বয়সভিত্তিক পর্যায়ের সাফল্যটা জাতীয় দলে অনুবাদ করতে আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হয় নেপালকে।২০১০ সালে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ ডিভিশন ফাইভের চ্যাম্পিয়ন হয়ে ডিভিশন ফোরে উন্নীত হয় তারা। দুই বছর পরে ডিভিশন ফোরের চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। ২০১৩ সালে সুযোগ পায় পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে খেলার।

     

    ২০১৪ সালে প্রোমোশন পেয়ে ডিভিশন টুতে উন্নীত হয় নেপাল। ওই একই বছরে টি-টোয়েটি স্ট্যাটাস পায় দলটি, সাথে পায় বিশ্বকাপে খেলার সুযোগও। বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত ওই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে আফগানিস্তান ও হংকংকে পরাজিত করে নেপাল। তবে বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়ে নেট রানরেটের হিসাবে বাদ পড়ে দলটি।

    ২০১৫ সালে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ চ্যাম্পিয়নশিপে কোয়ালিফাই করে নেপাল। তবে ওই টুর্নামেন্টে ভালো করতে না পারায় আবারও অবনমন ঘটে দলটির। এরপর ২০১৮ সালে, বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অষ্টম স্থান অর্জনের পর ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়ে যায় নেপাল। ওই বছরের পহেলা আগস্ট নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের আমস্টেলভিনে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয় দলটি। ২০২০ সালে স্বাগতিক হিসেবে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজন করে নেপাল। কীর্তিপুরের ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হয় তারা।

    ২০১৯-এর পর ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বও খেলেছিল দলটি। তবে মূল পর্বে অংশ করে নিতে ব্যর্থ হয় প্রতিবারই। ২০২৩ সালে স্বাগতিক হিসেবে এসিসি প্রিমিয়ার কাপ আয়োজন করে নেপাল। আইসিসির দশটা সহযোগী দেশ এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওই বছরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ পায় দলটি। ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুই পরাশক্তি দলের সাথে একই গ্রুপে ছিল নেপাল।

    এই মুহূর্তে, ওয়ানডে ফরম্যাটে ২০২৩-২০২৭ আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ লিগ টুতে খেলছে দলটি। এখান থেকে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলে প্রথমবারের মতো মূল পর্বে সুযোগ করে নেওয়ার চেষ্টা করবে নেপাল। অপরদিকে টি-টোয়েন্টিতেও বেশ উন্নতি করেছে। দশ বছর পর আবারও সুযোগ করে নিয়েছে বিশ্বকাপের মূলপর্বে।

    এই মুহূর্তে নেপালে ওয়ানডে স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত দুটো ভেন্যু রয়েছে। কীর্তিপুরের ত্রিভুবন ইউনাভার্সিটি ক্রিকেট গ্রাউন্ড এবং কাঠমাণ্ডুর মুলপানি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এছাড়া পোখারায় অবস্থিত পোখারা রঙ্গশালা স্টেডিয়ামটি নির্মানাধীন রয়েছে। 

    ক্রিকেট-পরাশক্তি হিসেবে এখনো নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলেও নেপালের ক্রিকেটে পাচ্ছে নিজের দেশের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন। বিভিন্ন সময়ে নেপালের দর্শকদের সমর্থনের ছবিগুলো আন্তর্জাতিক মহলে প্রচুর প্রশংসা পেয়েছে। শুধু সাধারণ দর্শকরাই নন, চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের সমর্থন প্রকাশ করতে জাতীয় দলের জার্সি পরে সংসদে উপস্থিত হয়েছিলেন নেপালের সংসদ সদস্যরাও।

    দর্শকদের সমর্থন, সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের আগমন, সব মিলিয়ে রোহিত পৌড়েলের দলটা এখন এগিয়ে যাচ্ছে নতুন স্বপ্নের পথে। আর তাতে নতুন মাত্রা পাচ্ছে ক্রিকেটের বিশ্বায়নও।