• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    কেন দশ বছর ক্রিকেট হয়নি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভেন্যু কিংসটাউনে?

    কেন দশ বছর ক্রিকেট হয়নি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভেন্যু কিংসটাউনে?    

    চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অন্তত দুটো ম্যাচ খেলবে কিংসটাউনের আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ডে। সূচি অনুসারে প্রথম রাউন্ডে নেদারল্যান্ডসের পরে এই মাঠে নেপালেরও মুখোমুখি হবে টাইগাররা। এছাড়া সুপার এইটে উত্তীর্ণ হতে পারলে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচটাও এই মাঠেই খেলবে বাংলাদেশ।

    দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনসের রাজধানী কিংসটাউনে অবস্থিত এই আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। মূলত উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডস ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে রয়েছে এই মাঠটি। এই মাঠের ধারণক্ষমতা ১৮ হাজার।

    ১৯৮১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই মাঠের। পরবর্তীতে এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩টা টেস্ট, ২৩টা ওয়ানডে এবং ২টা টি-টোয়েন্টি। ২০০৭-এর ওয়ানডে বিশ্বকাপের চারটি প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যু হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিল মাঠটি।

    তবে চলতি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে এই মাঠে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই ম্যাচের সাথেও জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ওই টেস্টে অবশ্য ১০ উইকেটে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে ওই টেস্টেই অভিষেক হয়েছিল তাইজুল ইসলামের। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিও ছিল ওই ম্যাচে। 

    আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের রয়েছে অম্লমধুর স্মৃতি; Image Source: AFP

    এর আগে ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টেস্টও এই মাঠেই খেলেছিল বাংলাদেশ। চোটে পড়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ হয়ে যাওয়ার ওই ম্যাচ ছিল সাকিব আল হাসানের প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব পাওয়ার মঞ্চও। এছাড়া ওই ম্যাচটা স্মরণীয় হয়ে আছে তামিম-মাহমুদউল্লাহর জন্যও। ওই ম্যাচেই প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্যাপ পরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেটও। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে পরাজিত করার ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। তামিমের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচসেরা হওয়ার ঘটনাও সেটা।

    এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০২৪, এই দীর্ঘ সময়ে কোন টি-টোয়েন্টি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়নি এই মাঠে। এমনকি ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা সিপিএলের ম্যাচও না।

    আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ড, কিংসটাউন, সেন্ট ভিনসেন্ট; Image Source: AFP

    তাহলে মাঝের এই দীর্ঘ সময়ে কী হয়েছিল এই মাঠে? কেন অনুষ্ঠিত হয়নি কোন ক্রিকেট ম্যাচ?

    এখানে বলে রাখা ভালো, ক্রিকেটের পাশাপাশি আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ড ব্যবহৃত হয় ফুটবলের জন্যও। ১৯৮৯ সাল থেকে নিয়মিত ফুটবল ম্যাচ হচ্ছে এই মাঠে। সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস দলের (বর্তমান ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৭৩) হোম ভেন্যুও এই মাঠটাই।

    সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচ থেকে শুরু করে কনকাকাফ গোল্ড কাপের বাছাইপর্ব, কনকাকাফ নেশনস লিগের ম্যাচ এবং বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এখানে।

    ফুটবলের পাশাপাশি রাগবি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাঠে। ২০১৬ সালে রাগবি আমেরিকাস নর্থ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে এই মাঠেই জ্যামাইকার মুখোমুখি হয়েছিল সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্যা গ্রেনাডাইনস। ওই ম্যাচে ৪৮-০ ব্যবধানে জয়ী হয় জ্যামাইকা।

    অন্যান্য খেলার আধিক্যের কারণে আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ডে ব্রাত্য হয়ে পড়ে ক্রিকেট। ২০২১ সালের জুলাইয়ে এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কিন্তু সেজন্য প্রয়োজন ছিল মাঠের সংস্কারের। ফ্লাডলাইট, প্লে-ব্যাক স্ক্রিন এবং ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডও বসানোর আবেদন করা হয়। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে সেই আবেদনও স্তিমিত হয়ে আসে। পরবর্তীতে ওই সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় সেন্ট লুসিয়ায়।

    দশ বছর পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ডে; Image Source: AFP

    মাঠের সংস্কারের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের পেশাদার এবং আধুনিক বাসস্থানের ব্যবস্থা করতেও ব্যর্থ হয় স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। সফরকারী খেলোয়াড়, ম্যানেজমেন্ট এবং দর্শকদের জন্য হোটেল, আবাসস্থল এবং বিলাসিতার পর্যাপ্ত সুযোগও ছিল না।

    তবে এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ডকে। মূল আর্ন্স ভেইল ১ গ্রাউন্ডে প্রস্তুত করা হয়েছে ছয়টা পিচ। এর বাইরে আর্ন্স ভেইল ২ এবং সিয়ন হিল গ্রাউন্ড মূলত ব্যবহৃত হবে অনুশীলনের জন্য।

    ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান চিফ কিউরেটর কেন ক্র্যাফটনও এই পিচ নিয়ে সন্তুষ্ট। আশা করছেন, আশানুরূপ পেস এবং বাউন্স পাওয়া যাবে পিচ থেকে। অনুশীলন পিচগুলোর কাছ থেকেও মূল পিচের কাছাকাছি আচরণ প্রত্যাশা করছেন তিনি।

    চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পাঁচটা ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে। বিশ্বকাপের পরে চলতি বছরের শেষ দিকে এই মাঠে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। তবে ক্র্যাফটন যেমনটা আশা করছেন, বিশ্বকাপের পর পুনরায় মূল্যায়ন করা হবে পিচ ও মাঠের অবস্থা। তাতে হয়তো আবারও খুলে যাবে আর্ন্স ভেইল গ্রাউন্ডে নিয়মিত ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হওয়ার দরজা।