• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতের দাপুটে জয়

    আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারতের দাপুটে জয়    

    সুপার এইট, নর্থ সাউন্ড (টস - বাংলাদেশ/ফিল্ডিং)
    ভারত - ১৯৬/৫, ২০ ওভার (হার্দিক ৫০*, কোহলি ৩৭, পান্ট ৩৬, তানজিম সাকিব ২/৩২, রিশাদ ২/৪৩, সাকিব ১/২৭)
    বাংলাদেশ - ১৪৬/৮, ২০ ওভার (শান্ত ৪০, তামিম ২৯, রিশাদ ২৪, কুলদীপ ৩/১৯, বুমরাহ ২/১৩, আরশদীপ ২/৩০)
    ফলাফল - ভারত ৫০ রানে জয়ী


    হেসেখেলেই বাংলাদেশকে হারাল ভারত। এবারের আসরে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ তো পেয়েছিল বটেই, সেই সাথে এই মাঠেও টি-টোয়েন্টি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ দিয়ে প্রথম ইনিংস শেষেই যেন ম্যাচের ভাগ্য গড়ে ফেলেছিল ভারত। হলোও সেটাই; ভারতের বোলারদের কাছে বলতে গেলে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। সেই সাথে এই বিশ্বকাপ ও ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টিতে অপরাজিত রইল ভারত।

    ১৯৭ রানের লক্ষ্যে ম্যাচের কোনো পর্যায়েই মনে হয়নি বাংলাদেশ জিততে পারে। আসরে প্রথমবারের মতো ওপেনিং জুটি দুই অংক ছুঁয়েছিল বটে। তবে হার্দিককে পুল করে ছয় মারার পরের বলেই স্লোয়ার পড়তে না পেরে একই শট খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়্যার লেগে ক্যাচ দিয়ে ১০ বলে ১৩ রানে থামেন লিটন। পাওয়ারপ্লেতে ওই এক উইকেট হারিয়ে তবু ৪২ রান তুলেছিল বাংলাদেশ।

    অবশ্য উইকেটে থাকা তানজিদ হাসান তামিম একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। ২৫ রানে থাকতে বুমরাহর একটা কোমর থেকে উঁচু ফুল টসেও নো বল না পাওয়ার পরের বলেই লাফিয়ে ওঠা বলে হতভম্ব হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। তবে বিস্ময়করভাবে ঋষাভ পান্ট সেটা ফেলে দিলে বেঁচে যান তামিম। অন্য প্রান্তে হার্দিককে দুই ছয় মেরে শান্ত কিছুটা চেষ্টা করলেও তামিম ছিলেন দিশেহারা। কুলদীপের ভেতরে ঢোকা বলে তাই কিছুক্ষণ পরেই এলবিডব্লিউ হয়ে তিনি থামেন ৩১ বলে ২৯ রান করে। কুলদীপকে শুরুতেই আক্রমণ করতে গিয়ে স্লগ সুইপ মিস করে এরপর ওই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে হৃদয়ও। উইকেটে এসে সাকিবও মেরে খেলার চেষ্টা করেছিলেন। কুলদীপকে মাথার ওপর দিয়ে ছয় মেরে পরের বলেও একই কাজ করতে গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলটা আকাশে ভাসিয়ে ৭ বলে ১১ রানে থামেন সাকিব।

    অন্য প্রান্তে আসাযাওয়ার মিছিলে এরপর শান্তও আর টিকতে পারেনি। বুমরাহর স্লোয়ার তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে থার্ড ম্যানে আরশদীপকে খুঁজে নিলে শেষ হয় বাংলাদেশ অধিনায়কের ৩২ বলে ৪০ রানের ইনিংস। মাঝে জাকের আলী ১ রানে ফেরার পর জাদেজা, অক্ষরদের এক হাত নিয়েছিলেন রিশাদ। ১০ বলে ২৪ রানের দারুণ ক্যামিওটাও এরপর থামান সেই বুমরাহ। ১৩ রান দেওয়া স্পেলে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে আরও একবার বুমরাহ যেন এক বিভীষিকার নাম! মাহমুদউল্লাহও শেষদিকে ১৫ বলে ১৩ রান করায় বাংলাদেশ ব্যবধানটা কমাতে পারেনি। সহজ জয়ে তাই সেমিতে এক পা দিয়ে রেখেছে ভারত।

    ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে টসে জিতে বাংলাদেশের বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা শুরু থেকেই নিজেদের সুবিধার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে ভারত। সাকিবকে দ্বিতীয় ওভার করতে আনা হলে ছয়-চারে তাকে স্বাগত জানিয়ে বার্তাটা পরিস্কার করে দেন রোহিত-কোহলি জুটি। দুজনে মিলে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। তবে ভারত অধিনায়ক যে থামছেন না সেটা আঁচ করেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাকে থামান সাকিব। লেংথ কিছুটা পিছে টেনে আনায় বেরিয়ে আসা রোহিত ব্যাটে-বলে করতে না পারায় আকাশে বল ভাসালে জাকের আলীর ক্যাচে থামেন ১১ বলে ২৩ রান করা রোহিত। সেই সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। অবশ্য পাওয়ারপ্লেতেই ৫৩ রান তুলে শুরুটা নিজেদের করে রাখে ভারত।


    সেটা কাজে লাগিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিতে থাকেন কোহলি। তবে নিজের প্রথম ওভারটা মনমত না হলেও নবম ওভারে এসে শেষ হাসি হাসেন তানজিম সাকিব। আত্মবিশ্বাস থেকেই তানজিম সাকিবকে বেরিয়ে খেলতে গেলে হালকা ভেতরে ঢোকা বল মিস করে ২৮ বলে ৩৭ রানে থামেন কোহলি। উইকেটে এসে বাউন্সারে হুক করে সূর্যকুমার এরপর নিজের মনোভাব পরিস্কার করলেও এরপর আরেক বাউন্সারে তাকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান তানজিম সাকিব। সাকিবের দারুণ ওভারের পর মাহমুদউল্লাহও এক ওভারে লাগাম টেনে ধরলেও ক্ষণিকের সেই চাপটা লাঘব করে ফেলেন পান্ট। সাকিব, রিশাদের ওপর চড়াও হয়ে নিজের ছন্দে ছুটতে থাকেন পান্ট। তবে সেই রিশাদের কাছেই পরে ধরে দিতে হয় তাকে। ছয়-চার মারার পর রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় পান্টের ২৪ বলে ৩৬ রানের ইনিংস।


    উইকেট যেতে থাকলেও ভারতীয় ব্যাটাররা তাদের জায়গায় অবিচল ছিলেন। উইকেটে আসা হার্দিক-দুবে জুটিটাও সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি বের করতে ভুল করেননি। লেগ স্পিনারদের ওপর চড়াও হওয়ার জন্য দলে দুবের জায়গা হলেও আসরে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তবে এদিন শুধু রিশাদ নন, মোস্তাফিজ-সাকিবদেরও এক হাত নিয়েছেন দুবে। তবে বাউন্ডারি হজম করেও অবিচল থাকা রিশাদ আরও একবার উইকেট শিকার করতে সমর্থ হন। ছয় হজম করার পরের বলেই ভাসানো লেগ স্পিনে ২৪ বলে ৩৪ রানে থাকা দুবের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন রিশাদ। তবে কোনোবারই চাপ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেট শিকার করলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি, বরং ভারত তাদের আক্রমণের ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বারবার। শেষ ওভার করতে এসে মোস্তাফিজের অনিয়ন্ত্রিত লাইনের পাশাপাশি নো বলের পূর্ণ সুযোগ নিয়ে তাই ফিফটিটাও শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে সেরে ফেলেন হার্দিক। তার ২৭ বলে ৫০* রানে এই মাঠে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটাও নিজেদের করে নেয় ভারত। সেই সংগ্রহ নিয়ে সহজ জয়ে সেমির জন্য এখন কেবল অস্ট্রেলিয়ার জয়ের অপেক্ষায় ভারত।