হিটম্যানের পাওয়ারহিটিং, কুলদীপের ঘূর্ণিতে সেমিতে ভারত
সুপার এইট, গ্রস আইলেট (টস - অস্ট্রেলিয়া/ফিল্ডিং)
ভারত - ২০৫/৫, ২০ ওভার (রোহিত ৯২, সূর্যকুমার ৩১, দুবে ২৮, স্টার্ক ২/৪৫, স্টয়নিস ২/৫৬, হেজলউড ১/১৪)
অস্ট্রেলিয়া - ১৮১/৭, ২০ ওভার (হেড ৭৬, মার্শ ৩৭, ম্যাক্সওয়েল ২০, আরশদীপ ৩/৩৭, কুলদীপ ২/২৪, অক্ষর ১/২১)
ফলাফল - ভারত ২৪ রানে জয়ী
রোহিত শর্মা আগের দিন বলেছিলেন, তিনি নির্দিষ্ট এক ধরনের ক্রিকেট খেলতে চান; ভারত অধিনায়ক আজ তার দলকে নিজেই দেখালেন কী চান। অস্ট্রেলিয়া বোলারদের রীতিমত পাড়ার বোলারদের মতো তুলোধোনা করে খেলেছেন অসামান্য এক ইনিংস। ৪১ বলে ৯২ রানে ফিরে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেও ভারত অধিনায়কের তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা থাকবেন না কারণ তিনি মনে করেন না টি-টোয়েন্টিতে একজনের ব্যক্তিগত মাইলফলক খুব একটা কাজে আসে। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসেই যে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ল ভারত, সেটাই রোহিত চেয়েছিলেন। আর সেই সংগ্রহ নিয়েই অজিদের আটকে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য এখন তাই বাংলাদেশের ওপরেই।
২০৬ রানের লক্ষ্যে আরশদীপের আউট সুইংয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে প্রথম ওভারেই ফেরেন ওয়ার্নার। উইকেট এসে অধিনায়ক মিচেল মার্শ এলোপাথাড়ি আক্রমণ করতে গিয়ে দুবার জীবন পেয়েছেন। তবে রানও ঠিকই বের করে নিচ্ছিলেন। অন্যদিকে হেড যে ভারতকে পেলেই জ্বলে ওঠেন সেটার ধারাবাহিকতা দেখালেন আরেকবার। এমনকি বুমরাহর প্রথম ওভারে পাওয়ারপ্লেতে তিনি নিলেন ১৪ রান। দারুণ শুরু করে পাওয়ারপ্লেতে তাই ৬৫ রান তুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
তবে ৭-১০ ওভারের যেই সময়টায় ভারত তুলেছিল ৫৪ রান, সেখানে অস্ট্রেলিয়া রান রেটের কথা মাথায় রেখেই খেলছিল। রান রেটটা নিজেদের আওতার মধ্যেও ছিল। কিন্তু কুলদীপের বলে সপাটে সুইপ করেও যখন মার্শকে ফিরতে হল তখনই ভারত যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করে। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগে লাফ দিয়ে অক্ষর যেই ক্যাচে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ককে ২৮ বল ৩৭ রানে থামালেন, সেটা হয়ত টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ক্যাচ। উইকেটে এসে অবশ্য জাদেজাকে সুইচ হিটে ছয়-চার মেরে ম্যাক্সওয়েল বার্তা দিলেন চড়ে বসার। কিন্তু ম্যাচে ভারতকে ফেরান সেই কুলদীপ। ম্যাক্সওয়েলের বিপক্ষে বরাবরই সফল কুলদীপ আজও দারুণ এক স্পেলে হেড-ম্যাক্সওয়েলকে বেঁধে রেখেছিলেন। সেখান থেকেই হালকা বের হয়ে উদ্ভট এক শট খেলতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েল থামেন ১২ বলে ২০ রানে স্ট্যাম্প খুইয়ে। পরের ওভারেই রিভার্স সুইপে পয়েন্টে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে স্টয়নিস থামেন অক্ষরের শিকার হয়ে।
ম্যাচটা তখন বলতে গেলে হেডের হাতেই। হেড একা আর পারেনি অস্ট্রেলিয়াকে ফেরাতে। শেষে এসে বুমরাহ ঠিকই আবারও সফল.৪২ বলে ৭৬ রান করে তার স্লোয়ারে কাবু হয়ে হেড ফিরলে ম্যাচ ভারতের দিকে হেলে যায়। নিজের শেষ ওভার করতে এসে একের পর এক ফুল টস দিয়েও আরশদীপ এরপর ফেরান ওয়েড ও ডেভিডকে। ম্যাচ হাত থেকে ফস্কে গেলে রান রেটটাও খুব একটা বাড়াতে পারেনি অজিরা। আফগানদের নিচে রান রেট না নামতে তাদের ৩৫ বা তার নিচে হারতে হত। শেষমেশ ২৪ রানে হেরে সেমির আশাটা কিছুটা হলেও টিকিয়ে রেখেছে তারা।
এর আগে প্রথম ওভারেই রানের খাতা খোলার আগেই কোহলিকে যখন হেজলউড ফেরালেন তখন অনেকের মনেই ওয়ানডে বিশ্বকাপ ভেসে উঠেছিল। রোহিত যেন সেখান থেকে তেঁতে উঠলেন। মিচেল স্টার্কের ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে এক ওভারেই নিলেন ২৯ রান! হেজলউড ছাড়া যেই এসেছে তাকেই তিনি রাস্তা মাপার ইঙ্গিত দিয়েছেন। চার ওভারের মধ্যেই ৫টি ছয় মেরে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০০ ছয়ের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। মাঝে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকলেও থামেননি রোহিত। বৃষ্টির পরেই কামিন্সকেও যেভাবে অফ সাইডের লাইনে সরে এসে খেললেন তাতেই বুঝে হয়ে গিয়েছিল, আজ রোহিতের দিন।
পাওয়ারপ্লেতেই ৬০ রান তুলে ফেলার পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন তিনি। ধুঁকতে ঋষাভ ফিরেছিলেন স্টয়নিসের শিকার হয়ে; তবে জাম্পাকে সূর্যকুমারের সাথে মিলে এরপর একেবারেই নিষ্ক্রিয় করে ফেলেন রোহিত। দুজনে মিলে মাত্র ৮.৪ ওভারেই শতরানে দলকে নিয়ে যান! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসেই এটি দ্রুততম দলীয় শতরানের রেকর্ড! রোহিতকে থামানো যখন প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছিল তখনই মাঝের ওভারে স্টার্ককে আক্রমণে ফেরান মার্শ। প্রায় এক ইয়র্কারে রোহিতকে জায়গা না দিয়ে স্টাম্প উপড়ে ঠিকই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন স্টার্ক। ৪১ বলে ৯২ রানের দানবীয় ইনিংস শেষে ভারত অধিনায়ক ফিরলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ হয়নি অস্ট্রেলিয়ার; দুইশো যে তখনও চোখ রাঙাচ্ছে।
অন্য প্রান্তে সূর্যকুমারও নিজের ছন্দে খেলতে থাকলেও স্টার্ক তার পরের ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচে তাকে থামান ১৬ বলে ৩১ রানে। মাঝের চার ওভারে অস্ট্রেলিয়া তাই ম্যাচে ফেরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। শিভাম দুব ভালো শুরু করেও পরে হাত খুলতে পারেনি; থেমেছিলেন স্টয়নিসের আঘাতে। শেষটাও অস্ট্রেলিয়া নিজেদের করতে পারত; তবে জাম্পার শেষ ওভারে হার্দিকের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন মার্শ। দারুণ বল করেও ওই ওভারে কোনো উইকেট পাননি জাম্পা। শেষে তাই হার্দিক ১৭ বলে ২৭* রানে ভারতকে দুইশোর ওপারে নিয়ে গিয়েছেন।