• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    আরনোস ভেইলে আফগানদের ইতিহাস

    আরনোস ভেইলে আফগানদের ইতিহাস    

    সুপার এইট, কিংসটাউন (টস- আফগানিস্তান/ব্যাটিং)
    আফগানিস্তান - ১১৫/৫, ২০ ওভার (গুরবাজ ৪৩, রশিদ ১৯*, ইব্রাহিম ১৮, রিশাদ ৩/২৬, তাসকিন ১/১২, মোস্তাফিজ ১/১৭)
    বাংলাদেশ - ১০৫, ১৭.৫(১৯) ওভার; লক্ষ্য - ১১৪ (লিটন ৫৪*, হৃদয় ১৪, সৌম্য ১০, রশিদ ৪/২৩, নাভিন ৪/২৬, নাঈব ১/৫)
    ফলাফল - আফগানিস্তান ৮ রানে জয়ী (ডিএলএস মেথডে জয়ী)




    আরনোস ভেইলে আফগানরা লিখল তাদের সবচেয়ে গৌরবময় ক্রিকেটীয় ইতিহাস! ১১৫ রানের সংগ্রহ নিয়েও বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করে রশিদ খানরা প্রথমবারের মতো চলে গেল সেমি-ফাইনালে।

    লক্ষ্য ছিল ১১৬, তবে সেমিতে যেতে সেটা পেতে হত ১২.১ ওভারে। তবে লিটন ছাড়া বলতে গেল কেউই সেটা করার কাছাকাছিও যেতে পারেননি। আসরে আরেকবার শূন্য রানে তানজিদ হাসান তামিম ফিরলেন, ফজলহক ফারুকীর বিশাল ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে। উইকেটে এসে অধিনায়ক শান্ত অনেক তড়িঘড়ি করলেও বাউন্ডারি পেলেন মোটে একটাই। নাভিনের স্লোয়ার পড়তে না পেরে ৫ বলে ৫ রান করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে তিনি থামার পরের বলেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। নাভিনের দুর্ধর্ষ ওপেনিং স্পেলে কেঁপে যাওয়ার পরেও পাওয়ারপ্লেতে ৪৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ।

    তবে মাঝে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশব খেই হারিয়ে ফেলে পুরোপুরি। পাওয়ারপ্লে শেষ হতেই রশিদ বুনতে শুরু করেন স্পিন-জাদু। দারুণ এক গুগলিতে সৌম্যর স্টাম্প উপড়ে ফেলেন অধিনায়ক। নিজের পরের ওভারে এসে স্লগ সুইপের সুযোগ খুঁজতে থাকা হৃদয়কে থামানোর পরের বলেই রিশাদের স্টাম্প ভেঙে ফেলেন রশিদ। এরপর বাংলাদেশ বলতে গেলে সেমিতে যাওয়ার কোনো চেষ্টাই করেনি। ৯ বলে ৬ রানের অদ্ভুত এক ইনিংস খেলে রশিদের চতুর্থ শিকার হয়ে যখন মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন, সাথে করে সকল সম্ভাবনাও যেন জলাঞ্জলি দিয়ে গেলেন। অন্য প্রান্তে লিটনও এরপর শুধুই বড়াই করার জন্য একটা জয়ের লক্ষ্যে খেলে গেলেন।

    সেসব সুযোগ দেওয়ার জন্য অবশ্য এদিন আসেনি আফগানরা। নিজেদের গল্প নিজেরাই লিখতে বদ্ধপরিকর আফগানদের যেন বৃষ্টিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে খেলা নেমে আসে ১৯ ওভার, লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৪ রানে। মাঝে একবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ডিএল স্কোরে আফগানরা এগিয়ে থাকায় নাঈব যে মাঠে পড়ে যাওয়ার নাটক করলেন, সেই নাঈবই আক্রমণে এসে বাউন্সারে থামালেন তানজিম সাকিবকে। লিটন এরপর ফিফটি করে একাই ম্যাচটা বের করে নেওয়ার চেষ্টা করলে আক্রমণে এসে বাধ সাধেন নাভিন। দারুণ এক স্লোয়ারে তাসকিনকে বোল্ড করেন। মজার বিষয় - এই উইকেটটার আগেই ডিএল স্কোরে এক রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেস। এই উইকেটটা পড়তেই তিন রানে এগিয়ে যায় আফগানরা; আবার বৃষ্টিও নামে। আফগানরা অবশ্য নিজেদের কাজ নিজেই করার প্রত্যয়ে ছিলেন। হলও তাই; মোস্তাফিজকে খেলা শুরুর সাথে সাথেই থামিয়ে নাভিন আফগানদের এনে দেন ঐতিহাসিক জয়।

    আজ অবশ্য শুরু থেকেই আফগানদের ওপর চেপে বসে পাওয়ারপ্লেতে উইকেটের সম্ভাবনা তৈরি করেও সেটার দেখা পায়নি বাংলাদেশ। তাওহিদ হৃদয়ের ক্যাচ মিসে ইব্রাহিম জীবন পেলে পাওয়ারপ্লেতে ২৭ রান তোলে তারা। পাওয়ারপ্লের পর সাকিব, মোস্তাফিজরা যেন আরও চেপে বসে। গুরবাজ-জাদরানদের দুর্দান্ত ওপেনিং স্পেলে তাসকিন ৩ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৬ রান। এরপর সেটা কাজে লাগিয়ে উইকেট এনে দিতে থাকেন রিশাদ। ব্যাটারের আওতার বাইরে লেগ স্পিন দিয়ে ইব্রাহিমকে লং অনে তানজিম সাকিবের ছুটে আসা ক্যাচে থামান রিশাদ।

    সেই উইকেটের পরিক্রমায় ওমরযাই ফেরেন মোস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। রিশাদকে আক্রমণ করতে হিমশিম খাওয়া আফগানরা তার উত্তর খুঁজে পাননি শেষ ওভারে। স্পেলের শেষ ওভারে সেই একই পরিকল্পনায় পেলেন দুই উইকেট। তবে গুলবদিনকে যেই বলে ফেরালেন রিশাদ তার জন্য ডিপ কাভার থেকে ২৬ মিটার দৌড়ে এসে নেওয়া সৌম্যের দুর্দান্ত ক্যাচকেই ধন্যবাদ দেবেন তিনি। ৫৫ বলে ৪৩ রানে গুরবাজও সেই একই যুগলের শিকার হয়ে ফিরেছিলেন।

    নিজের স্পেলের শেষ ওভারে এরপর তাসকিন যখন নবীকে থামালেন তখন মনে হচ্ছিল শতরানের নিচেই হয়ত আটকে যাবে আফগানরা। তবে অধিনায়ক রশিদ তিন ছয় মেরে তাদের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন। শেষদিকে মাথা গরম করলেও তানজিম সাকিবের শেষ ওভারে দুই ছয়ে দলকে এনে দিয়েছিলেন লড়াইয়ের রসদ। সেই রসদ নিয়েই ইতিহাস গড়লেন রশিদরা।