• বাংলাদেশ-পাকিস্তান
  • " />

     

    মুশফিকের দাপুটে সেঞ্চুরি, মিরাজের ফিফটিতে পিন্ডিতে চালকের আসনে বাংলাদেশ

    মুশফিকের দাপুটে সেঞ্চুরি, মিরাজের ফিফটিতে পিন্ডিতে চালকের আসনে বাংলাদেশ    

    ১ম টেস্ট, রাওয়ালপিন্ডি (টস- বাংলাদেশ/ফিল্ডিং)
    পাকিস্তান - ৪৪৮/৬ ডি. ও ২৩/১ (শফিক ১২*, শরিফুল ১/১৩)
    বাংলাদেশ - ৫৬৫, ১ম ইনিংস (মুশফিক ১৯১, সাদমান ৯৩, মিরাজ ৭৭,  নাসিম ৩/৯৩, আলী ২/৮৮, শাহীন আফ্রিদি ২/৮৮)
    পাকিস্তান ৯৪ রানে পিছিয়ে
    ৪র্থ দিন, স্টাম্পস


     

    টেস্ট আঙিনায় মুশফিক ফিরলেন রাজসিক ভঙ্গিমায়, রেকর্ডের পসরা সাজিয়ে দিনটা শুধু যে নিজের করে রেখেছেন তাই নয়, বাংলাদেশকেও বসিয়েছেন টেস্টের চালকের আসনে। চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশ যে স্বপ্ন দেখছে তার জন্য অবশ্য মুশফিকের সাথে রেকর্ড জুটি গড়া মিরাজকেও ধন্যবাদ জানাতে হয়।

    শেষ বিকেলে বল হাতে আরও একবার উজ্জ্বল শরিফুল আজ মুশফিক-মিরাজের হাতে দেখানো পথে ব্যাট হাতেও খেলেছিলেন ১৪ বলে ২২ রানের দারুণ এক ক্যামিও। শাহীন আফ্রিদিকে তো সপাটে হাঁকিয়ে মাঠছাড়াও করেছেন। পরে আগের ইনিংসে ফিফটি পাওয়া সাইম আইয়ুবকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করিয়ে বাংলাদেশের এক দারুণ দিনের তুলির শেষ আঁচড়টাও কেটেছেন এই বাঁহাতি পেসার।

    এর আগে দিনের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল ধাক্কা খেয়ে। দুর্দান্ত শুরু করা নাসিমের আঘাতে ভাঙে মুশফিক-লিটনের শতরানের জুটি। কিছুটা খাটো লেংথের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫৬ রানে থাকা লিটন। এরপর অবশ্য মিরাজকে নিয়ে দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে যান মুশফিক। লাঞ্চের একটু আগেই দুইশো বলে পেয়ে যান সেঞ্চুরির দেখা। সালমানের পায়ের ওপরের বলটা ব্যাকওয়ার্ড স্কয়্যার লেগ অঞ্চল দিয়ে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিয়েই মাতলেন উন্মত্ত আনন্দে। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গড়লেন সেঞ্চুরির কীর্তি। শুধু তাই নয় ১১-তম টেস্ট সেঞ্চুরিটা দিয়ে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন মুশফিক। কিছুক্ষণ পর বিদেশের মাটিতে টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বাংলাদেশিও হয়ে যান তামিম ইকবালকে ছাড়িয়ে।

    মুশফিকের দাপটে মিরাজও পরের সেশনে নিজের খেলা খেলতে শুরু করেন। অবশ্য পাকিস্তানি ফিল্ডারদের বদান্যতাও সেখানে রেখেছে ভূমিকা। দেড়শো রানের মাইলফলক যখন মুশফিক ছুঁলেন, তার সাথে মিরাজও পেলেন নিজের সপ্তম টেস্ট ফিফটি। তবে ১৫২ রানে থাকার সময় সালমানের দারুণ এক বলে লেগ স্লিপে সহজ ক্যাচ তুলে দিলেও বাবরের মিসে বেঁচে যান মুশফিক। সেই সালমান নিজেই পরে স্লিপে ছেড়েছেন মিরাজের ক্যাচ। চা-বিরতির আগে দারুণ এক সেশন পার করা বাংলাদেশ এগিয়ে তো গিয়েছিলই, সেই সাথে বড় লিডেরও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল।

    সেটা শেষমেশ সম্ভব হয়েছে ঠিকই। সপ্তম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েছেন মুশফিক-মিরাজ। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ২০১০ সালের রেকর্ড ভেঙে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে এই উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে পথ দেখিয়েছেন এই দুজনেই। তবে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র নয় রান দূরে থাকতেই মুশফিককে পুড়তে হয় ডাবল সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে। উষ্ণ আবহাওয়ার মাঝে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাট করার ক্লান্তিই যেন পেয়ে বসেছিল তাকে। মোহাম্মদ আলীর নিরীহ লেংথ বলে ফুট মুভমেন্ট ছাড়া ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ৩৪১ বলে ১৯১ রানের অসামান্য এই ইনিংস। সতীর্থ মিরাজ শেষদিকে টেলএন্ডারদের নিয়ে ব্যাট করতে গিয়ে পাননি সেঞ্চুরির দেখা। অনেকটা একইভাবে শাহীন আফ্রিদির কিছুটা বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিরাজ। ৭৭ রানে থাকা মিরাজের ক্যাচ নিয়ে যেন কিছুটা শাপমোচনও করেন সালমান।

    অবশ্য পরে শরিফুলের ক্যামিও ও উইকেটে তাতে খুব একটা অসুবিধা তো হয়নি বটেই, বরং দিনটা নিজেদের করে রেখেছে বাংলাদেশ। টেস্টে নিজেদের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে শেষ দিনে দারুণ কিছু করারও স্বপ্ন তাই দেখতে পারে বাংলাদশ।