• ইউরো
  • " />

     

    কিক অফের আগেঃ ফরাসি বিপ্লবে বাধা রোনালদো?

    কিক অফের আগেঃ ফরাসি বিপ্লবে বাধা রোনালদো?    

    রোনালদোকে সামলাতে পারবে ফ্রান্স?

    চার ইউরোতে গোল করা একমাত্র খেলোয়াড় তিনি। হাঙ্গেরির বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে দুই গোল করে পর্তুগালকে পার করিয়েছিলেন গ্রুপ পর্ব। সেমিফাইনালে গোল করে ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন; দলকেও উঠিয়েছেন ফাইনালে।

    নিজেদের মাটিতে ইউরো জয়ে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় বাধা সন্দেহাতীতভাবেই তিনবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনালদো। ফ্রান্সের জন্য ইউরো জয়ের সমীকরণটাও তাই সোজা! রোনালদোকে থামাও!

    রিয়াল মাদ্রিদের মতো পর্তুগালের হয়ে খেলার সময় হয়ত অতোটা গোলের সুযোগ পাননি, তবে যখনই পেয়েছেন তা কাজে লাগিয়ে দেখিয়েছেন রোনালদো। আজকের ফাইনালেও সামান্য সুযোগ পেলেই উৎসবের প্রস্তুতি নিতে থাকা ফ্রান্সকে মুহুর্তেই স্তব্ধ করে দিতে পারেন! ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমও মানছেন, ফ্রান্সের বড় বাধার নাম রোনালদোই। “রোনালদোর গতি আর বাতাসে ওর দক্ষতাটাই আমাদের ভয়! ম্যাচে ওকে আটকে দেয়াটাই আমাদের জন্য আমাদের লক্ষ্য।”


     

    কৌশল বদলাবেন দেশম?

    দলকে ফাইনালে নিয়ে এলেও ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম যেন এখনও খুঁজছেন নিজের সেরা একাদশ! প্রতি ম্যাচেই অদল বদল করে খেলিয়েছেন মিডফিল্ডে। তবে সেমিফাইনালে খেলা ৪-২-৩-১ এ ফরমেশনে পাওয়া সাফল্যের পুনরাবৃত্তিই হয়ত করতে চাইবেন দেশম। তাছাড়াও ডায়মন্ড ফরমেশনে রোনালদোকে গোলবঞ্চিত করা একটু কঠিনই- তাই দেশমের কাছে আর কোনো রাস্তাও খালি নেই! রোনালদোকে আটকাতে অভেদ্য এক ডিফেন্স নিয়েই নামতে হবে ফ্রেঞ্চদের।  

    একমাত্র স্ট্রাইকার ওলিভিয়ের জিরুর পেছনে তিন জনের একজন হয়ে খেলবেন এবারের ইউরোর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা আন্টোয়ান গ্রিজম্যান। ডিফেন্ডারদের ঠিক ওপরেই থাকবেন পগবা আর মাতুইদি।

     




     

      
     ইতিহাস কি বোঝা না অনুপ্রেরণা?
      
     
    ১৯৮৪ আর ২০০০ সালে ইউরো জিতেছিল ফ্রান্স। মাঝখানে পার্থক্য ষোল বছর। আবারও ষোল বছর পরে ঘরের মাঠে আরো এক ইউরোর ফাইনালে লা ব্লুজরা। শেষবার ঘরের মাঠে ইউরো আর বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র দলও ফ্রান্স। ঘরের মাঠে এমন রেকর্ড যাদের, তারা তো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই চাইবে!

    ইউসেবিও, ফিগো, রোনালদোর মতো তারকাদের তৈরি করলেও কখনই কোনো বড় টুর্ণামেন্টের শিরোপা জিততে না পারার ইতিহাসটা পর্তুগালের জন্য একটা বোঝাই। ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে ফাইনালে গ্রিসের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গিয়ে বিসর্জন দিতে হয়েছিল শিরোপা স্বপ্ন। কী অদ্ভূত! ওই ঘটনার এক যুগ পরে পর্তুগাল যখন আরও একটি ইউরোর ফাইনালে, তখন তাদের প্রতিপক্ষ আরেক স্বাগতিক দেশ!

    সেবার ফাইনালে হেরে ১৯ বছর বয়সী রোনালদো মাঠ ছেড়েছিলেন চোখ ভিজিয়ে। তারপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্লাব পর্যায়ে সব শিরোপাই নিজের করে নিয়েছেন রোনালদো। তিনবার হয়েছেন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়! রোনালদোর জন্য মঞ্চ প্রস্তুতই, এবার শুধু হাসিমুখে মাঠটা ছাড়তে চাইবেন পর্তুগিজ অধিনায়ক।


     

    ফাইনালে আছে প্যারিস আক্রমণের দুঃসহ স্মৃতিও...

    গত নভেম্বরে সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হওয়া প্যারিস এতদিন ধাক্কা সামলে উঠলেও, দুঃসহ সেই স্মৃতি মন থেকে তাড়াতে পারেনি ফ্রান্সবাসী। ভয়াবহ সন্ত্রাসী আক্রমণে ১৩০ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছিল সেদিন প্যারিসে। আজকের ফাইনালের মাঠে স্টাডে ডি ফ্রান্সে সেদিনও চলছিল খেলা। অল্পের জন্য আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পেলেও, ঘটনার ভয়াবহতায় পন্ড হয়ে গিয়েছিল ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক সেই ম্যাচ।

    তার মাত্র সাত মাসের মাথায় এতো বড় একটি টুর্নামেন্ট সফলভাবে আয়োজন করতে পারাটা বোধ হয় শুধু শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমী ফ্রেঞ্চদের পক্ষেই সম্ভব! সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালেও খেলছে নিজেদের দেশ! লা ব্লুজদের ইউরো জয় সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি কিছুটা হলেও ভুলতে সাহায্য করবে ফ্রেঞ্চদের। আর ফরাসী সেই স্বপ্ন যদি শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েই যায়, তবে প্যারিস আক্রমণের শিকার সেই ১৩০ জনকেই তা উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স!