'বুলবুল-নান্নুর মতো মেধাবী ব্যাটসম্যান দেখিনি'
কিছুটা ফুললেংথের বল। মিডিয়াম পেসেই হাঁটু গেঁড়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছয়। বল গিয়ে পড়লো সীমানা থেকে বেশ দূরে রাখা সাইটস্ক্রিনের ঠিক সামনে। সেই চিরায়ত মোহাম্মদ রফিক, সেই ৭৭ নম্বর জার্সি। ৪৭ বছর বয়স হয়ে গেলেও যেন রফিকের ব্যাট হাসছে, ঠিক আগের মতোই! মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছিলেন রফিক। এ ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই কথা বলেছেন প্যাভিলিয়নের সঙ্গে, ড্রেসিংরুমের সামনে চেয়ারে বসে।
আমরা তো শীর্ষ পর্যায়েই খেলেছি, এর ওপরে আর কিইবা ছিল! আফসোসের কিছু নাই। আমরা যে ধারায় খেলেছি, সেটা বদলে এখন টি-টোয়েন্টি এসেছে। সামনে নতুন কিছু আসবে। পরিবর্তন হচ্ছে, হবে। যতো বেশি ক্রিকেটার খেলবে, মেধাবি ক্রিকেটারও বেড়িয়ে আসবে এর সঙ্গে।
বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতেছিল, আমি হয়েছিলাম ম্যাচসেরা। সত্যি বলতে, এটা শুধু আমার পছন্দ না স্মরণীয় না, সবারই তাই। সবাই এটার কথাই বলবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্টে ১১১ করেছিলাম, সেন্ট লুসিয়ায়, এর বেশী মনে নেই এখন। বেশি ম্যাচ খেললে হয়তো আরও বেশি করতাম। ১১১ করেছি, সেটা কাটিয়ে ১২০ করতাম হয়তো। পেশাদার হতে হলে নিজের রেকর্ড নিজে ভাঙতে হবে। সাকিব-তামিমকে দেখেন। নিজের রেকর্ড নিজে ভেঙ্গেই এতোদূর এসেছে। কোনো দেশে এমন যদি চার-পাঁচটা ক্রিকেটার থাকে, তাহলেই দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যায়।
আমাদের সময় এতো টাকা ছিল না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ঘরোয়াতে খেলেই যা আয় করতাম। দর্শকও হতো অনেক। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে। এখন তো ঢাকার বাইরে খেলা হয়। বিকেএসপি নাহলে ফতুল্লায়। সেখানে খেলা দেখতে কে যাবে!
(মিনহাজুল আবেদীন) নান্নু ও (আমিনুল ইসলাম) বুলবুলের মতো মেধাবী ব্যাটসম্যান দেখি নি। আগে তো আম্পায়ারের মান তেমন ছিল না। হয়তো এলবিডাব্লিউ বা কট বিহাইন্ড হলো, আম্পায়ার দিতো না। কিন্তু তারা অনেক কঠিন ব্যাটসম্যান ছিল আউট করার জন্য।
রেকর্ড তো ভাঙবেই। তবে, দোয়া করেন, বাংলাদেশে ক্রিকেট যতোদিন থাকবে, রফিকের নাম থাকবে। আমি একটা পর্যায় পর্যন্ত এনেছি (বোলিং), সাকিবরা আরেকটা পর্যায়ে নিয়ে যাবে। পরবর্তী প্রজন্ম আরও ভাল খেলবে।আর বাংলাদেশে টেস্ট বা ওয়ানডেতে প্রথম ১০০ উইকেট আমার। এ রেকর্ড তো আমারই থাকবে!
টেস্টে টানা বোলিং করতে হলে আগে অভ্যাসটা তৈরী করতে হবে। পরিকল্পনা থাকতে হবে, কমপক্ষে চল্লিশ ওভার বোলিং করার। সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া যে ম্যাচই হোক, সবার আগে মাঠে আসতাম। নিজের কাজগুলো করতাম, তারপর দলের সঙ্গে বাকি কাজ করতাম।
ভারতের সঙ্গে খেললেই আমি টেন্ডুলকারকে আউট করতে চাইতাম (তিনবার তাঁর উইকেট নিয়েছেন রফিক)। পন্টিংয়কে বোল্ড করেছিলাম, সে ছেড়ে দিতে গিয়ে আউট হয়েছিল। ম্যাচটা নয় উইকেটে (আট উইকেটে, কেয়ার্নসে, ওয়ানডে) হেরেছিলাম। পন্টিং ভেবেছে, হয়তো কিপার ধরে উইকেট ফেলে দিয়েছে। পরে থার্ড আম্পায়ার কল করে দেখলো, না, বোল্ড (৬৫ বলে ২৯ করে বোল্ড হয়েছিলেন পন্টিং)।
আসলে ক্রিকেটের বাইরে থাকলে একরকম অনুভূতি থাকে, ক্রিকেট মাঠে আরেকরকম। আমি যে পর্যায়েই খেলি না কেন, মানসিকতা একই থাকে। হয়তো একটা তরুণের সাথে আমি দৌড়ে পারবো না, কিন্তু আমার ইচ্ছা থাকবে তাদের সাথে প্রতিযোগিতার।
আমি অবসরের পর কাজ করতে চাই, সেটা খেলার সময় থেকেই আমি বোর্ডকে বলে এসেছি। ম্যানেজমেন্ট তো সেভাবে চিন্তা করে না। তারা সুযোগ দেন নাই। একটা মানুষকে আর কতো বলা যায়!
ভারতে যারা অবসর নিয়েছে, তাদের সাথে খেলি। (সৌরভ) গাঙ্গুলি একটা দলে আছে। খেলি, কাজ করি। কালিঘাট ক্যান্টনমেন্টের কাছে। গাঙ্গুলি বিশাল একটা মাঠ দিয়েছে, ওর একাডেমি। ১৫-১৬টা নেট আছে। অনেক বাচ্চারা আসে, মাঠ আছে। খেলে। ভারত গেলে ওদেরকে জানাই, ওরা সব ব্যবস্থা করে। সঙ্গে আমার কাজটাও হলো।
রংপুরের সাথে আছি বিপিএলে। মাঝে আবাহনীর সঙ্গে ছিলাম, কিছুদিন হজের কারণে থাকতে পারিনি। আমাদের বিদ্যুৎমন্ত্রী, (নসরুল হামিদ) বিপু ভাই একটা স্টেডিয়াম করে দিয়েছে। কাজ অনেক হয়ে গেছে, ড্রেসিংরুম আর ইনডোরের কাজ বাকি আছে। আমি আত্মবিশ্বাসী, কেরানীগঞ্জের নামেই আমি পেশাদারিত্বর সঙ্গে এখানে একটা একাডেমি করবো।