• ত্রিদেশীয় সিরিজ
  • " />

     

    আবারও রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ

    আবারও রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ    

    লাইভস্কোর ও পুরো স্কোরকার্ড দেখুন এখানে 



    বাংলাদেশ ২১৬/৯, ৫০ ওভার 
    জিম্বাবুয়ে ১২৫, ৩৬.৩ ওভার 



    ২০০১। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ অল-আউট ২১৫ রানে, টপ অর্ডারে দুই ফিফটি, শেষ উইকেট জুটিতে ২৯ রান। জিম্বাবুয়ে সে রান টপকে গেল ৭ উইকেট বাকি রেখেই। 
    ২০১৮। মিরপুর। বাংলাদেশ অল-আউট ২১৬ রানে, টপ অর্ডারে দুই ফিফটি, ৯ম উইকেটে ২৬ আর শেষ উইকেটে ২০ রান। জিম্বাবুয়ে এবার আটকে গেল ১২৫ রানেই। ১৭ বছরে পার্থক্যটা স্পষ্ট। এই ম্যাচের আগে প্রথমে ব্যাটিং করে এতো অল্প সংগ্রহতে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জেতেনি বাংলাদেশ। পার্থক্যটা আরও ভাল করে বুঝতে রেকর্ডের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। 

    ২১৭ রানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ে আটকে গেছে ৩৭তম ওভারে। উত্তুঙ্গ সমুদ্রে একটা ডিঙির মতো যেখানে ভাসছে শুধুই সিকান্দার রাজার ৩৯ রানের ইনিংস। আর ঢেউ তুলছে সাকিবের ৩ উইকেট, মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সানজামুলদের জোড়া উইকেটের সঙ্গে রুবেলের একটা ব্রেকথ্রু। 

    তবে তামিমের জন্য দিনটি ছিল ব্যক্তিগত মাইলফলকের। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আগেরদিনের মতোই ইনিংস খেলেছেন, প্রথম ধাপে ধীর-স্থির, পরে সেটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। সেঞ্চুরি মিস করেছেন আজও, ক্রেমারকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পড। একইভাবে রাজার বলে স্টাম্পড হয়েছিলেন সাকিব- এনামুলের দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার পর এ দুইজনের ১০৬ রানের জুটিই বাংলাদেশকে প্রথমে টেনেছিল। 

    এরপরই ধ্বস রীতিমতো- ২৩ রানে ৬ উইকেট। ম্যালকম ওয়ালারকে স্লগ সুইপে ছয় মেরে শুরু করেছিলেন মুশফিক, ক্রেমারকে সুইপ করতে গিয়ে টপ-এজে ফাইন লেগে দিলেন ক্যাচ। মাহমুদউল্লাহ গুগলি না বুঝে এলবিডাব্লিউ, আর তামিম সাকিবের মতো করেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলতে এসে স্টাম্পড। সাব্বিরের উইকেটটা অবশ্য বোলার ওয়ালারের চেয়ে ফিল্ডার ক্রেইগ এরভিনের বেশি, শর্ট মিড-উইকেটে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে নিচু হয়ে নিয়েছেন দারুণ ক্যাচ। 

    নাসির জন্য আদর্শ মঞ্চের মতো ছিল, তিনি সেটা হেলায় হারিয়েছেন। জারভিসের ঘুরিয়ে দেওয়া সিমটা যেন দেখেও দেখেননি, খোঁচা মেরে টেইলরকে দিয়েছেন ক্যাচ, যেটি তিনি নীচু হয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। পুরো ইনিংসেই জিম্বাবুয়ের ফিল্ডিং ছিল অসাধারণ, সানজামুলের ক্যাচটি যেমন শর্ট ফাইন লেগে নিয়েছেন মুজারাবানি। 

    তবে ব্যাটসম্যানদের দৈন্যদশার দিনে যেন নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন সানজামুল-মুস্তাফিজ-রুবেলরা। প্রথম দুইজন ৮ম উইকেটে তুললেন ২৬ রান, মুস্তাফিজ করলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ স্কোর। আর শেষ ওভারে পুরো ইনিংসেই বাংলাদেশের ত্রাস জারভিসকে বোলারস ব্যাক ড্রাইভে ছয় মেরে ফলোথ্রুতে আটকে থেকে যেন ফটোগ্রাফারদের সুযোগ  দিলেন রুবেল। আর শেষ বলে ফ্লিক করে চার মারলেন মুস্তাফিজ। 

    সেই মুস্তাফিজ নয়, বরং শুরুতে ব্রেকথ্রু এনে দিলেন মাশরাফি। উইকেটের জায়গামতো বল ফেলে বলে ক্যারি পেয়েছেন, সিম সোজা রেখে আদায় করেছেন সুইং-ও। বাড়তি ক্যারি আর সুইং- মাসাকাদজা বুঝলেন না কিছুই, বেশ দেরিতে খেলা শটে এজ হয়ে প্রথম স্লিপে সাব্বিরের কাছে গেল ক্যাচ। আবারও শরীর থেকে দূরে শট খেলার দোষে দোষী তিনি। সাকিব জাগালেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। সলোমন মিরে নীচু হওয়া বলে হাঁকিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড, টেইলর ব্যাকফুটে গিয়ে এলবিডাব্লিউ। 

    এরভিনের খারাপ সময় আজো কাটেনি, মাশরাফিকে শুরুতে ব্যাকফুট পাঞ্চে দারুণ চার মারলেন, সাকিবকে সুইপে চার মারলেন, তবে মাশরাফির সুইং আর ক্যারিতে তিনিও খোঁচা দিলেন- প্রথম স্লিপেই সাব্বিরের কাছে ক্যাচ মাসাকাদজার মতো করেই। 

    এরপর শুধু এলবিডাব্লিউ। পিটার মুর সানজামুলের বলে সামনের পায়ে আটকা পড়লেন, আর ম্যালকম ওয়ালার সুইপ করতে গিয়ে মিস করলেন পরের বলেই। সাকিবের মতো হ্যাটট্রিক হলো না তারও। সানজামুল আরেকটা উইকেট পেতে পারতেন, গ্রায়েম ক্রেমারও আটকা পড়েছিলেন মুরের মতো করেই। রিভিউ ছিল না বলে কিছু করারও ছিল না বাংলাদেশের। সেই ক্রেমার হলেন এলবিডাব্লিউই, রুবেলের বলে। 

    একমাত্র আশা হয়ে ছিলেন রাজা, অফস্টাম্পের বাইরের বলে আলতো করে খেলতে গিয়ে বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে। ৫৯ বলে ৩৯- রাজা থামলেন সেখানেই। এরপর চাতারা সাকিবের বলে সাব্বিরকে ক্যাচ দিয়েছেন কাউ কর্নারে, আর মিড-অফে মাহমুদউল্লাহর হাতে মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়েছেন জারভিস। 

    আজ জিম্বাবুয়ে যেমন বাংলাদেশকে একটা রেকর্ড দিল। আর বাংলাদেশ জানিয়ে দিল ১৭ বছর আগে-পরের পার্থক্যটা।