• সাফ ফুটবল ২০১৮
  • " />

     

    ভুটানকে হারিয়ে বাংলাদেশের শুভসূচনা

    ভুটানকে হারিয়ে বাংলাদেশের শুভসূচনা    

    ২০১৬ তে ভুটানের কাছে সেই হারের স্মৃতিটাই ঘুরে ফিরে এসেছিল ম্যাচের আগে।  দুঃসহ সেই স্মৃতিটা ম্যাচ শুরুর পরে আর খুব বেশিক্ষণ চাঙ্গা থাকতে দেয়নি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে একটা টুর্নামেন্টে যেমন শুরু চেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটাই হল। স্বপ্নের শুরুও বলা যায়, ৩ মিনিটেই পেনাল্টি, সেখান থেকেই এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটেও আরেক গোল করে তখনই খেলার ফল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর আর গোল হয়নি, কিন্তু ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে সাফে শুভসূচনাই করেছে লাল সবুজের দল।

    বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম খেলায় অঘটনই ঘটেছে। ম্যাচের আগেও একটা সংশয় ভর করেছিল। কিন্তু স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় হাজার দশেক সমর্থকদের সমর্থন কাজে লাগিয়ে কিক অফ থেকে সব সংশয় উড়ে গেল। শুরুতেই একটা কর্নার পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেটাই ডিফেন্ড করতে গিয়ে তেসরিং দর্জি ফাউল করে বসেন সাদ উদ্দিনকে। রেফারিরও চোখ এড়াল না ঘটনা, দিলেন পেনাল্টি। তেসরিং দেখলেন হলুদ কার্ড। ভুটানের শেষ ভরসা সেশরিং দেন্দুপও ভাগ্য বদলাতে পারেননি। ডিফেন্ডার তপু বর্মন তাকে উলটো দিকে ফেলে ৩ মিনিটের মধ্যেই বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন।

     


     

    বাংলাদেশের শুরুর একাদশে ছিলেন না মামুনুল ইসলাম। মাশুক মিয়া আর মাহবুবুর রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন আক্রমণে, সঙ্গে ছিলেন সাদ। ৭ মিনিটে মাশুক আর মাহবুবুরের সমন্বয় আবারও এগিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। মাশুকের পাস থেকে মাহবুবুর গোলরক্ষকের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতি থেকে অবশ্য চিপটা সফলভাবে করতে পারেননি। গোলরক্ষক এগিয়ে এসে সে দফায় ভুটানকে বাঁচিয়েছেন।

    অন্যপ্রান্তের গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল শুরুতে অবসর সময় কাটালেও পরে তাকেও নামতে হয় পরীক্ষায়। দলে তার জায়গা পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। সেই সংশয়টা আরও বাড়ারই কথা ম্যাচ শেষে। প্রথমার্ধ আর দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত দুইবার দলের বিপদ ডেকে আনতে পারতেন তিনিই। সেটপিস থেকে দুইবারই এগিয়ে গিয়েও বল ধরতে পারেননি, ভুটান অবশ্য প্রাপ্য শাস্তিটাও দিতে পারেনি তাকে। কিন্তু জেমি ডের দুশ্চিন্তাটা তাতে কমার কোনো কারণ নেই।

    শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুবিধাটা প্রথমার্ধে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পেরেছে অল্পই। উলটো ভুটানই চোখ রাঙিয়েছে বেশি। বলের দখলেও এগিয়ে ছিল তারা। অবশ্য নিজেরা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি, বাংলাদেশের রক্ষণের ভুল ভ্রান্তি থেকেই সুযোগ পেয়েছিল ভুটান। ২৫ মিনিটে দুই সেন্টারব্যাক তপু আর টুটুলের ভুল বোঝাবুঝি থেকে গোল হজম না করাটা তো ভাগ্যেরই ব্যাপার ছিল! ডানদিক থেকে উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে পারেননি দুইজনের কেউই, চেনচোর সামনে ছিলেন কেবল গোলরক্ষক।ভুটান ফরোয়ার্ড তবুও মেরেছেন অনেক ওপর দিয়ে।

     



     

    এরপর বিপুল আহমেদের ওপর ভর করে কিছুটা স্বস্তি পায় বাংলাদেশ। ২৮ মিনিটে প্রথম দফায় ডিবক্সের ভেতর ঢুকেও দুর্বল শট নিয়েছিলেন। ৩৫ মিনিটে বাঁ পায়ে শট নিয়েছিলেন আরেকটু পেছন থেকে, সোজাসুজি গোলরক্ষক বরাবর না মারলে হয়ত তখনই দ্বিতীয় গোলটা পাওয়া হয়ে যেত বাংলাদেশের। সেট পিস থেকে গোল আদায়ের কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের কোচ, সেই চেষ্টায় সফল না হলেও একেবারে মন্দও করেনি বাংলাদেশ। লং থ্রো থেকে ভয়ঙ্করই ছিল বাংলাদেশ, আর কর্নার থেকে গোল না পাওয়ায় বাংলাদেশ কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতে পারে নিজেদের। ওয়ালি ফয়সালের কর্নার থেকে আতিকুর রহমান ফাহাদের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে প্রথমার্ধে। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুইবার তপু বর্মন নিজের দ্বিতীয় গোলটাও পেতে পারতেন কর্নার থেকেই। কিন্তু ঠিকমতো হেড করতে পারেননি একবারও। 

    এর আগেই অবশ্য বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত সেই দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। ৪৭ মিনিটে মাহবুবুর রহমানের হাফ ভলিতে করা গোলে স্বস্তি ফেরে স্টেডিয়ামে। ঢাকার আকাশে আরেকটু জোরে নামা বৃষ্টি সেই আনন্দের উদযাপন বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। এরপরই ম্যাচটা হয়ে গিয়েছিল নিয়মরক্ষার। দুইবছর আগে হারের স্মৃতিটাও ফিকে হয়ে এসেছে তাতে। শেষদিকে ৩ জন খেলোয়াড় বদলি করে কোচও সুযোগ পেয়েছেন দলকে আরেকটু বাজিয়ে দেখার।

    দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ দল স্বস্তিতে খেললেও অবশ্য প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে অনেক। মিডফিল্ডারদের সমন্বয়হীনতা আর বল পায়ে রেখে খেলতে না পারা বাংলাদেশের ভঙ্গুর অবস্থার ইঙ্গিতই দিচ্ছে। দ্বিতীয়ার্ধে সেভাবে সুযোগও তৈরি করা হয়নি বাংলাদেশে। ভুটানকে হারিয়ে মনের শান্তিটা পাওয়া গেলেও সামনের দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ আরও কঠিন। পাকিস্তান তো দিনের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়ে সংকেত দিয়েই রেখেছে। আর নেপালের জন্য তাতে টুর্নামেন্ট হয়ে গেছে বাঁচা-মরার লড়াই। সূচনাটা শুভ হলেও, তাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার অবস্থা নেই। একদিন পরই একই সময়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ওই ম্যাচ জিতলেই অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে সেমিফাইনাল। আগের তিন আসরে গ্রুপপর্বের বাধা পেরুতে না পারার দুঃখটা ভুলিয়ে দেওয়াই আপাতত বাংলাদেশের প্রথম কাজ।