এমিরেটস স্টেডিয়ামের গেরো কাটবে লিভারপুলের?
গত মৌসুমের শেষার্ধে দুর্দান্ত হয়ে ওঠা গানাররা প্রাক মৌসুমেও ছিল অসাধারণ। ১১ বছর ধরে সোনার হরিণ হয়ে থাকা লীগ এবার চাই প্রফেসরের। কিন্তু ফেভারিট হিসেবে প্রিমিয়ার লীগের মৌসুম শুরু করেও আর্সেনাল দুই ম্যাচে আশানুরূপ কিছু করে দেখাতে পারেনি। শুরুতেই ২-০ গোলে হেরেছে ওয়েস্ট হ্যামের কাছে, পরের ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসের সাথে ২-১ গোলে জিতে তিন পয়েন্ট পেলেও আত্মঘাতী গোলের অবদান ছিল সেই জয়ে। তিনটি প্রাক মৌসুম টুর্নামেন্টে জিতলেও লীগে কি করে তাই দেখার বিষয়!
অপরদিকে, আলোচনায় না থাকা রজার্স দুই ম্যাচেই দলকে এনে দিয়েছেন জয়। কিন্তু নিজেদের প্রথম বড় ম্যাচে আর্সেনালের সাথে কি করে রজার্সের লিভারপুল, তার দিকেই থাকবে সবার চোখ।
আরও একবার এমিরেটসে জয়শুন্য থেকে মাঠ ছাড়বে অল রেডরা নাকি পাশার দান বদলে দিয়ে লীগের দুর্দান্ত সূচনা ধরে রাখবেন বেনটেকে-কৌটিনহোরা? তার আগে দেখে নেওয়া যাক, ম্যাচের আগে দু'দলের অবস্থা।
আর্সেনালঃ
সম্ভাব্য ফর্মেশনঃ ৪-২-৩-১
প্রথম ম্যাচেই ভুল করে দলকে বিপদে ফেলা গোলরক্ষক চেক এ ম্যাচেও থাকবেন। অনেক বছর চেলসিতে কাটানোর পর হঠাৎ আর্সেনালের খেলার সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে চেককে। তবে তিনি বড় ম্যাচে বরাবরই সেরাদের একজন।
ডিফেন্সে কোসিয়েলনি এবং মার্টেসেকার জুটি গত দুই মৌসুমের মত এখনো পুরোপুরি দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। তবে আর্সেন এই অভিজ্ঞ জুটির উপরই আস্থা রাখবেন। রাইট ব্যাক হিসেবে স্প্যানিশ ব্যালেরিন এবং লেফট ব্যাক হিসেবে আরেক স্প্যানিশ মনরেয়ালের প্রথম একাদশে থাকা নিশ্চিত।
ডিফেন্সের সামনে ঢাল হিসেবে থাকবেন কোকুলান আর রামযে। রামযের রক্ষণভেদী পাস বা হঠাৎ করে যেকোন রক্ষণকে হতভম্ব করে নেওয়া দৌড়গুলো ওয়েঙ্গারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
আক্রমণভাগে দলকে নেতৃত্ব দেবেন মেসুত ওজিল। সাথে থাকবেন গেল মৌসুমে ২৬ গোল করে ইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করা অ্যালেক্সিস সানচেজ এবং ক্যাযোরলা। তবে ক্যাযোরলার বদলে মধ্যভাগে আরো বেশি গতি সঞ্চার করতে ওয়েঙ্গার নামাতে পারেন চেম্বারলিনকে।
আর ফরোয়ার্ড হিসেবে গত ম্যাচেই গোল করা ফরাসী অলিভিয়ের জিরুকে দেখা যেতে পারে।
বদলি হিসেবে জিরুর বদলে ওয়ালকট, রামযের বদলে নামতে পারেন আরটেটা।
সাসপেনশন এবং ইনজুরিঃ কোন সাসপেনশন সমস্যা নেই গানারদের। গোড়ালিতে চোট পাওয়া তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যাক উইলশেয়ার এ ম্যাচেও থাকবেন না; সেরে উঠতে আরও ৩ সপ্তাহ লাগতে পারে। আরও থাকছেন না ড্যানি ওয়েলব্যাক। এই স্ট্রাইকারের ফিরতে আরও এক মাস লাগবে।
দু'দলের সম্ভাব্য ফর্মেশন। ছবি সৌজন্যঃ দ্য গার্ডিয়ান
লিভারপুলঃ
সম্ভাব্য ফর্মেশনঃ ৪-২-৩-১
গোলবারে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে মিনোলে থাকবেন। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে স্কারটেল ও লভরেন। লেফট ব্যাক হিসেবে জো গোমেজ আর রাইট ব্যাক হিসেবে মৌসুমের শুরুতেই নজরে আসা ক্লাইন থাকবেন একাদশে।
হোল্ডিং মিডফিল্ডে হেন্ডারসন এবং মিলনার থাকবেন। লিভারপুল অধিনায়কের হালকা চোট থাকলেও রজার্স এরকম বড় ম্যাচে তাকে প্রথম একাদশে নামাবেন।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে মাঝে দলের নয়নভোমরা কৌটিনহো আক্রমণ সাজাবেন, তার ডান পাশে থাকবেন গতিশীল উইঙ্গার ইবে; আরেক দিকে কে থাকছেন বলা মুশকিল। লালানা বা গ্রীষ্মের দলবদলে আসা ব্রাজিলিয়ান ফিরমিনোর মধ্যে একজনকে বেছে নেবেন রজার্স। সেক্ষেত্রে সুযোগটা বেশি অভিজ্ঞ লালানার।
এই তিনজনের সামনে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন গোলের মধ্যে থাকা বেলজিয়ান তারকা বেনটেকে।
বদলি হিসেবে নামতে পারেন ওরিগি এবং ইংস; সাথে ফিরমিনো।
সাসপেনশন এবং ইনজুরিঃ লিভারপুলেরও কোন সাসপেনশন নেই। তবে চোটের কারণে ডিফেন্ডার ফ্ল্য্যানেগান, মিডফিল্ডার জো অ্যালেন এবং ফরোয়ার্ড স্টারিজকে পাবেন না রজার্স। সাথে দলের অধিনায়ক হেন্ডারসন হালকা চোট পেয়েছেন পায়ে। তার মাঠে নামা নিয়ে কিছুটা সংশয় আছে।
নজরে রাখবেন যাদেরঃ
গেল মৌসুমে দলকে এফএ কাপ এবং চিলির হয়ে কোপা আমেরিকা জিতে আসা সানচেজ এবং কৌটিনহো দুজনকেই রাখতে হচ্ছে নজরে। এ দুজনের পারফরম্যান্সের ওপর অনেকটা নির্ভর করবে ম্যাচের ফলাফল।
সানচেজের উইং ধরে দৌড়, দূরপাল্লার শট বা বক্সের ভেতরে অল্প জায়গা পেলেই সেখান থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করা ভোগাতে পারে লিভারপুলকে। কৌটিনহো গত মৌসুমে ছিলেন প্রিমিয়ার লীগের সেরা ৩ খেলোয়াড়ের একজন। এ মৌসুমেও তার নমুনা দেখানো শুরু করেছেন তিনি। তাকে রুখতে পারলে আর্সেনালের জয় অনেকটাই নিশ্চিত।
পরিসংখ্যানের আলোয়ঃ
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, লিভারপুল-আর্সেনাল দ্বৈরথের অবস্থা।
মোট ম্যাচঃ ২১৯
লিভারপুলের জয়ঃ ৮৩
আর্সেনালের জয়ঃ ৭৯
ড্রঃ ৫৭
প্রিমিয়ার লীগঃ
মোট ম্যাচঃ ৪৬
লিভারপুলের জয়ঃ ১৬
আর্সেনালের জয়ঃ ১৫
ড্রঃ ১৫
বাড়তি তথ্যঃ
- গত ৭ প্রিমিয়ার লীগ ম্যাচে লিভারপুলের কাছে মাত্র ১ বার হেরেছে আর্সেনাল (জয় ৪, ড্র ২)।
- জিরু নিজের শততম লীগ ম্যাচ খেলতে নামবেন কাল। ৯৯ ম্যাচে গোল করেছেন ৪২টি। শুধুমাত্র থিয়েরি অরি, ইয়ান রাইট এবং আদেবায়োর ক্লাবের হয়ে প্রথম ১০০ ম্যাচে তার চেয়ে বেশি গোল করেছেন।
- এমিরেটস স্টেডিয়ামে ১২ ম্যাচে মাত্র ১ বার জিতেছে অল রেডরা। সেটাও ৪ বছর আগে। সাথে আছে গত মৌসুমেই ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার নজির।