• বিপিএল ২০১৯
  • " />

     

    ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে বিপিএলে!

    ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে বিপিএলে!    

     

    সকালের ঘুম তখনও ঠিকমতো ভাঙেনি। ঘুম ঘুম চোখেই দেখলেন, এজেন্টের ফোন এসেছে। ফোনটা ধরেই প্যাট ব্রাউন রীতিমত অবাক, বিপিএলের আগামী আসরে তাকে দলে নিয়েছে সিলেট সিক্সার্স! প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার এই সংবাদে খুশি তো হয়েছিলেন বটেই, ব্রাউনকে ঘিরে ধরেছিল ছোট্ট একটি দুশ্চিন্তাও। বিপিএল খেলতে গেলে তো করতে পারবেন না বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, ওই সময় আছে পরীক্ষাও। তাহলে কী উপায়? অনেক ভেবে চিন্তে ব্রাউন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়েই বাংলাদেশে আসবেন বিপিএল খেলতে।

    বয়স ২০ ছুঁয়েছে দুই মাস আগে। ইংল্যান্ডের অন্য দশটা তরুণের মতো ব্রাউনও নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের গন্ডি পাড়ি দিয়ে পড়ছেন উরসস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। পড়াশুনার পাশাপাশি ব্রাউন ক্রিকেটও খেলেন নিয়মিতই, ডানহাতি মিডিয়াম পেসার তিনি। উরসস্টারশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেছেন ৫টি, তবে খুব আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি। তবে কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে তার ৩১ উইকেটের সুবাদেই চ্যাম্পিয়ন হয় উরসস্টারশায়ার। ব্রাউনের নামটাও ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে, ক্লাব অধিনায়ক মঈন আলি তো তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার সুযোগ আসতে পারে, এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল।

    জাতীয় দলে সুযোগ না এলেও সুযোগ এসেছে বিপিএলে খেলার। বিদেশি ক্রিকেটারদের তালিকায় তাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে সিলেট। ইএসপিএনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ব্রাউন স্বীকার করলেন, এত দ্রুত বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ পাবেন সেটা আশা করেননি, ‘আমি সব টুর্নামেন্টের ড্রাফটের দিনক্ষণ লিখে রেখেছিলাম, শুধু বিপিএলেরটা ছাড়া! রবিবার সকালে আমার এজেন্টের ফোনেই জানতে পারলাম, সিলেট আমাকে দলে নিয়েছে। আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। এরকম একটা লিগে খেলতে যাব, এটা ভেবে সত্যিই উচ্ছ্বসিত।’

    বিপিএলে সুযোগ তো পেলেন, কিন্তু জানুয়ারিতে যে ব্রাউনের ক্লাস-পরীক্ষা পুরদমে চলবে! ব্রাউন বলছেন, যত যাই হোক এই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করবেন না, ‘আসলে আমি জানি না কী করবো! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করতে হবে এই ব্যাপারে। আমি দেশ ছাড়ার আগে সব গুছিয়ে যেতে চাই। চেষ্টা করব সেভাবেই সব ঠিক করার। যত যাই হোক, এই সুযোগটা আমি ছাড়ছি না!’

     

     

    সিলেটে সতীর্থ হিসেবে ব্রাউন পাবেন ডেভিড ওয়ার্নার, সোহেল তানভীর, মোহাম্মদ ইরফান, আন্দ্রে ফ্লেচারদের মতো অভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারদের। একাদশে এবার সর্বোচ্চ চারজন বিদেশি খেলাতে পারবে বিপিএলের দলগুলো। এতো তারকার মাঝে তার সুযোগও আসবে, বিশ্বাস ব্রাউনের, ‘প্রায় এক মাস ধরে এই টুর্নামেন্ট হবে। আশা করি কয়েক ম্যাচের জন্য হলেও আমি খেলার সুযোগ পাব। এটাই আসলে পেশাদার ক্রিকেট। সুযোগ এলেই সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। বিপিএলে ভালো খেললে আইপিএল, পিএসএলে খেলার পথ সুগম হবে।’

    বিপিএলে ব্রাউনদের কোচ থাকবেন ওয়াকার ইউনুস। যদি মাঠে নামার সুযোগ নাও পান, তাও ওই এক মাসের অভিজ্ঞতা তার ক্যারিয়ারকে অনেক এগিয়ে নেবে বলেই ধারণা ব্রাউনের, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সুবিধা হচ্ছে, এখানে হারানোর কিছুই নেই। যদি আপনি পুরোটা সময় দলের জন্য পানি বহনও করেন, তাও সেটা কাজে দেবে। পুরো বিশ্ব থেকে ক্রিকেটাররা আসবে খেলতে, তাদের সাথে লম্বা একটা সময় কাটানো যাবে। টুর্নামেন্ট শেষে যখন ইংল্যান্ডে ফিরব, তখন সেই অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক এগিয়ে রাখবে।’

    মুখে বললেও বিপিএলে যেন বেঞ্চে বসে থাকতে না হয়, সেটা নিশ্চয়ই মনে মনে প্রার্থনা করছেন ব্রাউন। ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে খেলতে এসে কি কেউ পানি টানতে চাইবে?