• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    এমেরির আর্সেনালকে দেখল লিভারপুল

    এমেরির আর্সেনালকে দেখল লিভারপুল    

    নিরপেক্ষ সমর্থকদের জন্য দারুণ উপভোগ্য, ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচ দেখেও যে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায় সেই অনুভূতিটা বোনাস। এমিরেটসে দিনশেষে জেতেনি কেউ, লিভারপুল হতাশ হতে পারে। এক পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠেছে তারা, ম্যানচেস্টার সিটি নিজেদের  ম্যাচে জিতে গেলে দুই পয়েন্টে পিছিয়ে পড়তে হবে লিভারপুলকে। তবে আর্সেনালের খুশিই হওয়ার কথা। শেষদিকে গোলে সমতা ফেরানোর আনন্দের জন্যই নয় কেবল। উনাই এমেরির দল একটা বড় পরীক্ষায় পাস করেছে লিভারপুলের বিপক্ষে। নতুন কোচের অধীনে আর্সেনাল শুরু করেছিল দুই হার দিয়ে, এরপর লিগে টানা ৮ ম্যাচ জিতেছে তারা। বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কেমন করবে আর্সেনাল, সেই সংশয় ধুয়ে মুছে গেছে এই ম্যাচের পর। এমেরির আর্সেনালের হার না মানা মনোভাবেই হার এড়িয়েছে আর্সেনাল, ৮১ মিনিটে আলেক্সান্ডার লাকাজেতের দারুণ এক গোলে।

    লিভারপুল অবশ্য নিজেদের কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতে পারে অন্য কারণে। প্রথমার্ধে সাদিও মানে জালে বল পাঠিয়েও গোলবঞ্চিত হয়েছেন রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে। রবার্তো ফিরমিনোর শট বারপোস্টে লেগে ফেরত আসে মানের কাছে, মানেও বল পুরে দেন আর্সেনালের গোলে। কিন্তু রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তে আর তখন এগিয়ে যাওয়া হয়নি লিভারপুলের। তারও আগে থেকেই অবশ্য দুই দলের খেলা রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছিল। এন্ড টু এন্ড ফুটবলে চোখ পড়ছিল বেশি দুই প্রান্তের গোলরক্ষকদের ওপর। প্রথমার্ধে দুইজনই ভুল করেছেন, দুইজনই বেঁচে গেছেন, আবার ভালো সেভ করে দলকে ম্যাচে পিছিয়েও যেতে দেননি, বার্নড লেনো আর অ্যালিসনকে পুরো ম্যাচেই জ্বালিয়ে মেরেছেন দুই দলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা।  ২৩ মিনিটে ভার্জিল ভ্যান ডাইকের ভলি ঠেকিয়ে কাজ শুরু করেন লেনো। পরের মিনিটেই আবার অ্যান্ড্রু রবার্টসনের শটে নিয়মিত একটি সেভ করতে হয় তাকে। মিনিট চারেক পর খেলা অন্যপ্রান্তে, এবার অ্যালিসন ফেরান বাম দিক থেকে আসা একটি ক্রস, ফিরতি বলে অবামেয়াংকে আর সুযোগই দেননি তিনি। পরের মিনিটে অবশ্য আর্সেনালের আক্রমণ আটকাতে অ্যালিসনকে আর সেভ করতে হয়নি, কঠিন অ্যাঙ্গেল থেকে চেষ্টা করেছিলেন আলেক্সান্ডার লাকাজেত। অ্যালিসন দেখে শুনেই ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু লাকাজেত সংকেতটা দিয়েই রেখেছিলেন ২৯ মিনিটে।



     

    প্রথমার্ধের শেষদিকে গিয়েও আবারও সেই দুই গোলরক্ষকের গল্প। প্রথমে এগিয়ে এসেছিলেন অ্যালিসন, ডিবক্সের ভেতর ছিলেন হেনরিখ মিখিতারিয়ান। উড়ে আসা বলে হেড করার আগেই মিখিতারিয়ানের কাছ থেকে বলের দখল পেতে চেয়েছিলেন অ্যালিসন। ভুল করতে করতেও করেননি, বেঁচে গেছেন সেই দফায়। ৪৫ মিনিটে আরও বড় বাঁচা বাঁচলেন লেনো, সেটপিস থেকে এগিয়ে গিয়েছিলেন ডিবক্সের শেষ মাথায়। তারপর বলের ফ্লাইট মিস করেছেন, ভার্জিল ভ্যান ডাইক ঠিকিঠাক হেড করেছিলেন, কিন্তু বারপোস্টে আটকে গেছে তার গোলভাগ্য। লেনো অবশ্য খুব বেশিক্ষণ স্বস্তি পাননি। ৬১ মিনিটে মানের ক্রস ধরতে ভুল করলেন, রব হোল্ডিংয়ের গায়ে লেগে বল গেল জেমস মিলনারের কাছ থেকে। ওপেন প্লেতে ২০১৬ সালের পর আর গোল করেননি মিলনার। প্রায় আড়াই বছর পর তাই করলেন, স্পটকিক নেওয়ার কাছাকাছি জায়গা থেকে আর মিস করলেন না। গোল করে এগিয়ে নিলেন দলকে লিভারপুল অধিনায়ক। 

    উনাই এমেরি শুরু থেকেই এমিরেটসের সমর্থন কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। গোল হজমের পর দলকে উজ্জীবিত করার দিকেই মন দিলেন আরও। দুই মিনিটের মাথায় লুকাস তোরেয়েরা প্রায় শোধও করে দিয়েছিলেন গোল। অ্যালিসন বাধা পেরুতে পারেননি তিনিও। ৬৯ আর ৭৪ মিনিটে অবশ্য খেলাটা নিজেদের পকেটে পুরে ফেলার দারুণ দুইটি সুযোগ ছিল লিভারপুলের কাছে। মোহাম্মদ সালাহর ক্রস অল্পের জন্য নাগালে পাননি মানে। পরেরবার কর্নার থেকে ভ্যান ডাইককে আবারও গোলবঞ্চিত করেন লেনো। সেটা হয়ত ম্যাচের সেরা সেভ হয়েই থাকবে।

    মিখিতারিয়ানকে নামিয়ে এমেরির অ্যালেক্স ইওবিকে নামানোর সিদ্ধান্তটাই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। মাঠে নেমেই ইওবির ক্রস বিপদের কারণ হয়েছিল লিভারপুলের জন্য। অবশ্য যাকে উদ্দেশ্যে করে ইওবি ক্রস করেছিলেন সেই ওজিল বলের নাগালই পাননি। অবশেষে ৮১ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত সেই গোলের দেখা পেল আর্সেনাল। হয়ত প্রাপ্যও ছিল তাদের। ইওবির থ্রু বল রিসিভ করে গোলরক্ষকের কাছ পর্যন্ত গিয়েও শট করলেন লাকাজেত। পেছনে ফিরলেন, এরপর নিখুঁত ফিনিশে অ্যালিসনকে কোনো সুযোগ না দিয়ে করলেন দারুণ এক গোল। 

    আরেক বদলি জের্দান শাকিরির পাসও অবশ্য আরেকবার ম্যাচের রঙ বদলে দিতে পারত। শাকিরি রাইট উইং থেকে তাড়াতাড়ি বল ছেড়েছিলেন মানের কাছে, ডিবক্সের বাইরে থেকে মানে সুযোগ বুঝেই নিয়েছিলেন শট। কিন্তু প্লেসমেন্ট ঠিক হয়নি, তাই জবাবটাও আর দেওয়া হয়নি মানের। লিভারপুল থেকেছে অপরাজিতই, কিন্তু সবকিছু আসলে ছাপিয়ে গেছে এমেরির আর্সেনালের ফিরে আসার লড়াই।