• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    ১৭ উইকেটের দিনে বাংলাদেশের লিড ১৩৩

    ১৭ উইকেটের দিনে বাংলাদেশের লিড ১৩৩    

    চট্টগ্রাম টেস্ট
    দ্বিতীয় দিন, স্টাম্পস
    বাংলাদেশ ৩২৪ ও ৫৫/৫*
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৬ 


    জোরে একটা নিশ্বাস নিন। শান্ত হোন। চট্টগ্রাম টেস্টে ১৭ উইকেটের দিনের গল্পটা শুনতে আপনার একটু প্রস্তুতি দরকার, দরকার একটু ধৈর্যও। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে, দ্বিতীয় ইনিংসের অর্ধেকও শেষ হওয়ার আগে শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসও। আগের দিনই পিচ ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল, স্পিনারদের জন্য তার কাছে আছে অনেক কিছুই। সেই অনেক কিছু পরিণত হয়েছে ১৭ উইকেটে। দ্বিতীয় দিনশেষে বাংলাদেশের লিড ১৩৩ রানের, তবে সেটা কি যথেষ্ট? এই প্রশ্নের উত্তর অজানা। স্পিনাররা এখানে ভয়ঙ্কর, তবে হেটমায়ার বা ডওরিচের দুই ধরনের ইনিংস দিতে পারে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিতও। 

    অভিষেকে ইতিহাস গড়েছেন নাঈম, সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে প্রথম টেস্টে নিয়েছেন ৫ উইকেট। প্রত্যাবর্তনের টেস্টে ৩ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। শিমরন হেটমায়ার খেলেছেন ৪৭ বলে ৬৩ রানের আগুনে ইনিংস, শেন ডওরিচ দেখিয়েছেন কিভাবে টিকে থাকতে হয়, ৬৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এরপর বাংলাদেশ নিজেদের আবিষ্কার করেছে পুরোনো পরিস্থিতিতে, চাপ কমাতে গিয়ে যেখানে বেশি চাপে পড়ে গেছেন ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের লিড নেওয়ার পর ৫৫ রানে ৫ উইকেট নেই বাংলাদেশের, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে অপরাজিত মেহেদি, এখনও ব্যাটিং করা বাকি মাহমুদউল্লাহর। 

    দ্বিতীয় ইনিংসে কেমার রোচের এক ওভারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকিটা করেছেন তিন স্পিনার- জোমেল ওয়ারিকান, রসটন চেজ ও দেবেন্দ্র বিশু। ওয়ারিকানকে অফস্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে বাঁধটা খুলে দিয়েছেন ইমরুল। আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে স্লিপে সৌম্য ক্যাচ দিয়েছেন চেজের বলে। মুমিনুল-মিঠুনে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছিল বাংলাদেশ, তবে চেজের সোজা হওয়া বলে ব্যাকফুটে গিয়ে টাক করতে যাওয়া মুমিনুল হয়েছেন এলবিডব্লিউ। ওয়ারিকানকে স্লগ করতে গিয়ে মিড-উইকেটে সাকিব দিয়েছেন ক্যাচ, আর বাংলাদেশের ‘অলিখিত’ নিয়ম মেনে শেষের দুই ওভার আগে বিশুর বলে ক্রিজে বন্দি হয়ে বোল্ড মিঠুন, যিনি দুইবার বেঁচেছিলেন রিভিউয়ে। সারাদিনে রিভিউ হয়েছে ১১টি, স্পিনাররা কঠিন করে তুলেছিলেন আম্পায়ারদের জীবনও। 

    এ উইকেটে টার্ন আছে বড় বড়, সঙ্গে অনিয়মিত বাউন্স ব্যাটসম্যানের জীবন করে তুলেছে দুর্বিষহ। শেষবেলায় তো প্রতি বলেই যেন উইকেটের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল। প্রথম ইনিংসের চিত্র বদলে দেওয়া গ্যাব্রিয়েল তাই বোলিং-ই করেননি এখনও, আর মোস্তাফিজ প্রথম ইনিংসে করেছেন ২ ওভার। এই বাঁহাতি পেসারের অবশ্য দরকার পড়েনি, চার স্পিনার মিলেই সেরেছেন কাজ। 

     

    ৫ উইকেট নিয়ে দৃশ্যপটে ছিলেন নাঈম, বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারানোর আগে/বিসিবি

     

    কার্লোস ব্রাথওয়েট ও কাইরন পাওয়েলের শুরুটা ছিল দৃঢ়ই। ১০ ওভার খেলার পর তাইজুলের বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ পাওয়েল, এর আগে বেঁচেছিলেন একবার রিভিউ নিয়ে। পরের ওভারে সাকিব এলেন, দেশের মাটিতে প্রায় দেড় বছর পর খেলতে নেমে প্রথম বলেই বাজিমাত। লেগ স্টাম্পের ঠিক বাইরে পড়া বলে বোকা বানালেন শেই হোপকে, টার্ন আর বাউন্স বুঝতেই পারেননি হোপ। সেই ওভারেই ঘটনার ঘনঘটা, সুনীল আম্রিস মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই ফিরে যেতে পারতেন। কিন্তু মুশফিক কঠিন ক্যাচটা রাখতে পারেননি স্লিপে। শেষ বলে আবার হাসি সাকিবের, এবার সামনে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্লিপে সৌম্যকে ক্যাচ তুলে দিলেন ব্রাথওয়েট। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধসের মুখে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

    চেজ-আমব্রিসের জুটি সেটা সামাল দিচ্ছিল, ব্রেকথ্রু এনেছেন অভিষিক্ত নাঈম। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওভারে নাঈমের প্রথম শিকার সামনে বাড়িয়ে খেলা চেজ, ব্যাট-প্যাডে যিনি ধরা পড়েছেন শর্ট লেগে। এরপর আমব্রিস, দুইবার রিভিউ নিয়ে বাঁচার পর (এর মাঝে একটি তো ছিল ডাবল রিভিউ- আম্পায়ার রেফারেল স্টাম্পডের জন্য, বাংলাদেশের রিভিউ ছিল কট বিহাইন্ডের জন্য) টার্ন করা বলে ব্যাকফুটে গিয়ে এলবিডব্লিউ। 

     

    বাংলাদেশও পড়েছে এমন দশায়/ক্রিকইনফো, গেটি ইমেজেস

    তার আগেই এসেছেন হেটমায়ার। ভাবভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল, চিন্তা-ভাবনা অন্যরকমের তার। নাঈমকে চার মেরে শুরু করলেন, তাইজুলকে মাঝে মারলেন টানা দুই ছয়। এক বল রক্ষণাত্মক ভাবে খেলেন তো পরের বলেই আক্রমণ। তবে এভাবে খেলার ঝুঁকিটা তো থেকেই যায়, হেটমায়ার অবশ্য আউট হলেন স্পিনারের দারুণ এক ডেলিভারিতেই। অফস্পিনারের পারফেক্ট ডেলিভারির জন্য যা দরকার, মিরাজের সেই বলে হলো সবই, আর ফরোয়ার্ড ডিফেন্সে আসা হেটমায়ার মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিলেন ৪৭ বলে ৬৩ রানে। 

    বিশু আর রোচ এলবিডব্লিউ এরপর নাঈমের বলে, রোচের ডিফেন্স চিড়ে ঢুকে পড়া বলে তাকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করলেন নাঈম। এতকিছুর ভীড়ে একদিকে ছিলেন সাতে নামা ডওরিচ। হেটমায়ারের ইনিংস, বাংলাদেশী স্পিনারদের বিশাল টার্ন- কিছুই যেন স্পর্শ করছিল না তাকে। সুযোগ বুঝে ৩ ছয় মেরেছেন, তবে চার মাত্র দুইটি। শেষ পর্যন্ত ছিলেন অপরাজিতই। সাকিবের গ্যাব্রিয়েলকে আউট করার আগে শেষ উইকেটে ডওরিচ যোগ করেছেন ২৫ রান, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যার মূল্যও এখন অনেক। 

    তার আগে তৃতীয় দিন সকালের শুরুটা খারাপ ছিল না তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের জন্য। দুই পেসার কেমার রোচ ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের চার ওভার পার করে দিয়েছিলেন দুজন, যোগ করে ফেলেছিলেন ৮ রানও। কিন্তু পঞ্চম ওভারে জোয়েম ওয়ারিকান এসেই সব গোলমাল করে দিলেন। এক ওভারেই নিলেন তাইজুল ও মোস্তাফিজের দুই উইকেট, বাংলাদেশ তাই ৩২৪ রানেই অলআউট।