তাইজুলের ছয়ে নয় বছর পর ও. ইন্ডিজকে হারাল বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম টেস্ট
বাংলাদেশ ৩২৪ ও ১২৫ (মাহমুদউল্লাহ ৩১, বিশু ৪/২৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৬ ও ১৩৯ (আমব্রিস ৪৩, তাইজুল ৬/৩৩)
বাংলাদেশ ৬৪ রানে জয়ী
আরেকটি উইকেট তাইজুলের/বিসিবি
তখন অনেক কিছুই আলাদা ছিল। ২০০৯ সালে সেন্ট জর্জেসে ক্যারিবীয়দের হারানো সেই ম্যাচ থেকে এই ম্যাচে খেলেছেন শুধু সাকিব, ইমরুল, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও কেমার রোচ। নয় বছরে বদলে গেছে অনেক কিছুই, মাঝে অধিনায়কত্ব হারিয়ে আবার ফিরে পেয়েছেন সাকিব। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ জিতেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বৃত্তপূরণের আরও দুইটা বিন্দু যোগ করলো বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ও দেশের মাটিতে প্রথম জয় পেল তারা। চট্টগ্রামে তাইজুল ইসলামের ছয় উইকেট তৃতীয় দিন চা-বিরতির আগেই নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের ৬৪ রানের জয়।
আগেরদিন সন্ধ্যায় ৫৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে থাকা বাংলাদেশ এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লক্ষ্য দিতে পারলো ২০৪ রানের। চট্টগ্রামের এ উইকেট ব্যাটসম্যানদের স্পিন-টেকনিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেবে, নিশ্চিতই ছিল সেটা, সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তিশালী স্পিন আক্রমণে কাজটা সহজ হওয়ার কথাও ছিল না উইন্ডিজের জন্য। ৯ম উইকেটে সুনীল আমব্রিস ও জোমেল ওয়ারিকানের ৬৩ রানের জুটি ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা কাজটা কঠিন শুধু নয়, বানিয়ে ফেলেছিলেন অসম্ভবই। তাইজুল-সাকিব-মিরাজদের স্পিনের যেন জবাবই ছিল না তাদের কাছে।
চাপ আলগা করতে প্রথম বলেই সাকিবকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গেলেন কাইরন পাওয়েল, বলের লাইন মিস করে হলেন স্টাম্পড। টেস্টে সাকিবের এটি ২০০ উইকেট, ৩০০০ রান ও ২০০ উইকেটের রেকর্ডও গড়ে ফেললেন তিনি। এরপর লাঞ্চের আগে ৭ বলে আরও ৩ উইকেট নেই। পরের ওভারে এসে সাকিবের শিকার শেই হোপ, সামনে বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে বলের লাইনে যেতে পারেননি, সেটা তার গ্লাভস ছুঁয়ে জমেছে মুশফিকের হাতে। লাঞ্চের আগের ওভারে তাইজুলের দুইটি আর্ম বলে বাড়লো উইন্ডিজের দুর্দশা, দুইটিতে এলবিডব্লিউ ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও রসটন চেজ।
লাঞ্চের পর শিমরন হেটমায়ার প্রথম ইনিংসের মতোই খুনে মেজাজে ছিলেন, সাকিবের এক ওভারেই নিলেন ১৭ রান। সাকিব নিজেকে সরিয়ে মিরাজকে আনলেন, হেটমায়ারের ১৯ বলে ২৭ রানের বিনোদন ফুরিয়ে এলো শীঘ্রই। মিরাজ লেংথ কমিয়ে এনেছিলেন, সেটাই তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দিয়েছেন হেটমায়ার।
অপেক্ষা রিভিউয়ের, যে অপেক্ষা পরে মধুরই হয়েছে বাংলাদেশের/বিসিবি
এরপর আবার তাইজুলের তিন আঘাত- ডওরিচ এলবিডব্লিউ, দেবেন্দ্র বিশু ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড, রোচ ফরোয়ার্ড ডিফেন্সে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ, যেটা বাংলাদেশ পেল রিভিউয়ে। তাইজুল পেলেন আরেকবার পাঁচ উইকেট। জয় এরপর সময়ের অপেক্ষা ছিল, সেটা বিলম্বিত করলো ওয়ারিকান-আমব্রিসের জুটি। আমব্রিস আবারও দেখানোর চেষ্টা করলেন, এ উইকেটে আদতে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়। ওয়ারিকানও খেললেন সেভাবেই, খুব ধীরগতির ইনিংস নয়, আবার হেটমায়ারের মতো অতি-আক্রমণও নয়। তবে অসম্ভবকে সম্ভব করা হলো না তাদের।
মিরাজের বলে ওয়ারিকানের মিসহিট মিডউইকেটে পেছনে দৌড়ে নিলেন সাকিব, ভাঙলো সে জুটি। তাইজুল এসে ফেরালেন আমব্রিসকে, বল তার ব্যাটে না লাগলেও আউট দিলেন আম্পায়ার, উইন্ডিজের রিভিউও ফুরিয়ে এসেছে আগেই। ফুরিয়ে এলো টেস্টটিও।
সকালে অবশ্য এ টেস্টের ভাগ্য ছিল অনিশ্চিতই। প্রথম ওভারে ওয়ারিকানকে চার মেরে মুশফিক দ্রুত রান তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পরের ওভারেই গ্যাব্রিয়েলের ভেতরের দিকে ঢোকা বলের লেংথ মিস করে হয়ে গেলেন বোল্ড, ১৯ রানে। ২০০ রানের লিড তখনও অনেক দূরের পথ বাংলাদেশের।
মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ এরপর দারুণভাবে করলেন ক্রিজের ব্যবহার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনারদের থিতু হতে দিচ্ছিলেন না তারা। মাহমুদউল্লাহ জীবন পেলেন, দুজনের ৩৭ রানের জুটিটা ভাঙলো বিশুর দুর্দান্ত লেগস্পিনে মিরাজ এজড হওয়ায়। এরপর নাঈম হাসানকে নিয়ে আরও ১৬ রান যোগ করলেন মাহমুদউল্লাহ। বিশুর বলেই ফিরলেন দুজন। তবে তার আগেই লিডে ২০০ পেরিয়েছে বাংলাদেশ।
তাইজুলরা পরে নিশ্চিত করেছেন, সেই লিডটা ছিল যথেষ্টর চেয়েও বেশি।