• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    নীরবেই রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছেন তাইজুল

    নীরবেই রেকর্ড ভেঙে যাচ্ছেন তাইজুল    

    ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তাঁর হাতে উঠতেই পারত। প্রথম ইনিংসেওই ৩৯ রান কতটা মূল্যবান, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে ম্যাচ শেষে। উইকেট অবশ্য প্রথম ইনিংসে পাননি, তবে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচের নামতা পড়তে ভুল হয়নি তাঁর। শেষ পর্যন্ত মুমিনুল হক ম্যাচসেরা হয়েছেন, তাইজুল ইসলামের অবশ্য তাতে মন খারাপ করার কথা নয়। দলের জয়ে বড় অবদান রাখতে পেরেছেন, সেটাই বড় প্রাপ্তি হিসেবে মানবেন। কিন্তু এই অবদান রাখতে রাখতেই তাইজুল যে একের পর সিঁড়ি টপকে যাচ্ছেন অনেকটা অলক্ষ্যেই।

    সাকিব আল হাসান না থাকলে তাঁর কাঁধ যে আরও চওড়া হয়ে যায়, সেই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন অনেক আগে থেকেই। নিজের অভিষেকের পর থেকে সময়ে সাকিবের উইকেট যখন ৭৯টি, এই সময়ে তাইজুলের উইকেট হয়ে গেছে ৯৪টি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে ১০০ উইকেট এখন পর্যন্ত শুধু দুজনের আছে- মোহাম্মদ রফিক এবং সাকিব। রফিকের সেটি পেতে লেগেছিল ৩৮ টেস্টে, আর সাকিবের সেজন্য খেলতে হয়েছিল ২৮ টেস্ট। তাইজুল দেশের মাটিতে সর্বশেষ তিন টেস্টে পেয়েছেন ২৫ উইকেট। এই গতিতে এগুলে পরের টেস্টে ‘সেঞ্চুরি’ না হলেই হবে বিস্ময়কর। না হলেও সাকিবের রেকর্ডটা ভাঙার সুযোগ তো পাচ্ছেনই।



    তবে স্বপ্নের এক বছরে যা পেয়েছেন, সেটা বাংলাদেশের আর কোনো বোলারই পাননি। এই বছর তাঁর ৬ টেস্টে হয়ে গেছে ৪০ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডও ভেঙে ফেলেছেন। ২০০৩ সালে মোহাম্মদ রফিক নিয়েছিলেন ৩৩ উইকেট, ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছিলেন সেবার বাঁহাতি স্পিনার। আর জেমি সিডন্সের অধীনে বাংলাদেশের স্ট্রাইক বোলার হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ২০০৮ সালে সাকিব নিয়েছিলেন ৩০ উইকেট। তাইজুলের সামনে সেটি আরও বাড়িয়ে নেওয়ার হাতছানি।

    এই বছরেই তাইজুলের চেয়ে বেশি উইকেট আছে তিন জনের। সবচেয়ে বেশি কাগিসো রাবাদার (৪৬টি), এর পরেই আছেন জেমস অ্যান্ডারসন (৪৩) ও দিলরুয়ান পেরেরা (৪১) । আজ পর্যন্ত এঁদের সবাই অবশ্য টেস্ট খেলেছেন তাইজুলের চেয়ে বেশি। পেরেরা ও রাবাদা খেলেছেন নয়টি করে ম্যাচ, আর অ্যান্ডারসন খেলেছেন ১২টি। তাইজুলের এই বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়ার রেকর্ডটা খুবই কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।

    সাকিব আল হাসানও ম্যাচ শেষে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সতীর্থকে, ‘ওর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, নিজের বোলিং নিয়ে ও অসম্ভব রকম পরিশ্রম করে। ও প্রথম ইনিংসে একটা উইকেট পেয়েছে, ওর বোলিংয়ের জন্য আমরা ড্রেসিংরুমে ওর অনেক প্রশংসা করেছি। সবাই বলেছি যে, প্রথম ইনিংসে ও-ই আমাদের সেরা বোলার ছিল, যদিও উইকেট পেয়েছে একটা। অনেক সময় হয় এমন যে, একটা বোলার খুব ভালো বোলিং করছে কিন্তু উইকেট পাচ্ছে না। অন্য দিকে একটা বোলারের একটা-দুইটা উইকেট টেকিং বলে হয়ে গেছে সেটাতেই উইকেট পেয়ে গেছে। আমি চাইব যে, সামনে একটা টেস্ট আছে সেটাতেও যেন ও এই ভাবেই বল করতে পারে। শুধু এক ইনিংস না দুই ইনিংসেই যেন পাঁচটা করে উইকেট পায়।’

    তাইজুল নিজে অবশ্য এসব অর্জন নিয়ে বরাবরই নিস্পৃহ। সিলেটে ম্যাচে ১০ উইকেট পাওয়ার পরও কথা বলতে হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা নিয়ে। এবার অবশ্য সেই আক্ষেপ নেই, তবে তাইজুল নিজের কাজটা করে চলছেন ঠিকই। কেউ খেয়াল করুক না করুক, একের পর এক পালক যোগ হচ্ছে তাঁর পালকে।