সাদমান-সাকিবের ফিফটিতে শক্ত ভিতের ওপর বাংলাদেশ
মিরপুর টেস্ট
প্রথম দিনশেষে
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২৫৯/৫* (সাদমান ৭৬, সাকিব৫৫*, মুমিনুল ২৯, মিঠুন ২৯, বিশু ২/৪০, রোচ ১/৩৮)
এরকম উইকেটে হয় মুমিনুল হকের মতো আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলতে হবে, অথবা সাদমান ইসলাম ও সাকিব আল হাসানের মতো ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। মুমিনুলের মতো ইনিংসের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা বড্ড বেশি, আবার টেকসইও নয়। বোর্ডে কিছু রান দিলেও সেটা ধরে রাখবে না ইনিংসের গতিপথ। সাদমান-সাকিবের ইনিংস বোর্ডে রান দেবে, সঙ্গে আগলে রাখবে ইনিংস। প্রথম দুই সেশনজুড়ে আলোচনায় ছিলেন সাদমান, বাংলাদেশ ওপেনার হিসেবে অভিষেকে সবচেয়ে বেশি ১৯৯ বলের ইনিংস খেলে। শেষ সেশনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিল সাকিবের স্বভাববিরুদ্ধ ধীরলয়ের ইনিংস, যোগ্য সমর্থন দিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। ৫ উইকেটে ২৫৯ রান, দিনশেষে খুশি হওয়ার কথা বাংলাদেশেরই। আঁটসাঁট বোলিং করে আরও বেশি উইকেট না পাওয়া উইন্ডিজ একটু হতাশই হবে। দ্বিতীয় দিনের শুরুটা নতুন মানসিকতায় করতে দ্বিতীয় নতুন বলটাও নেয়নি তারা।
সেই অর্থে ধস নামেনি বাংলাদেশ ইনিংসে, তবে প্রথম দিনই স্পিনাররা পেয়েছেন টার্নের দেখা, মিলছে বাউন্সও। ২৭ ওভার করেছেন উইন্ডিজ পেসাররা, দিন গড়ালে সে সংখ্যা কমে আসারই কথা ধীরে ধীরে। ৫ম ওভারেই এসেছেন স্পিনার। বাংলাদেশ তো প্রথমবারের মতো খেলছে স্বীকৃত পেসার ছাড়াই! বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান খেলাচ্ছে বাংলাদেশ, গুরুত্বপূর্ণ টসটা আবারও জিতেছেন সাকিব। এ উইকেটে প্রথম ইনিংসের স্কোরের ওপর নির্ভর করছে অনেককিছু, সেটা যতো বড় হবে, স্পিনাররা আক্রমণের জন্য পাবেন ততো বেশি রসদ।
সাদমানের সঙ্গে মিঠুনের জুটি পেরিয়েছে ফিফটি/বিসিবি
তবে তার আগে তো ব্যাটিং। সাদমান অভিষেকে খেললেন এ উইকেটের উপযুক্ত এক ইনিংস। ক্ষণিকের জন্য হলেও আপনি ধন্দে পড়ে যেতে পারেন, তামিম ইকবাল এই টেস্টে খেলছেন কিভাবে! সাদমান ইসলামের ব্যাটিংয়ের ইম্প্রেশন যেন এমনই! সৌম্য সরকারও সেটা দেখে একটু উজ্জীবিত হলেন কিনা, কে জানে। প্রায় দুর্লভ হয়ে আসা ওপেনিং জুটির ফিফটিটা অবশ্য উঁকি দিয়েও মিলিয়ে গেল, রসটন চেজের অফস্টাম্পের বাইরের বলে তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে সৌম্য ক্যাচ দেওয়ায়। আক্রমণাত্মক শুরু করেছিলেন মুমিনুল, তবে কেমার রোচের সেট-আপে ধরা দিয়েছেন। ভেতরের দিকে ঢোকা বলে হতাশ মুমিনুল অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে খেলেছেন হাফ-শট, লিডিং-এজে ধরা পড়েছেন মিডউইকেটে, কার্যত লাঞ্চের আগে শেষ বলে।
দ্বিতীয় সেশনে সাদমানের ধৈর্যশীল ইনিংসকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন মিঠুন, দুজনের জুটি পেরিয়েছিল ফিফটিও। একবার রান-আউট, আরেকবার শর্ট লেগে ক্যাচ থেকে বাঁচলেন মিঠুন, অবশ্য মূল্য দিতে পারলেন না সেসবের। সাদমানের সঙ্গে তার ৬৪ রানের জুটিটা ভাঙলো কুৎসিত এক শটে। পেছনের পায়ে গিয়ে বিশুকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিঠুন হলেন বোল্ড।
সাদমান অবশ্য থেকেছেন সুযোগের অপেক্ষায়। খুব আলগা বল না পেলে জোরের ওপর শট খেলেননি, নিজের জোনের মাঝে থেকেই বের করেছেন রান। চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরিটা খুব সম্ভবই মনে হচ্ছিল, বিশুর কম টার্ন করা বলটাতেই ঘটলো বিপত্তি। ইনসাইড দ্য লাইনে খেলতে গিয়ে তিনি হয়েছেন এলবিডব্লিউ।
শেষ সেশনে বাংলাদেশ হারিয়েছে ছয়ে নামা মুশফিকের উইকেট। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৪০০০ রান পূরণ করেছেন মুশফিক, সম্ভাবনা ছিল তামিমকে ছাড়িয়ে যাওয়ারও। তবে সেটা হয়নি শেরমন লুইসের দারুণ এক ইনসুইংয়ে। ফুললেংথে পড়া বলটা ঢুকেছে দারুণভাবে, মুশফিকের আলগা ডিফেন্স আরও এলোমেলো হয়ে গেছে তাতে।
বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ লম্বা, ধসের সম্ভাবনাও যেন বেড়ে যায় তাতে। সেরকম কিছু হতে দিলেন না সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। মাঝে ৬১তম থেকে প্রায় ১৮ ওভার ছিল বাউন্ডারিশুন্য, ৮০তম ওভারে মেরে সেটা কাটিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সাকিব অবশ্য একবার আউট হতে পারতেন, চেজের বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ভুল করেছিলেন। উইন্ডিজ রিভিউ নেয়নি, সে ভুলের মাশুলও দিতে হয়নি সাকিবকে। উলটো উইন্ডিজকেই এখন বাধ্য করছেন তাদের ভুলের মাশুল গুণতে।