মুশফিকের চার হাজার এবং তিন ঘোড়ার রেসের গল্প
মাইলফলকটা পেরিয়ে যেতে পারতেন চট্টগ্রাম টেস্টেই। দুই ইনিংস মিলে ৩১ রান করলেই হতো মুশফিকুর রহিমের, কিন্তু করতে পেরেছিলেন ২৩ রান। সেই আক্ষেপটা মিরপুরে এসে ঘোঁচালেন। তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ৪ হাজারি ক্লাবে ঢুকলেন। আর তিন হাজার থেকে চার হাজারে আসতে মুশফিকের সময় লেগেছে ২৮ ইনিংস। এই সময় তাঁর সঙ্গে ক্রিজে যিনি ছিলেন, সেই সাকিব আল হাসানও আছেন চার হাজারের কাছাকাছি। চোট বাধা না হলে তামিম ইকবালও ড্রেসিংরুমে থেকেই সতীর্থকে অভিনন্দন জানাতে পারতেন। তবে তামিম আগে ঢুকলেও তিন থেকে চার হাজারের টাইমিংয়ে মুশফিক তাঁকে ছাড়িয়ে গেছেন।
বয়স, ক্যারিয়ার হিসেব করলে সাকিব-তামিম-মুশফিক তিন জনের ক্যারিয়ার প্রায় সমান্তরালেই এগিয়েছে। মুশফিকের অভিষেক হয়েছিল বছর তিনেক আগে, তবে সাকিব-তামিমের অভিষেকের আগে তাঁর টেস্টও ছিল সাকুল্যে ছয়টি। এক হাজার রানের মাইলফলকটা তিন জনই অবশ্য প্রায় একই সময়ে ছুঁয়েছিলেন। ২০১০ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে তামিম ও মুশফিকের টেস্ট রান চার অঙ্ক পেরিয়ে গিয়েছিল। ঠিক এক সপ্তাহ পর দুজনের সঙ্গে সেখানে যোগ দিলেন সাকিবও। তবে ইনিংসের হিসেবে তামিমই ছিলেন এগিয়ে। তামিম যখন ৩০তম ইনিংসে সেটি ছুঁয়ে ফেলেছেন, সাকিব (৩৬) ও মুশফিক (৩৯) ছিলেন আরেকটু পিছিয়ে। আর ১ হাজার রান করতে হাবিবুল বাশারের লেগেছিল ৩২ ইনিংস।
এরপর তামিম চলার গতিটা একটু দ্রুতই বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাকিবকে মনযোগ দিতে হচ্ছিল বোলিংয়েও। ব্যাটিংয়ে তালটা সেভাবে রাখতে পারেননি। মুশফিকও গেছেন আরেকটু পিছিয়ে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাকি দুই সঙ্গীদের বেশ আগেই তাই দুই হাজার রান পেরিয়ে গেছেন তামিম। প্রথম এক হাজার রানের জন্য তামিমের লেগেছিল ৩০ ইনিংস, পরের এক হাজার রান করেছেন ২৪ ইনিংসেই। কাকতালীয়ই বটে, সেই দুই হাজার রান সাকিব-মুশফিক ছুঁয়েছেন একই টেস্টেই। তামিমের ঠিক ছয় মাস পর অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই জনই ঢুকে গেছেন দুই হাজারি ক্লাবে। সেখানে অবশ্য সাকিব একটু এগিয়ে। সাকিবের যখন ৫৯তম ইনিংস লেগেছিল, মুশফিককে খেলতে হয়েছিল ৬৭ ইনিংস। হাবিবুল এখানে আবার সাকিবের সঙ্গে সমতায়, ৫৯ ইনিংস লেগেছিল তাঁর।
তামিম যে সেই জোর কদমে হাঁটতে শুরু করলেন, এরপর বাকি দুই সঙ্গীর চেয়ে এগিয়ে গেছেন আরও। দুই হাজার রানের ঠিক দুই বছর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ঢুকে গেছেন তিন হাজারি ক্লাবে, এবার লেগেছে মাত্র ২২ ইনিংস। সব মিলে তামিমের ৭৬ ইনিংস বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ছিল, পরে ৪৭ ইনিংসে দুই হাজার করে যে রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন মুমিনুল হক। পাকিস্তানের সঙ্গে ওই সিরিজেই তো তামিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অনেক রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছিলেন।
তবে সাকিবও কাছাকাছিই ছিলেন। গত বছরের প্রায় পুরোটা সাদা পোশাক তুলে রাখার পর ইংল্যান্ডের সঙ্গে পরার সুযোগ পেলেন। শেষ পর্যন্ত সাকিবের সেই মুহূর্ত এলো ওয়েলিংটনে। ২১৭ রানের ইনিংসে ঢুকে গেলেন তিন হাজারি ক্লাবে। সেই অভিনন্দন সবার আগে পেয়েছিলেন মুশফিকের কাছ থেকেই। এবার সাকিবকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮৪তম ইনিংস পর্যন্ত, ৪৫তম টেস্টে এসে।
ওয়েলিংটনে ১৫৯ রান করে মুশফিকও চলে গিয়েছিলেন অনেকটা কাছাকাছি। কে জানে, চোট না পেলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টেই হয়তো সাকিবের সঙ্গী হয়ে যেতেন। এর পর প্রথম সুযোগেই সেই অর্জন হয়ে গেল, হায়দরাবাদে দিনের শেষ ওভারে ইশান্ত শর্মাকে চার মেরেই এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাকি দুজনের তুলনায় অপেক্ষাটা একটু বেশিই হয়েছে, ৯৫-তম ইনিংসেই মুশফিক ছুঁয়েছেন মাইলফলক। তবে হাবিবুল এখানে মুশফিকেরও পরে, ৯৭-তম ইনিংসে এসে তিন হাজার রান হয়েছিল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের।
দুই থেকে তিন হাজারের দৌড়ে যতটা দ্রুত ছিলেন তামিম, তিন থেকে চারের পথে কিছুটা হোঁচট খেয়েছেন। এই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অ্যান্টিগা টেস্টে ১০৬তম ইনিংসে এসে তামিম পেয়েছেন চার হাজার রান। তিন থেকে চার হাজারে পৌঁছাতে তামিমের সময় লেগেছে ৩০ ইনিংস। মুশফিক হায়দরাবাদের পর থেকে অবশ্য বড় ইনিংস পাচ্ছিলেন না, চার হাজারের পথেও পিছিয়ে গিয়েছিলেন খানিকটা। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেই পৌঁছে গেছেন কাছাকাছি। শেষ পর্যন্ত ১২৩তম ইনিংসে সেই দরজায় কড়া নেড়েছেন, হয়তো এই টেস্টে ছাড়িয়ে যেতে পারেন তামিমের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও।