মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে ক্ষত-বিক্ষত, স্পিন-বিষে নীল উইন্ডিজ
মিরপুর টেস্ট, দ্বিতীয় দিন
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫০৮ (মাহমুদউল্লাহ ১৩৬, সাকিব ৮০, রোচ ২/৬১, ব্রাথওয়েট ২/৫৭)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস* ৭৫/৫ (হেটমায়ার ৩২*, মিরাজ ৩/৩৬, সাকিব ২/১৫)
ঘন্টাখানেকের ব্যবধানে যেন বদলে গেল মিরপুরের উইকেটের খোলনলচে। যেখানে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ে ক্ষতবিক্ষত হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেখানেই সাকিব-মিরাজদের স্পিন-বিষ নীল করে ফেললো তাদের। উইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের যেন কোনো ধারণাই ছিল না, এই উইকেটে ব্যাটিং করতে হয় কিভাবে! আদতে এ সময়ের মাঝে উইকেট বদলে যায়নি, বরং ১৫৪ ওভার ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখেও উইন্ডিজরা যে শিক্ষা নেননি, সেটা বলাই যায়! সাকিব-মিরাজদের স্লাইডার তাই উত্তপ্ত ছুরির মতো ঢুকে গেল তাদের ভেতর দিয়ে। ফল- মাহমুদউল্লাহর দারুণ সেঞ্চুরিতে ৫০০ পেরুনো বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে ৪৩৩ রানে পিছিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাকি মাত্র ৫ উইকেট!
প্রথম ওভারে উইকেট হারানো উইন্ডিজ একসময় পরিণত হয়েছিল ৩০ রানে ৫ উইকেটে। প্রথম পাঁচজনই হয়েছেন বোল্ড, টেস্টের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বার ঘটলো এমন ঘটনা, ১২৮ বছরের মধ্যে ঘটলো প্রথমবার। আর সব মিলিয়ে এর আগে কখনোই প্রতিপক্ষের পাঁচজনকে বোল্ড করতে পারেননি বাংলাদেশী বোলাররা। দলে স্পেশালিস্ট পেসার নেই, নতুন বল নিলেন সাকিব-মিরাজ। দুজনই সফল। ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও কাইরন পাওয়েলের উইকেট একটা আরেকটার প্রতিবিম্ব প্রায়। সাকিবের বলে ব্রাথওয়েট, মিরাজের বলে পাওয়েল হলেন বোল্ড, স্লাইডার ঢুকলো স্টাম্পে, দুজনেরই ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে। আক্রমণকে একমাত্র উপায় মানলেন সুনীল আমব্রিস, সাকিবকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলতে এসে হলেন শুধু দিশেহারা। ইনসাইড দ্য লাইনে খেলতে গিয়েও ব্যর্থ হলেন চেজ, মিরাজের বলে। শেই হোপ অবশ্য নিজেকে একটু দুর্ভাগা ভাবতে পারেন, মিরাজের বলটা নেমেছিল বেশিই।
এ শুধু বোল্ডের দিন/বিসিবি
হেটমেয়ার-ডওরিচে একটু ধাতস্থ হলো উইন্ডিজ, তাদের ৪৫ রানের জুটি একটু বাতাস দিল দমবন্ধ অবস্থায়। রিভিউ নিয়ে বেঁচেও গেলেন হেটমেয়ার। তবে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে উইন্ডিজকে, সামনে এখনও দীর্ঘ বন্ধুর পথ তাদের! অথচ এ পথটাকেই মসৃণ বানিয়ে ফেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিব-লিটনরা। মাহমুদউল্লাহ পেলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি, শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেছেন ক্যারিয়ারসর্বোচ্চ ১৩৬ রান, শেষ তিন উইকেটে বাংলাদেশ তুলেছেন ১২৫ রান।
যে সম্ভাবনা গতকাল জাগিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম, আজ কাছাকাছি গিয়েছিলেন সাকিব, এমনকি লিটন দাসের খেলার ধরনেও মনে হচ্ছিল- ম্যাচের প্রথম সেঞ্চুরিটা পেতে পারেন তিনিও। সেটাই পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। আট বছর বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা তিনি দুই ইনিংস বিরতি করলেন তৃতীয়টি। তার ইনিংসটাই যেন বলে দেয়, বাংলাদেশের এদিনের ব্যাটিংয়ের গতিপথটা।
সকালে নতুন বল পেয়ে কেমার রোচ পরাস্ত করছিলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহকে। তারা পালটা আক্রমণেই দিলেন উত্তর। আগের দিন প্রথম ১০০ বলে মাত্র একটি চার মারা সাকিব আজ প্রথম ১৫ বলের মধ্যে মারলেন আরও পাঁচটি। ৮০-তে দ্রুত পৌঁছে থমকে গেলেন সেখানেই, টেস্টে ১১তম বারের মতো ৮০-তে গিয়েও সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না তার।
ক্যারিয়ারসর্বোচ্চ ইনিংস মাহমুদউল্লাহর/বিসিবি
লিটন এলেন, উইকেটকিপিংয়ের জন্য তাকে নেওয়া হয়েছে বলা হলেও পরে কিপিং গ্লাভস থাকল মুশফিকের কাছে। তবে লিটন তখন যেন হারানো রাজ্য ফিরে পেয়ে শুরু করেছেন রাজত্ব। শর্ট বা ফুললেংথে যা কিছুই পেয়েছেন, শাস্তি দিতে ছাড়েননি। ওয়ারিকানকে সুইপ করে এক ওভারে মেরেছেন দুই চার, পরে চেজকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে দারুণ একটা ছয়। সেই ওভারেই চেজকে চার মেরে পৌঁছেছেন ফিফটিতে, প্রায় ১০০ স্ট্রাইক রেটে। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ রান তুলেছেন ওভারপ্রতি প্রায় পাঁচ করে। অবশ্য লাঞ্চের পরপরই ব্রাথওয়েটকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৯২ রানের জুটির পর।
মাহমুদউল্লাহ খোলসে ঢুকে গেছেন এরপর। মিরাজের সঙ্গে ২৩ রানের জুটিতে তার অবদান ৪, তাইজুল ইসলামও আক্রমণ করছিলেন তার চেয়ে বেশি। চা-বিরতির আগে পরে দুজনের জুটিতে এলো ৫৬ রান, সেঞ্চুরিতে পৌঁছানোর আগে এ জুটিতে মাহমুদউল্লাহ বাউন্ডারি মারেননি একটিও। ২০৩ বলে পূর্ণ করেছেন সেঞ্চুরি, এরপর অবশ্য গিয়ার বদলে ৪২ বলে করেছেন ৩৯ রান।
২৬ রান করে ব্রাথওয়েটের বল তাড়া করতে গিয়ে এজড হয়েছেন তাইজুল। মাহমুদউল্লাহ তাতে দমেননি অবশ্য, শেষ ব্যাটসম্যান নাঈমকে নিয়ে যোগ করেছেন আরও ৩৬ রান। নাঈম করেছেন ১২, বাংলাদেশের ১১ জন ব্যাটসম্যানই প্রথমবারের মতো ছুঁয়েছেন দুই অঙ্ক।