তৃতীয় হোয়াইটওয়াশের আগে প্রথম ইনিংস ব্যবধানে জয়
দ্বিতীয় টেস্ট, মিরপুর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫০৮
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ১১১ ( হেটমেয়ার ৩৯, ডাওরিচ ৩৭; মিরাজ ৭/৫৮, সাকিব ৩/২৭ ) ও ২য় ইনিংস (ফলোয়িং-অন) ২১৩ (হেটমায়ার ৯৩, মিরাজ ৫/৫৯)
বাংলাদেশ ইনিংস ও ১৮৪ রানে জয়ী, সিরিজ ২-০তে জয়ী
মিরাজ নিয়েছেন ১২ উইকেট/বিসিবি
নিজেদের মাত্র ২য় টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ৭ম টেস্টে প্রথমবার পড়েছিল ফলো-অনে। প্রায় ১৮ বছর পর প্রতিপক্ষকে সেই দুইটা ফিরিয়ে দিতে পারলো বাংলাদেশ, মিরপুরে প্রথমবার প্রতিপক্ষকে ফলো-অন করানোর পর একদিনে ১৫ উইকেট নিয়ে প্রথমবার জিতল ইনিংস ব্যবধানে। সেই ১৫ উইকেটের ৯টি নিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ, ম্যাচে নিলেন ১১৭ রানে মোট ১২টি, বাংলাদেশের হয়ে যা সেরা বোলিং ফিগার। ‘ট্রায়াল বাই স্পিন’-এ মৃত্যুদন্ড উইন্ডিজের, সবচেয়ে বড় ঘাতক যেখানে মিরাজই। মিরপুরের জয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত হলো, নিশ্চিত হলো হোয়াইটওয়াশ, প্রতিপক্ষকে তৃতীয়বার, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয়বার 'ক্লিন-সুইপ' করলো বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এটি ৮ম বৃহত্তম পরাজয়, এশিয়ার মাটিতে এর চেয়ে বেশি ব্যবধানে তারা হেরেছে মাত্র একবার।
সকালটা ইঙ্গিত দিয়েছিল তেমন কিছুই। প্রথম ইনিংসে বাকি থাকা ৫ উইকেট হারাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সময় নিয়েছিল মাত্র ৫১ মিনিট। লাঞ্চের আগেই আরেকবার নামা উইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে যেন ইনিংসের নাম্বারটাই বদলে গেল শুধু, বাদবাকি সব থাকলো আগের মতোই। দুঃস্বপ্নের একটা সিরিজ কাটানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকে দিয়ে শুরু হলো তলানীর দিকে যাত্রা। তার উলটো পারফরম্যান্স ছিল সাকিবের, তার বলেই পেছনের পায়ে লেগে এবার এলবিডব্লিউ ব্রাথওয়েট, সিরিজে তার ট্যালি দাঁড়ালো ৪ ইনিংসে ১০ রান। মুশফিকের হাতে জীবন পাওয়া কাইরন পাওয়েল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মিরাজের বলে স্টাম্পড, ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসের খাতাটা খুলে বসলেন মিরাজ। এরপরের দুই উইকেট তাইজুলের, মিরাজ-সাকিবে যিনি কিছুটা আড়ালেই পড়ে গিয়েছিলেন! প্রথম ওভারেই নিচু হয়ে আসা বলে এলবিডব্লিউ আমব্রিস, রস্টন চেজ অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা কাট করতে গিয়ে কাভারে পরিণত হলেন মুমিনুলের দারুণ ক্যাচে।
লাঞ্চের আগে হোপকে নিয়ে সময়টা পার করেছিলেন শিমরন হেটমায়ার। এরপর শুরু করলেন বিনোদন। সাকিবের এক ওভারে তিনটিসহ মোট ছয় মারলেন নয়টি, ক্রিস গেইলের সঙ্গে এক ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি ছয়ের রেকর্ড এখন হেটমায়ারেরও। নবম বাউন্ডারিটা চার ছিল তার, এরপর মেরেছেন আরেকটি ছয়। ৫৮ বলে করেছেন ফিফটি, একাদশ বাউন্ডারিটা মারতে গিয়ে লং-অনে মিরাজের একাদশ উইকেটে পরিণত হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটা মিস করেছেন মাত্র ৮ রানের জন্য। ৪০ রানে মুশফিকের হাতে নাঈমের বলে একবার জীবন পেয়েছিলেন অবশ্য তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকষ কালো আঁধারে যা আলোর রেখা হয়ে ছিলেন ওই হেটমায়ারই।
এর আগেই ভেঙেছে হোপের সঙ্গে তার ৫৬ রানের জুটি, মিরাজের শর্ট অব আ লেংথের বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে সাকিবের হাতে দিয়েছেন ক্যাচ। নাঈমের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন প্রথম ইনিংসে একটু লড়াই করা ডওরিচ। বাইরের বলে মিরাজকে তাড়া করতে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন বিশু, দ্বিতীয়বার ম্যাচে দশ উইকেট পূর্ণ হয়েছে মিরাজের। এরপর ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। চা-বিরতি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওয়ারিকান দিয়েছেন ফিরতি ক্যাচ, ম্যাচে দ্বিতীয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট হয়েছে তাতে মিরাজের। শেষ উইকেটে রোচ-লুইস যেন দেখিয়েছেন, এ উইকেটে আদতে কিরকম ব্যাটিং করা উচিৎ ছিল ক্যারিবীয়দের। শেষ পর্যন্ত ৪২ রানের জুটি ভেঙেছে তাইজুলের বলে, লুইস এলবিডব্লিউ হওয়াতে।
এর আগে দ্বিতীয় দিনের শেষবেলার দুঃস্বপ্ন সকালে ফিরে এসেছে উইন্ডিজের জন্য। সকালের দ্বিতীয় ওভারে মিরাজের বলে ছয় মেরে হেটমেয়ার জানান দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর মতোই খেলবেন। পরের ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে কঠিন একটা ক্যাচ ধরতে পারলেন না মিরাজ, ডাওরিচ তখন ছিলেন ১৭ রানে। পরের ওভারে হেটমেয়ারের বল প্যাডে লাগল, বাংলাদেশ রিভিউ নিল না। সেটি নিলে আউটই হতো, তবে তার জন্য মূল্য দিতে হয়নি। পরের বলেই হেটমেয়ার ফিরতি ক্যাচ দিলেন মিরাজকে, তাঁর উইকেট হলো চারটি। এরপর উইকেট যাওয়া শুরু করল স্রোতের মতো।
এক ওভার পরেই মিরাজের বলে সিলি পয়েন্টে দুর্দান্ত একটা ক্যাচ নিলেন সাদমান, বিশু শট করেও দেখলেন কীভাবে যেন বলটা সাদমান ধরে ফেলেছেন। পরের ওভারেই সাকিব একটা ক্যাচ ছাড়লেন রোচের, যদিও সেটার জন্য মূল্য দিতে হয়নি। ১ রান করে মিরাজের বলে ঠিক পরের ওভারেই লং অনে ক্যাচ দিয়েছেন রোচ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ভরসা ছিলেন ডাওরিচ, কিন্তু ৩৭ রান করে তিনিও মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং আগেই হয়ে গিয়েছিল মিরাজের, এবার পেলেন প্রথমবারের মতো ৭ উইকেট। আর লুইসকে এলবিডব্লু করে সাকিব নিলেন তাঁর তৃতীয় উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রানে লিড নিল বাংলাদেশ, টেস্ট ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে এত বড় রানের লিড নেয়নি কখনো।
টেস্টে বাংলাদেশ এর আগে প্রতিপক্ষকে ফলো-অন করায়নি। টেস্টে এর আগে ইনিংস ব্যবধানে জেতেনি বাংলাদেশ।
আজ সেসব প্রথমের দিন!