'সাধারণ পরিকল্পনাতেই' বাংলাদেশের অসাধারণ জয়
চট্টগ্রাম টেস্টের শেষে চার স্পিনার খেলানোর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছিল সাকিব আল হাসানকে। প্রশংসার পাশাপাশি সাকিব মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, স্পিনারদের আগ্রাসী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লাগাম টেনে ধরার ব্যাপারটাও শিখতে হবে। মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস জয়ের পর সেই জায়গায় উন্নতি নিয়ে একটু হলেও সন্তুষ্ট হওয়ার কথা অধিনায়কের। সহজ পরিকল্পনাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুড়িয়ে গেছে, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন।
চট্টগ্রামের চেয়ে মিরপুরের উইকেট যে ভালো ছিল, টেস্টের প্রথম দিন থেকেই তা স্বীকার করেছেন এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশু-ওয়ারিকানরাও। তৃতীয় দিনেও এমন কিছু জুজু ছিল না উইকেটে, কয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা উইকেট বিলিয়েই দিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশ তো এই উইকেটেই প্রথম ইনিংসে ৫০০ ছাড়ানো স্কোর করেছেন। বোলিং করতে নামার আগে কী পরিকল্পনা ছিল, সেটা জানিয়েছেন সাকিব, ‘কালকের পর থেকে আমাদের একটাই পরিকল্পনা ছিল যতক্ষণ পারি স্ট্যাম্পে হিট করবো এবং রান ছাড়া বল করতে থাকবো। তারপরেরটা দেখা যাবে। আমার কাছে মনে হয় এই সাধারণ পরিকল্পনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে যাই আমরা।পেতে থাকলে মনে হয় প্রতি বলেই উইকেট পেয়ে যাবো এমন একটা ধারণা চলে আসে। ওই জিনিসটা যদি একটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, ওই চাওয়াটা, তাহলে আমরা জুটি হিসেবে আরও ভালো বোলিং করতে পারবো।’
মিরাজ অবশ্য অতটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে পারলেন না। তবে সাকিবের কথার প্রতিধ্বনি মিলল তাঁর কন্ঠেও, ‘ভাল জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করেছি। এইজন্য উইকেট পেয়েছি। যদি ভাল জায়গায় বল না করতাম তাহলে উইকেট পেতাম না, রানও হয়ে যেত।’ কাল ও আজকের উইকেটগুলো সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে। প্রথম ইনিংসে যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারের পাঁচজনই হয়েছেন বোল্ড। কেউ বলের লাইনে গিয়ে খেলতে পারেননি, কেউ আবার টার্নের জন্য খেলতে গিয়ে সোজা বল পেয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট আরেকটু কঠিন হয়ে গেলেও আউটের ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম পুনরাবৃত্তি। যতটা না বোলারের কৃতিত্ব, তার চেয়েও বেশি ব্যাটসম্যানদের দায়। বাড়তি কিছু করতে না চাওয়ার পরিকল্পনাও বোঝা গেছে তাতেই।
সম্পূরক প্রশ্ন উঠে গেল, তাহলে কি বাংলাদেশ দেশের মাটিতে জয়ের ফর্মুলাটা পেয়ে গেছে? সাকিব সেরকম আভাসই দিলেন, ‘অবশ্যই আমরা খুবই ভালো বোলিং করছি। এর দুইটা কারণ আছে। একটা হচ্ছে, আমাদের এখন যথেষ্ট মান সম্পন্ন বোলার আছে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে আমরা স্পিনারদের সহায়তা করার মতো তেমন উইকেটও পাচ্ছি। দুইটার সমন্বয়ে বিশেষ করে দেশের মাটিতে আমাদের মারত্মক একটা স্পিন আক্রমণ আছে এখন। আমি মনে করি যে কোনো দলের বিপক্ষে আমরা খুব ভালো কিছু করতে পারব। আশা করি এই ধারাটা অব্যাহত থাকবে। কারণ, অনেক সময় দেখা যায় একটা মৌসুম খুব ভালো যায়, পরেরটা অত ভালো যায় না। যেহেতু আমরা তিন/চার জন আছি, এক/দুই জনের তো সব সময় ভালো।’
উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোর জন্য ফর্মুলার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে ভারত, শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ কোন কৌশল খেলবে, সেটা বড় একটা প্রশ্নই।