• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    সেই স্মৃতি ভোলেননি সাকিব, প্রমাণ করতে চেয়েছেন অনেক কিছু

    সেই স্মৃতি ভোলেননি সাকিব, প্রমাণ করতে চেয়েছেন অনেক কিছু    


    কেউ ভোলে না কেউ ভোলে অতীত দিনের স্মৃতি...

    সাকিব আল হাসান নিশ্চয় ভোলেননি টেস্ট শুরুর সেই দিনগুলো। অভিষেক টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর সাক্ষী হয়েছিলেন চারটি ইনিংস পরাজয়ের। শুধু সাকিব নেই, এই বাংলাদেশের মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-তামিমদের জন্য ইনিংস পরাজয়ের অভিজ্ঞতা ওই সময় ছিল সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো। দুঃখের সেই পরশপাথর থেকে যে হিরণ্ময় দিন আসে, সেটা সাকিবদের চাইতে ভালো আর কেউ জানেন না। সাকিব অবশ্য নিজে খুব আবেগী নন, সেদিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতে স্মৃতিকাতরতায় ভেসে গেলেন না। বরং এই জয়টাকেই এখন মানছেন ‘স্পেশাল’ হিসেবে।

    এক দশক আগের ওই সময়ে জিম্বাবুয়ে বাদে বাকিদের সাথে বড় ব্যবধানে হারাই ছিল বাংলাদেশের নিয়তি। এখন দিন বদলেছে, বাংলাদেশ এখন ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। পুরনো স্মৃতির জাবর কাটাতে থাকা এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়টা হয়তো এমন বেশি কিছু নয়। তবে ১১১ টেস্ট পর প্রথম ইনিংস ব্যবধানে জয়ের আলাদা একটা রোমাঞ্চ তো আছেই। সাকিবের কন্ঠে তারই রেশ, ‘দেখুন আমরা একশ'র ওপরে টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। এই প্রথম এমন কিছু করলাম। অবশ্যই স্পেশাল কিছু তা না হলে তো... ১৮ বছরের মত টেস্ট খেলেছি, একশ টেস্টের মত খেলেছি। এই প্রথম এরকম কিছু হলল। এর ভেতরে আমরা কিন্তু ছোট টিমের সাথেও খেলেছি। তারপরও আমরা এমন কিছু করতে পারি নি।  এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন বলে আমি মনে করি। এর আগে আমাদের ওপরের কোন টিমকে হোম কন্ডিশনে হোয়াইটওয়াশ করি নি। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের জন্য সিরিজটি অনেক বড় পাওয়ার সিরিজ ছিল। ’

    প্রসঙ্গক্রমে চলে এলো নয় বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওই সিরিজও। হোক না দ্বিতীয় সারির দলের সাথে, সেই সিরিজটা ছিল বাংলাদেশের বিদেশে টেস্ট সামর্থ্য জানান দেওয়ার প্রথম উপলক্ষ। সাকিব অধিনায়ক হয়ে ব্যাটে-বলে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছেন। ২০০৯ সালের সেই সিরিজ জয়টা সাকিব দেখছেন আজকের অর্জনের ভিত হিসেবে, ‘ওটা ছিল (২০০৯ সালের) আমাদের কোন কিছুর শুরু, আর এটা আমাদের উন্নতির যে ধারা আছে সেটা যে অব্যাহত আছে তার রূপ। এই অর্জনটা অনেক বড়। এর বেশ কয়েকটা কারণ আছে। প্রথমত আমরা কাউকে ফলো অনে ফেলতে পারলাম। যে কোন দেশের সাথেই যে কোন অবস্থায় জয়টা অনেক বড় ব্যাপার। তারপরও আমাদের ওপরের র‍্যাংকিংয়ের কোন দেশের সাথে এমন ফল পাইনি। সেই দিক থেকে এটা অনেক বেশি স্পেশাল। সেখানে যখন শুরুটা করেছি, ওই সিরিজটি আমাদের ক্রিকেটের টার্নিং পয়েন্ট ছিল । সঙ্গে আমরা যখন নিউজিল্যান্ডের সাথে হোয়াইটওয়াশ করি প্রথমবারের মতো...  আমাদের উন্নতির যে ধারা, আমাদের বিশ্বাস তৈরি হওয়ার জন্য বড় ভিত তৈরি করে দিয়েছে এই দুইটা সিরিজ।’

    তবে এই সিরিজ জয়ের পেছনে ছোট্ট একটা গল্প শুনিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কাল বলেছেন, সিরিজ শুরুর আগে সাকিবের কথাটা তাঁতিয়ে দিয়েছিল তাদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে মাস চারেক আগে সেই ধবলধোলাই যেন না ভোলেন, সাকিব বলেছিলেন ড্রেসিংরুমে। আজ সেটি মনে করিয়ে দিতে সাকিব বললেন, ‘আমরা এমন হারের পর মিটিং করেছি, তারপর ভালোভাবে ফিরে এসেছি ওয়ানডে-টি-্টোয়েন্টিতে। যেহেতু আমরা টেস্ট ফরম্যাটে ভালো করি নি, আমাদের নিজেকে একটা সুযোগ ছিল প্রমাণ করার। ওই কারণেই আমরা চেয়েছিলাম কিছু একটা করি, যেন মানুষ অন্তত ভুলতে পারে বা বুঝতে পারে যে না, তাদের হোমে সুবিধাটা তাঁরা নিতে পেরেছে, আমাদের হোমে আমাদের যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করতে পেরেছি।’

    বদলার কথা সরাসরি স্বীকার করেননি, তবে সাকিব বার বারই বলেছেন অনেক কিছু প্রমাণের ছিল। সেটা যতটা না ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য, তার চেয়ে নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর জন্য। আর সেই ভিত তো লেখা হয়েছিল ইনিংস পরাজয়ের সেই দিনগুলোতেই।