পেসারদের বসে থাকা নয়, ওয়ালশের উদ্বেগ অন্য জায়গায়
পাঁচ দিনের টেস্ট শেষ হয়ে গেছে তিন দিনে, ক্রিকেটারেরাও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ফুরসত পেয়ে গেছেন। কোর্টনি ওয়ালশের তো আর পরিবার নেই, তিনি চলে গেলেন কোচিং স্টাফের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গলফ খেলতে। অবশ্য এই কটা দিন এমনিতেই একটু ‘অন্যরকমই’ গেছে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচের। পেসাররা যে সিরিজে ব্রাত্য, সেখানে তাঁর তো মাঠের খেলায় অবদান দৃশ্যত নেই-ই। ওয়ালশ পুরো ব্যাপারটা দেখছেন দলীয় কৌশল হিসেবেই, তবে তাঁকে ভাবাচ্ছে অন্য একটা ব্যাপার।
ওয়ালশের জন্য সময়টা হতাশার হওয়ারই কথা। দেশের মাটিতে স্পিন-বান্ধব উইকেটে পেসাররা যখন সুযোগ পেতে মাথা খুটে মরছেন, তখন তাঁর করার কী—ই বা থাকে? দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাও একটু সুযোগ পেয়েছিলেন পেসাররা। সিলেটে আবু জায়েদ রাহী একাই ছিলেন, এরপর মিরপুরে টেলরদের বিপক্ষে ফিরেছেন মোস্তাফিজ ও খালেদ। তবে দুই টেস্ট মিলে মাত্র দুইটি উইকেট পেয়েছেন পেসাররা। সেটাও মন্দের ভালো ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তো সেটাও হয়নি। চট্টগ্রামে মোস্তাফিজ উইকেট নেওয়া দূরে থাক, বল করারই সুযোগ পেয়েছেন মাত্র কয়েক ওভার। আর মিরপুরে তো কোনো পেসারই নেই, নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো স্পেশালিস্ট পেসার ছাড়া নামল বাংলাদেশ। ভারত সেই ১৯৬৭ সালে বিখ্যাত স্পিন-চতুষ্টয় নিয়ে নেমেছিল বটে, তারপরও দুই মিডিয়াম পেসার বল করেছিলেন। সৌম্যদের সেই সুযোগও হয়নি।
ওয়ালশ অবশ্য পুরো ব্যাপারটা দেখছেন দলীয় কৌশল হিসেবেই, ‘আমরা এখানে জিততে এসেছি। যেরকম উইকেটেই খেলুন, আপনাকে সেরা কম্বিনেশনটা খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশ এখন চার স্পিনার নিয়ে দাপটে খেলছে, এটাই এখন ট্রেন্ড। আর আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল জয়, সেটা হয়েছে। স্পিন দিয়েই আমরা জিততে চেয়েছি। আমাদের মনে হয়েছে স্পিনাররা বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।’
ওয়ালশ অবশ্য পেসারদের নিয়ে কাজ করেছেন এই কদিনে। খেলার ফাঁকে বা বিরতির সময় মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশে একাডেমি মাঠে মোস্তাফিজ, খালেদদের সময় দিয়েছেন। কিন্তু যে শিক্ষকের কোনো ক্লাসরুম নেই, তার জন্য ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করা কতটা কঠিন? ওয়ালশের ব্যাখ্যা, ‘অবশ্যই না খেলতে পেরে তারা হতাশ হতেই পারে। তবে সবকিছু তো এখানে শেষ হয়ে যাচ্ছে না। মানসিকভাবে তাদের আরও শক্ত হতে হবে। সামনে ওয়ানডে আছে, নিউজিল্যান্ড সিরিজ আছে। নিজেদের বলতে হবে, ঠিক আছে আমি টেস্টে সুযোগ পাইনি কিন্তু এমন যেন না হয়। সিমারদের উইকেটে আমার নামটা যেন প্রথম দিকে থাকে।’
নিউজিল্যান্ড সিরিজে স্পিনারদের চেয়ে পেসারদের ভূমিকা নিশ্চিতভাবে অনেক বেশি হবে। বরং ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই কিংবদন্তির দুশ্চিন্তা আরেক জায়গায়। এই বছর দেশের মাটিতে ছয়টি টেস্ট খেললেও দেশের বাইরে খেলেছে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখানে পেসারদের জন্য তুলনামূলক ভালো উইকেটেও তারা কিছু করতে পারেনি। ওয়ালশ এখানে দেখছেন উন্নতির একটা সুযোগ, ‘আমরা অনেক ধরনের উইকেটে খেলব, কিন্তু সুযোগ এলে তা আমাদের নিতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত দেশের মাটিতে সেটা নিতে পারিনি, এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। কেউ এগিয়ে এসে বলেনি, হ্যাঁ, বাংলাদেশে আমি হয়তো খেলতে পারব না, কিন্তু দেশের বাইরে আমার নামটাই যেন সবার ওপরে থাকে। কিছু চোটের সমস্যা ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের বোলাররা প্রস্তুত হওয়ার ও উইকেটের ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য বিদেশে যথেষ্ট টেস্ট খেলেছে।’
সামনেই ওয়ানডে সিরিজ আসছে, সেখানে হয়তো আরেকটু বেশি কাজের সুযোগ পাবেন ওয়ালশ। আর নিউজিল্যান্ড সিরিজ হবে তাঁর জন্য বড় পরীক্ষা। দুই বছর আগে এই নিউজিল্যান্ড দিয়েই শুরু হয়েছিল তাঁর মিশন। সেবার পেসারদের ব্যর্থতায় তাঁর করার কিছুই ছিল না। তবে এবার ওয়ালশ তাকিয়ে আছেন ওই সিরিজের দিকে, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে ধারাবাহিকতা। আমাদের ঠিক জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করে যেতে হবে, সমস্যা তৈরি করতে হবে। এটাই করার চেষ্টা করছি। নিউজিল্যান্ডে কী হবে জানি না, তবে পেস বান্ধব উইকেট থাকার কথা। তার আগে পেসারদের নিজেদের ওপর আরও বেশি আস্থা রাখতে হবে।’