• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    স্টেডিয়ামে বসে টানা দুই হাজার ম্যাচ!

    স্টেডিয়ামে বসে টানা দুই হাজার ম্যাচ!    

     

    নিয়মিত প্রিয় ক্লাবের খেলা মাঠে বসে কে না দেখতে চায়। নানা ব্যস্ততার মাঝে হয়ত সেটা হয়ে ওঠে না। ড্যারেক এলস্টোন অবশ্য এটার সাথে একমত নাও হতে পারেন। স্টেডিয়ামে বসে সুইন্ডন টাউনের ম্যাচ দেখার ব্যাপারে এলস্টোনের অভিধানে ‘ব্যস্ততা’ বলে যে কোনো শব্দ নেই। ৩৭ বছর ধরে টানা দুই হাজার ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে দেখে এলস্টোন গড়েছেন অভাবনীয় এক কীর্তি!  

    সেই ১৯৮১ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু। সেবার এফএ কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে সাটনের বিপক্ষে সুইন্ডন টাউনের ম্যাচ দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৩৭ বছর। এর মাঝে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে সুইন্ডন টাউন খেলেছে ২০০০ ম্যাচ। অবিশ্বাস্য হলে সত্য, এই দুই হাজার ম্যাচের প্রতিটিই মাঠে বসে দেখেছেন এলস্টোন! কাজ, অসুস্থতা কিছুই দমাতে পারেননি তাঁকে।    

    মজার ব্যাপার হচ্ছে, এলস্টোন কখনোই সুইন্ডন শহরে থাকেননি! তাঁর শৈশব ও জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ওয়াটফোর্ডে। তাহলে কীভাবে তিনি সুইন্ডনের সমর্থক হলেন? এলস্টোন জানালেন  পেছনের গল্পটা, ‘আমার বাবা-মার বন্ধুরা থাকত সুইন্ডনের পাশের শহরে। আমার ট্রেন নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ ছিল। সুইন্ডনে অনেক ট্রেন ছিল, সেখানে ঘুরতে যাওয়ার পর আমি তাদের ফুটবল ক্লাবের ভক্ত হয়ে যাই! ১৯৬৭ সালে প্রথমবার তাদের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম। তখন সপ্তাহে ৪.৫ পাউন্ডও আয় ছিল না আমার, তাই খুব বেশি ম্যাচ দেখাও হতো না। ১৯৮১ সাল থেকে অবশ্য একটা ম্যাচও মিস দেইনি।’

    এই ৩৭ বছরে এলস্টোন দেখেছেন সুইন্ডনের বহু উত্থান পতন। অ্যাংলো-ইতালিয়ান কাপের ম্যাচ দেখতে গেছেন আসকোলি, ভেনেজিয়া। সুইন্ডনের জার্সি গায়ে খেলতে দেখেছেন একই সাথে কোচ ও ফুটবলার হয়ে খেলা গ্লেন হডলকে। এই ৩৭ বছরে একবার প্রিমিয়ার লিগেও উঠেছিল সুইন্ডন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমটা তাই এলস্টোনের কাছে বিশেষ একটি বছর। নিজেদের ইতিহাসে এই একবারই প্রিমিয়ার লিগে খেলেছে সুইন্ডন।

     

     

    এই ৩৭ বছরে কখনোই খুব বেশি সাফল্য আসেনি সুইন্ডনের। বেশিরভাগ সময়ই হারের তিক্ত স্বাদ নিয়ে স্টেডিয়াম ছাড়তে হয়েছে এলস্টোনকে। মাঝে মাঝে কি রাগের মাথায় মনে হয়নি, আর স্টেডিয়ামে আসব না? ৬৮ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ইলেক্ট্রিশিয়ান এলস্টোন বলছেন, স্টেডিয়ামে না আসার কথা বহুবার ভাবলেও শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারেননি, ‘১৯৮৪ সালে আমরা শেষদিনে এসে অবনমনে পড়েছিলাম। সেদিন খুব ভেঙে পড়েছিলাম, বাড়ি ফেরার পথে একটা কথাও বলিনি বন্ধুর সাথে। সে আমাকে বিদায় জানানোর সময় বলেছিল, পরের মৌসুমে দেখা হবে। আমি বলেছিলাম, আর স্টেডিয়ামে আসব না! কিন্তু সেটা হয়নি, পরের মৌসুমেও শুরু থেকে আমি ছিলাম।’

    এই ২০০০ ম্যাচ দেখার সময় এলস্টোন সংগ্রহ করে রেখেছন বহু স্মৃতি। তাঁর কাছে আছে ৭ হাজারের বেশি ব্যাজ, বহু ম্যাচ টিকেট ও জার্সি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে গিয়ে সুইন্ডনের খেলা দেখার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর এলস্টোন, ‘আসলে এটা তো আর ভেবেচিন্তে হয়নি। প্রতি শনিবার আর মঙ্গলবার মাঠে যেতে হবে, এটা আমার সাপ্তাহিক একটা রুটিনই হয়ে গেছে! যতদিন আমার শরীর সায় দেয়, আমি মাঠে গিয়েই খেলা দেখব!’

    এফ এ কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইন্ডনের ম্যাচ দেখতে কাল কাউন্টি গ্রাউন্ডে এসেছিলেন এলস্টোন। তৃতীয় বিভাগের দল ওকিংয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে সুইন্ডন। ম্যাচের আগে কেক কেটে ২০০০তম ম্যাচ উপভোগের আনন্দটা হয়ত তাই কিছুটা ফিকে হয়ে গেছে। মন ভার করে বাড়ি ফিরলেও সুইন্ডনের পরের ম্যাচেই দেখা যাবে সদা হাস্যোজ্জল এলস্টোনকে।

    সুইন্ডন খেলবে আর এলস্টোন তাদের জার্সি পরে মাঠে আসবেন না, তা কি হয়?