আলো কমে আসার আগে সেঞ্চুরিতে উজ্জ্বল তামিম-সৌম্য
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ৫০ ওভারে ৩৩১/৮ ( হোপ ৮১, চেজ ৬৫*; রুবেল ২/৫৫, নাজমুল অপু ২/৬১, মেহেদী রানা ২/৬৫)
বিসিবি একাদশ ৩১৪/৬, ৪১ ওভার (তামিম ১০৭, সৌম্য ১০৩*; চেজ ২/৫৭)
ফলঃ বিসিবি একাদশ ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ৫১ রানে জয়ী
তামিম ইকবাল চোট কাটিয়ে ফিরলেন, আর সৌম্য সরকার তো যেন আছেন যাওয়া-আসার ওপরই। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে দুজনই করলেন ঝড়ো সেঞ্চুরি, উইন্ডিজদের দেওয়া ৩৩২ রানের লক্ষ্য বিসিবি একাদশ প্রায় পেরিয়ে গিয়েছিল। তবে বিকেএসপিতে ৯ ওভার বাকি থাকতে ৩১৪ রানেই আলোকস্বল্পতার জন্য খেলা শেষ করে দিয়েছেন আম্পায়াররা, বিসিবি একাদশ ডি-এল পদ্ধতিতে জিতেছে ৫১ রানে।
তামিম এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচের পর খেলতে পারেননি আর, মাঝে ফিরতে গিয়েও ফেরা হয়নি নতুন করে চোটে পড়ায়। তামিম ফিরলেন বিকেএসপিতে, ফিরলেন স্বরুপে। এই বাঁহাতি ওপেনার ছিলেন খুনে মেজাজে। ফ্লিক করে চার মেরে শুরু করেছেন, এরপর ড্রাইভ করেছেন, কাট করেছেন। করেছেন পুল, স্কুপ। কিমো পলকে টানা তিন চার মেরেছেন তিন রকমের শটে- ফ্লিক, স্কুপের পর অন-ড্রাইভে। ছয় মেরেছেন চারটি, এর মাঝে তিনটিই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে। ৮০ থেকে ৯০-এর মাঝে দেবেন্দ্র বিশুর বিপক্ষে বেশ সতর্ক ছিলেন, তখন বড় শট খেলেননি। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ৭০ বলে। শেষ পর্যন্ত চেজকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে হয়েছেন স্টাম্পড। ৭৩ বলে ১৩ চার ও ৪ ছয়ে করেছেন ১০৭ রান।
শুরুতে ইমরুল দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন তামিমকে, রোচের বলে গ্লাভসে আঘাত পাওয়ার পর একটু নড়বড়ে হয়ে পড়লেন যেন। চেজকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি, ৯ ওভারে তামিমের সঙ্গে ৮১ রানের জুটিও ভেঙেছে তাতেই। মিঠুন স্বস্তিতে ছিলেন না, ১৪ বলে ৫ রান করে ব্রাভোর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন বিশুর বলে। আরিফুল হক দিয়েছেন ফিরতি ক্যাচ, তৌহিদ হৃদয় হয়েছেন বোল্ড। এরপর শামিম দিয়েছেন ক্যাচ।
একপ্রান্তে ছিলেন সৌম্য, তার সঙ্গে যোগ দিলেন মাশরাফি। সৌম্য যেন পেলেন বাড়তি ভরসা। আগে থেকেই শট খেলছিলেন তিনি, ৩১ রানে আমব্রিসের বলে খাড়া ক্যাচ তুলে একবার বেঁচেছিলেন, আরেকবার সরাসরি থ্রো হলে হতে পারতেন রান-আউট। সেসব বাদ দিলে সৌম্যও কম আক্রমণাত্মক ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১০৩ রানে, ৭ চার ও ৬ ছয়ে। সেঞ্চুরী পূর্ণ করেছেন ৭৫ বলে। কেমার রোচকে পুল করে ছয়ে মেরে সেটা পূর্ণ করেছেন, এর আগে খেলেছেন আত্মবিশ্বাসী সব শট।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, প্রথম ব্রেকথ্রু পেতে বিসিবি একাদশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৬তম ওভার পর্যন্ত। কাইরন পাওয়েল ও শেই হোপের ওপেনিং জুটি ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে ১০০। নাজমুল ইসলামের বলে ৪৩ রান করে ইমরুল কায়সের হাতে পাওয়েল ক্যাচ দেওয়ায় ভেঙেছে সে জুটি। ড্যারেন ব্রাভোর সঙ্গে হোপের জুটি এরপর ৫৮ রানের, মেহেদির বলে কট-বিহাইন্ড হয়েছেন হোপ। ১৭ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা, শুরুতে রানের স্রোতে ভাটা পড়েছিল তাতে।
শুরুর স্পেলে চার ওভার বোলিং করেছিলেন মাশরাফি, তিন ওভারে ৬ রান দেওয়ার পর চতুর্থ ওভারে তিন বাউন্ডারিতে গুণেছিলেন ১৪ রান। তবে দ্বিতীয় স্পেলের শুরুতেই ফিরিয়েছেন মারলন স্যামুয়েলসকে, তুলে মারতে গিয়ে যিনি মিডউইকেটে দিয়েছেন ক্যাচ। দ্বিতীয় স্পেলে ১৭ রানে ১ উইকেট দেওয়ার পর আর বোলিংয়ে আসেননি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। ৮ ওভারের স্পেলে অবশ্য ছিলেন দারুণ ছন্দেই, কাটার করেছেন, করেছেন জোরের ওপর ডেলিভারিও।
এর আগেই শেই হোপ ফিরেছেন নাজমুলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে স্টাম্পড হয়ে। আর স্যামুয়েলসের পর রভম্যান পাওয়েল কট-বিহাইন্ড হয়েছেন শামিম পাটোয়ারির বলে, শুন্যতেই। একসময় যে স্কোর ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে মনে হচ্ছিল, সেটাই তখন যেন থিতিয়ে পড়েছে।
আবার সেটা জেগে ওঠার প্রথম ধাপ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা পেরুলো শিমরন হেটমায়ার ও রসটন চেজের জুটিতে। সে জুটিতে এসেছে ৩৮ বলে ৩৯ রান, রুবেল হোসেনের বাউন্সারে হেটমায়ার পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেওয়ায় ভেঙেছে সে জুটি। ৪৭তম ওভারে রুবেল নিয়েছেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট, ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হয়েছেন ফ্যাবিয়েল অ্যালেন। তবে তার আগেই চেজের সঙ্গে জুটিএ অ্যালেন যোগ করেছেন ঝড়ো গতিতে ৭৮ রান, অ্যালেন নিজে করেছেন ৩২ বলে ৪৮ রান।
এরপর কিমো পলের উইকেট নিয়েছেন মেহেদি, তবে তার আগেই ৩০০ পেরিয়ে গেছে উইন্ডিজরা। শেষ ১০ ওভারে ৯৯ রান তুলে শেষ পর্যন্ত তারা থেমেছে ৩৩১ রানে। সৌম্য করেছেন ৮ ওভার, সেখানে বেশ খরুচে ছিলেন তিনি, দিয়েছেন ৭২ রান। আর চেজ অপরাজিত ছিলেন ৫১ বলে ৬৫ রানে।