• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    তামিমের স্বস্তি, সৌম্যর উল্লাস

    তামিমের স্বস্তি, সৌম্যর উল্লাস    

    দেবেন্দ্র বিশুর বলটা লং-অনে খেলে সিঙ্গেল। নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে গিয়ে ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলেন যেন তামিম ইকবাল, তাকিয়ে রইলেন আকাশপানে। দূর থেকেও বুঝা যায়, একরাশ স্বস্তি সেটা। এরপর ব্যাটটা তুললেন ড্রেসিংরুমের দিকে। বিকেএসপিতে প্রস্তুতি ম্যাচ দেখতে আসা, চত্বরে কিংবা চত্বরের বাইরে, দাঁড়িয়ে-বসে, গাছে-দেওয়ালে ঝুলে থাকা দর্শকরা উল্লাস যেন তখন তামিমকে সেভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছেন না। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে সেই সাহসী ও স্বল্পতম ইনিংসের পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে যে তামিমের এটিই প্রথম ইনিংস! তামিম তো স্বস্তি পাবেনই! 

    সৌম্যর হাসিটা অবশ্য ছিল স্পষ্টই। কদিন আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে এখানে পেয়েছেন সেঞ্চুরি, এরপর আরেকবার হুট করে ডেকে নেওয়া হয়েছিল দলেই। এবার অবশ্য আগে থেকেই স্কোয়াডে ছিলেন, তবে জায়গার দাবিটা জোরালো করতে এমন কিছু করতে হতো তাকে। সৌম্য সেটা করলেন, কেমার রোচকে পুল করে মিডউইকেট দিয়ে ছয় মারার পর দুহাত মেলে ধরলেন। যেন ঘোষণা দিলেন, “আমিও আছি!” 

    ৯ তারিখের ওয়ানডে তামিম খেলছেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিতই। তার সঙ্গী সৌম্য হবেন কিনা, প্রশ্ন সেটাই। তবে আজ দুজনই ছিলেন দারুন ছন্দে, দুজনের শটের ধরন দেখেই আপনি বলে দিতে পারতেন- আদতে কারা ব্যাটিং করছেন! 

    বিকেএসপির এ উইকেট মোটামুটি ফ্ল্যাট, বোলারদের জন্য তেমন সহায়তা নেই। মাশরাফির মতো বোলার তাই ফিরে গেলেন তার অনেক ভরসার কৌশলে, কাটারের সঙ্গে আঁটসাঁট লাইন-লেংথ। প্রস্তুতি ম্যাচের একাদশে থাকা পেসাররা বারকয়েক শর্ট বল করতে গিয়ে গুলিয়ে ফেললেন। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলাররা মাশরাফির মতো তেমন কিছু করতে পারলেন না। শুরুতে ওশ্যান থমাস আর কেমার রোচ শর্ট বল করছিলেন, থমাসের একটা বল তো প্রায় একড্রপে হয়ে গেল বাই-চার। রোচের একটা শর্ট বল লাগলো ইমরুলের গ্লাভসে, বেশ কিছুক্ষণ ধরে শুশ্রুষাও নেওয়া লাগলো তাকে। তবে টললেন না তামিম। 

    উইকেটের চারদিক ধরেই বিস্তার করে গেলেন আধিপত্য। ফ্লিক করে চার মেরে শুরু করেছেন, এরপর ড্রাইভ করেছেন, কাট করেছেন। করেছেন পুল, স্কুপ। কিমো পলকে টানা তিন চার মেরেছেন তিন রকমের শটে- ফ্লিক, স্কুপের পর অন-ড্রাইভে। ছয় মেরেছেন চারটি, এর মাঝে তিনটিই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে, একটি স্লোয়ার ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়েই। চেজকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে স্টাম্পড হয়েছেন, তবে আউটের পর মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় তামিমের প্রতিক্রিয়া বলছিল, তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি ঠিক। হয়তো খেলতে চেয়েছিলেন আরও কিছুক্ষণ।

    এ বছরে তামিম ছিলেন দারুণ ছন্দে, এশিয়া কাপের সেই চোটটা তাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতাশ করেছিল তামিমকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টের আগেও ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তবে ‘সাইড-স্ট্রেইন’ আবারও দূরে ঠেলে দিয়েছিল তাকে। আজ ফিল্ডিংয়ে নামলেন ইনিংসের প্রায় মাঝের দিকে, তামিমের মাঠে ফেরা সেটা দিয়েই। তবে তামিমের ব্যাটিংয়ের ধরনে অবশ্য সৌম্যর মনে হয়নি, তিনি এতদিন বাইরে ছিলেন, “আমার কাছে ওনার ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি যে উনি বাইরে থেকে আসলো কিংবা কয়েকটি ম্যাচ বাইরে ছিলো। আমার দেখে খুব ভালো লেগেছে যে উনি অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আর শুরুতে একটি দারুণ শুরু পেয়েছেন। এমন শুরু সবসময় হয় না। আমি চাইবো যে এমন শুরু সবসময় উনি দিতে পারবেন, এটি বাংলাদেশের জন্যও ভালো, ওনার জন্যও ভালো।”

    সৌম্য অবশ্য থাকলেন শেষ পর্যন্তই। একটা আলগা শটে ক্যাচ তুলেও বেঁচে গিয়েছিলেন। সৌম্য বলছেন, এরপর তামিমের কথাতেই আর ভুল করেননি তিনি, “আসলে শুরুতে আমার তেমন কোন পরিকল্পনা ছিল না। তামিম ভাই অনেক ভালো করছিলো। প্রত্যেক ওভারে অনেক রান আসছিলো। আমি চেষ্টা করেছি যে তাকে সমর্থন দেওয়ার। যতটুকু সময়ই থাকি। আর বোলারগুলোতে দেখি। উনি আমাকে কিছু কথা বলেছিলেন, যেগুলো আমাকে সহায়তা করেছে। তো সেই অনুসারেই ব্যাটিং করেছি। একটা ভুল শট খেলেছি। এর মধ্যে উনি একটি কথা বলেছেন, তখন আরো মাথা খুলেছে। উইকেটের মধ্যে কিছু কিছু কথাও আসলে অনেক সাহায্য করে।”

    সৌম্য তারপর দিনে উইন্ডিজের অন্যতম সেরা বোলার রসটন চেজকে লং-অফ দিয়ে মারলেন ছয়, এরপরের বলেই চার। বিশুকে স্ল্যাপ করে ছয়  মারলেন, মারলেন লং-অন দিয়েও। সৌম্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে যেখানে শেষ করেছিলেন, এখানে যেন শুরু করলেন সেখান থেকেই। 

    মাঝে টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন, তবে হয়েছেন ব্যর্থ। হুট করে পাওয়া ওয়ানডে দলের জায়গাটা অবশ্য ধরে রেখেছেন। সৌম্য সেখানে কাজে লাগাতে চাইছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে পাওয়া শিক্ষা, “উইকেটের বেশীক্ষণ থাকার চেষ্টা করছি। উইকেটে  যতক্ষণ থাকতে পারবো চেষ্টা করবো। তামিম ভাই যেমন একটি কথা বলেছিলেন- উইকেটে থাকতে। এই কথাটি হয়তো বাইরে ওনার কাছে পেতাম না।” 

    সৌম্য উইকেটেই উল্লাসটা করে এলেন। তামিম যেখানে পেয়ে এলেন স্বস্তি।