• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    মাশরাফি-মোস্তাফিজ-মুশফিকে পাত্তা পেল না উইন্ডিজ

    মাশরাফি-মোস্তাফিজ-মুশফিকে পাত্তা পেল না উইন্ডিজ    

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৫/৯, ৫০ ওভার (হোপ ৪৩, পল ৩৬, মাশরাফি ৩/৩০, মোস্তাফিজ ৩/৩৫)
    বাংলাদেশ ১৯৬/৫, ৩৫.১ ওভার (মুশফিক ৫৫*, লিটন ৪১, চেজ ২/৪৭, পল ১/৩৭)
    বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী 


    বোলিংয়ে দারুণ ছিলেন মাশরাফি/বিসিবি

    মিরপুরের এ উইকেট ধীরগতির, বাউন্সও অসমান। শট খেলা সহজ নয় স্বাভাবিকভাবেই। যে উইকেট কৌশলি ব্যাটিং দাবি করে, সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯৫ রানে আটকে দেওয়ার পর মুশফিকুর রহিমের ফিফটি, লিটন দাসের ৪১ রানের ইনিংসে সহজ জয়েই সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। মাশরাফি-মোস্তাফিজের প্রত্যেকের তিন উইকেটের সঙ্গে সঙ্গে মিরাজ-সাকিবের স্পিন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন, মুশফিকরা ৮৯ বল বাকি থাকতেই এনে দিয়েছেন জয়। 

    যে ১৪ উইকেট পড়েছে দুই দল মিলে, মোটামুটি সবাই আউট হয়েছেন শট খেলতে গিয়ে, টাইমিং মিস করে। তবে বাংলাদেশী বোলারদের ভ্যারিয়েশনের কাছে পাত্তা পায়নি গতিনির্ভর উইন্ডিজ পেস-আক্রমণ, চেজ-বিশুদের স্পিনও ছড়াতে পারেননি তেমন বিষ। ১৭১টি ডট বল দিয়েছে উইন্ডিজ, বাউন্ডারিও বের করতে পারেনি সেভাবে। এক রুবেল হোসেন ছাড়া বাকি চার বাংলাদেশী বোলারই ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন চারের নিচে। ১৯৫ রানের সম্বল নিয়ে শরীরি ভাষাতেও তেমন জোর দেখাতে পারেনি পরে উইন্ডিজ। টসে হেরে কম রানে প্রতিপক্ষকে বেধে ফেলার পর কাজটা তাই মোটামুটি সহজই বানিয়ে ফেলেছিলেন মুশফিকরা। 

    বাংলাদেশ দলে খেলানো হয়েছে লিটন, সৌম্য, ইমরুল- তিন ‘ওপেনার’কেই।  তামিম-লিটনের ৩৭ রানের জুটি ধীরগতির হলেও সেটা নিশ্চিত করেছে, এ উইকেটে রানতাড়ায় শুরুতেই চাপে পড়ছে না বাংলাদেশ। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে দারুণ ক্যাচ নেওয়া তামিম ফিরেছেন ১২ রান করেই, চেজের বলে শরীর থেকে দূর থেকে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন, তার ব্যাট পৌঁছাতে পারেনি ঠিকঠাক। সে ওভারেই প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছিল বাংলাদেশ, পরপর দুই চার মেরেছিলেন লিটন। তামিমের উইকেটে হয়তো প্রভাব থাকলো সেটারও। 

    ৪ রানে জীবন পেয়েছিলেন লিটন, রোচকে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন নো-বল হওয়ায়। দ্বিতীয় জীবনে ৩৭ করে পলকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। মুশফিকের সঙ্গে গড়েছেন ৪৭ রানের জুটি। থমাসের শর্ট-ফুলের সেট-আপে ধরা পড়েছেন ইমরুল। প্রথমে শর্ট বলে লাফিয়ে খেলে চার পেয়েছিলেন ইমরুল, তবে থমাসের ১৪৪.২ কি.মি.-র ফুললেংথের বলে লাইন পুরো মিস করে বোল্ড হয়েছেন পরের বলেই। সাকিব অবশ্য শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক, সফলও হয়েছিলেন সে সময়। তবে সেটাই কাল হয়েছে তার। পলকে শরীর থেকে দূরে থেকে হোয়্যাক করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে দিয়েছেন ক্যাচ, ২৬ বলে ৩০ রান করে। মুশফিকের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৫৭ রানের। ততক্ষণে অবশ্য বিপদের সম্ভাবনা প্রায় নেই করে ফেলেছে বাংলাদেশ। 

     

    রানতাড়ায় মূল কারিগর মুশফিক/বিসিবি

    ফিরতি স্পেলে মার খেয়েছেন প্রথমে ভাল গতিতে বোলিং করা থমাস, ২৯তম ওভারে মুশফিকের এক চারের পর সৌম্য মেরেছেন চার-ছয়। চেজের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য, জয় থেকে ২১ রান দূরে। বাকি পথটা মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে পেরিয়ে গেছেন মুশফিক, পেয়েছেন ফিফটি। চারে নেমেছিলেন, রানতাড়ায় মূখ্য ভূমিকা শেষ পর্যন্ত পালন করেছেন তিনিই।  

    এর আগে টসে হেরে তিন পেসার নিয়ে নামা বাংলাদেশ ইনিংস ওপেন করিয়েছে দুই স্পিনার দিয়ে, দশম ওভারে এসেছেন প্রথম পেসার, আর শুরু থেকেই রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের। ডট বলের চাপ বেড়েছে, বাউন্ডারিও মিলছিল না। প্রথম আকাশপথ বেছে নিলেন কাইরন পাওয়েল, সাকিবকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারতে গিয়ে কাভারে ধরা পড়লেন, বাংলাদেশ পেল প্রথম ব্রেকথ্রু। ড্যারেন ব্রাভো ক্রিজে বেশ কিছুক্ষণ ছিলেন, তবে স্বস্তিতে নয়।  জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি, এতে অবশ্য দায় আছে তামিমের দুর্দান্ত ক্যাচের। মাশরাফিকে ফুললেংথ থেকে তুলে মারতে গিয়েছিলেন, লং অফ থেকে এক্সট্রা কাভারে দৌড়ে গিয়ে উড়ন্ত অবস্থায় ধরেছেন তামিম। শেই হোপ মাশরাফির অফস্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে উড়িয়ে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে মিরাজের ভাল ক্যাচে পরিণত হয়েছেন, অন্তত দুইটি ক্যাচ মিস হলেও বাংলাদেশ এদিন গুরুত্বপূর্ণ সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েছে দারুণভাবে। 

    ১০০ ছুঁতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩১তম ওভার পর্যন্ত, মাঝে ৮৩ বলে ছিল না কোনও বাউন্ডারি। তার আগেই ফিরেছেন শিমরন হেটমায়ারও, মিরাজের আরেকবার শিকার হয়ে। লাইন শিমরন হেটমায়ার আরেকবার মিরাজের শিকার, লাইন ধরে রাখা বলটা নীচু হয়েছিল, ব্যাট নামিয়েও স্টাম্প বাঁচাতে পারেননি এই বাঁহাতি। জীবন পেয়েছিলেন নতুন অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলও, তবে ব্রাভোর মতো তিনিও ব্যর্থ সেটি কাজে লাগাতে। মাশরাফির লেংথ বলে জোরের ওপর ইনফিল্ড ছাড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড-অফে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। 

    গিয়ার বদলানোর প্রথম চেষ্টাটাই ব্যর্থ হয়েছে মারলন স্যামুয়েলসের, রুবেলকে তুলে মারতে গিয়ে লং-অন বাউন্ডারিতে লিটনের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। শেষ দশ ওভারে উইন্ডিজের যে ৬৬ রান উঠেছে, তার অবদান রসটন চেজ ও কিমো পলের। ৪৪তম ওভারে মাশরাফিকে ছয় মেরেছেন চেজ, ইনিংসে যা প্রথম। ৪৮তম ওভারে মোস্তাফিজের কাটারে পুল করতে গিয়ে চেজ টপ-এজড হওয়ার আগে পলের সঙ্গে গড়েছেন ৫১ রানের জুটি, যা ইনিংসে সর্বোচ্চ। পলের ২৮ বলে ৩৬ রানের ক্যামিও শেষ হয়েছে শেষ ওভারে, মোস্তাফিজকে হিভ করতে গিয়ে লিডিং-এজড হয়ে। এক বল পর ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন বিশু, শেষ ওভারে মোস্তাফিজ দিয়েছেন ২ রান।