হোপ-এ আশাভঙ্গ বাংলাদেশের, সিরিজে টিকে রইল উইন্ডিজ
বাংলাদেশ ২৫৫/৭, ৫০ ওভার (সাকিব ৬৫, মুশফিক ৬২, তামিম ৫০, থমাস ৩/৫৪, রোচ ১/৩৯)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৫৬/৬, ৪৯.৪ ওভার (হোপ ১৪৬*, ব্রাভো ২৭, রুবেল ২/৫৭, মোস্তাফিজ ২/৬৩)
উইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী, সিরিজে ১-১ সমতা
ভারতের সঙ্গে ২য় ও ৩য় ওয়ানডেতে হোপ বড় ইনিংস খেলেছিলেন, উইন্ডিজ হারেনি একটিতেও। শেষের দুইটিতে ডাক মেরেছিলেন, উইন্ডিজ হেরেছিল দুটিতেই। মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে হোপ করলেন ৪৩, হারলো উইন্ডিজ। উইন্ডিজের জয়ের জন্য যেন প্রয়োজন ছিল হোপের বড় ইনিংস- দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ১৪৬ রানে, মিরপুরের এ উইকেটে বাংলাদেশের ২৫৫ রানকে যথেষ্ট হতে দিলেন না ওই হোপই, দলের ৫৭.০৩ শতাংশ রান করলেন একাই। উইন্ডিজের আশাও টিকে রইল তাই শেষ ম্যাচে গিয়ে সিরিজ জেতার। আর ক্যারিবীয় সফরের মতো এবারও ১-০ এর লিডটা খুইয়ে শেষ ম্যাচে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
রান-তাড়ায় উইন্ডিজের মূল কারিগর ছিলেন হোপই, শুধু বড় ইনিংসে নয়, গুরুত্বপূর্ণ সব জুটিতে। ড্যারেন ব্রাভো ও মারলন স্যামুয়েলসের সঙ্গে ৬২ ও ৬৫ রানের পর ৭ম উইকেটে কিমো পলের সঙ্গে গড়লেন অবিচ্ছিন্ন ৭১ রানের জুটি, যেটায় পলের অবদান মাত্র ১৮। ঠিকঠাক স্ট্রাইক বদল করতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন পল, তবে সেসব চাপ ছুঁয়ে যায়নি হোপকে। শেষ ১০ ওভারে ৬৬ রানের প্রয়োজনীয়তাটা একসময় দাঁড়িয়েছিল ৩ ওভারে ৩২ রানে। ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে রুবেল হোসেনকে ছয় মেরে হোপ এগিয়ে নিলেন উইন্ডিজকে, পলের ক্যাচ মিস করে সেটা আরও দৃঢ় করলেন বদলি ফিল্ডার নাজমুল। ইনিংসের শেষভাগে বেশ পিচ্ছিল ছিল বাংলাদেশের ফিল্ডিং, মিসফিল্ডিং, ওভারথ্রো আর সুযোগ হাতছাড়ার মাশুল গুণতেই হয়েছে তাই শেষ পর্যন্ত।
মিরপুরের এ উইকেট অন্তত আগের দিনের চেয়ে ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল একটু সহজ, সেখানে ২৫৫ রানের সম্বল যথেষ্ট কিনা, প্রথম ইনিংসের পর সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবে দ্বিতীয় ওভারেই ব্রেকথ্রু পেয়েছে বাংলাদেশ, চন্দ্রপল হেমরাজ মিরাজের লাইন ধরে রাখা বলে এলবিডব্লিউ। ৭ম ওভারে প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছে উইন্ডিজ, শেই হোপ ও ড্যারেন ব্রাভো এরপর কিছুটা চড়াও হয়েছিলেন, মোস্তাফিজ ও মাশরাফিকে তিনটি ছয়ও মারলেন দুইজন। ৬৫ রানের সে জুটি ভেঙেছেন রুবেল হোসেন, তার স্লোয়ার বেশি আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে পায়ের পেছনে দিয়ে বোল্ড হয়েছেন ২৭ রানে।
হোপকে এরপর সঙ্গ দিয়েছেন স্যামুয়েলস, ৬২ রানের জুটিতে। তবে মোস্তাফিজের ওভার দ্য উইকেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া স্লোয়ার-কাটারে বিপর্যস্ত স্যামুয়েলস শেষে খোঁচা মেরে আউটসাইড-এজডই হয়েছেন ২৬ রান করে। শুন্যতেই ইমরুলের হাতে ফাইন লেগে জীবন পাওয়া হেটমায়ার ১৪ রান করে সেই রুবেলের বলে প্রায় একই শট খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ইমরুলের বদলি ফিল্ডার নাজমুলের হাতেই ক্যাচ দিয়েছেন। পরের ওভারে মাশরাফির কাটারকে মিড-অনকে ছাড়িয়ে মারতে গিয়ে সেখানেই ক্যাচ দিয়েছেন রভম্যান পাওয়েল। চেজ রান-আউট হতে পারতেন ৪ রানে, সেটা হয়েছেন ৯ রানে গিয়ে। মোস্তাফিজের স্লোয়ার তিনিও ছাড়াতে চেয়েছিলেন মিড-অন, ক্যাচ নিয়েছেন রুবেল। বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছিল দারুণভাবে।
তবে এরপর আর উইকেটই পায়নি বাংলাদেশ। পল উলটো জীবন পেয়েছেন অন্তত দুইবার, সহজ ও কঠিন সুযোগ মিলিয়ে। হোপ অবশ্য সে অর্থে সুযোগ দেননি। ১১৮ বলে পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি, ইনিংসের ৭৩.৯৭ শতাংশ রানই করেছেন ইন ফ্রন্ট অফ স্কয়ারে। শেষ পর্যন্ত মেরেছেন ১২ চার ও ৩ ছয়, খেলেছেন ১৪৪ বল।
এর আগে একসঙ্গে ১০০ ওয়ানডে খেলতে নামা পঞ্চপান্ডবের তিনজন- তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ফিফটিতে ২৫৫ পর্যন্ত গিয়েছিল বাংলাদেশ। তামিম-মুশফিকের জুটির ভিতে দাঁড়িয়ে অনেকদূর যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেও উইন্ডিজদের ডেথ ওভারে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ আটকে গিয়েছিল ২৫৫ রানেই। শেষ ১০ ওভারে তারা তুলেছেন ৬৪ রান, শেষ ৫ ওভারে ২৬।
লিটন দাসের চোটের পর থমাসের বলে ইমরুল কায়েসের দ্রুত ফেরা চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশকে। তামিম-মুশফিকের ১২৩ বলে ১১১ রানের জুটি এনে দিল দারুণ ভিত। ৬২ বলে মুশফিক ফিফটি ছোঁয়ার পর ৬১ বলে সেটা করেছেন তামিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্রেকথ্রু দিয়েছেন দেবেন্দ্র বিশু, তাকে স্লগ করতে গিয়ে বলের লাইনে পৌঁছাতে না পেরে ডিপ-মিডউইকেটে তামিম, আর থমাসের পেসে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মুশফিক।
এরপরও বাংলাদেশ খেই হারিয়ে ফেলেনি, সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটির কারণে। পাওয়েল এনেছেন ব্রেকথ্রু, তার লেংথ বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে লিডিং-এজড মাহমুদউল্লাহ। সাকিব ক্যাচ তুলেও এরপর বাঁচলেন নো-বল হওয়ায়, আক্রমণ চালিয়ে গেলেন। আর থমাসকে আপারকাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য সরকার, দ্বিতীয়বার নেমে কিমো পলকে টেনে মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন দাস।
৪৫তম ওভারে থমাসের এক ওভারেই এলো ১৫ রান, বাংলাদেশ দিল গিয়ার পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তবে কেমার রোচের স্লোয়ারে হলো না সেটা। ৬২ বলে ৬৫ রান করে বোল্ড হয়ে গেলেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত তো স্কোরকার্ডও বললো, জয়ের জন্য যথেষ্ট সংগ্রহ করতে পারেনি বাংলাদেশ।