হোপের 'ব্যাটিং করে যাওয়ার' মন্ত্র
মাশরাফি বিন মুর্তজার লেংথ বলে শরীর থেকে দূরে ব্যাট চালিয়ে পয়েন্টে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন শেই হোপ। ওপেনিংয়ে সঙ্গী কাইরন পাওয়েলের পর ড্যারেন ব্রাভো ফিরেছিলেন, ফিরেছিলেন হোপও, ৪৩ রানে। প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেন ছিল মিরপুরের উইকেটে দিশেহারা। আজ হোপের ওপেনিং সঙ্গী বদলে গেল, তবে চন্দ্রপল হেমরাজও ফিরলেন শুরুতেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য এ উইকেটে ব্যাটিংয়ের মন্ত্রটা পড়ে ফেললো যেন, অন্তত হোপ তো পড়লেনই। মাশরাফির ব্যাক অফ লেংথ বলে জায়গা বানিয়ে ছয় মেরে ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছিলেন, ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে বাস্তবায়ন করলেন সেটাই।
ওপেনিংয়ে নেমে টিকে রইলেন শেষ পর্যন্ত, একাই করলেন দলের ৫৭ শতাংশের ওপরে রান। হোপের ব্যাটিং-মন্ত্রটা অবশ্য সাধারণ- যতক্ষণ পারা যায় ব্যাটিং করে যাওয়া। শুরুতে ব্রাভোর সঙ্গে ৬২ রানের পর স্যামুয়েলসের সঙ্গে ৬৫ রানের জুটিতে প্লাটফর্মটা গড়লেন হোপ, কিমো পলকে নিয়ে এরপর তৈরি করলেন জয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তা। এ উইকেটে ব্যাটিংকে হোপ বানিয়ে ফেললেন সহজ, আদতে সেটা কঠিন ছিলই বলে জানাচ্ছেন এই ডানহাতি, “উইকেট একটু ধীরগতির ছিল। বোলাররা পেস কমিয়ে আনলে ব্যাট লাগানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছিল। বিশেষ করে ফিজের (মোস্তাফিজ) ক্ষেত্রে। তার অফকাটার সামলানো কঠিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। স্ট্রোক খেলার জন্য এ উইকেটটা সেভাবে উপযুক্ত না, তবে অবশ্যই শেষ ম্যাচের চেয়ে ভাল ছিল।”
সেই মোস্তাফিজের ওপরও হোপ নিয়ন্ত্রণ আনলেন, ৪৯তম ওভারে তিন চারে ম্যাচটা বের করে আনার শেষ ধাপটা পেরিয়ে। সেই ওভারের শুরুতে ১২ বলে দরকার ছিল ২২, তবে আত্মবিশ্বাসী হোপে টিকতে পারেননি মোস্তাফিজও। হোপ মনে করিয়ে দিচ্ছেন পুরোনো ব্যাপারটাই, এ উইকেটে থিতু হলে যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন ভয়ঙ্কর, “সবকিছুই আসলে ইনিংসের গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার। আমি জানতাম, কাউকে অনেক্ষণ ধরে খেলতে হবে। টপ অর্ডারে খেলি বলে আমার সেই সুযোগটা ছিল, আমার সামনে ছিল পুরো ৫০ ওভারই। মাঝের দিকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেটগুলো হারানোয় আমি হতাশ হয়েছিলাম। তবে মূলমন্ত্রই হচ্ছে যতক্ষণ সম্ভব ব্যাটিং করা, জয় নিশ্চিত করা।”
পলের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৭১ রানের জুটিতে হোপের একার অবদানই ছিল ৫১। শুরুতে বেশ নড়বড়ে ছিলেন পল, সুযোগও দিয়েছিলেন বারদুয়েক। সাকিবের গুরুত্বপূর্ণ এক ওভারে এসেছিল মাত্র ১ রান। তবে সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস হারাননি হোপ, “আমরা কিমোর (পল) ব্যাটিং সামর্থ্যের কথা জানি। তার প্রতি পুরো বিশ্বাস ছিল আমার। যতটা পারি, স্ট্রাইক বদলাতে চাচ্ছিলাম। জানতাম, ক্রিজে এসেই এখানে বল হিট করাটা কঠিন। এ কারণেই সে গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছে আমাদের পার করিয়ে দেওয়ার জন্য।”
৪৩ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে হোপের এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি, এর আগের দুইটি সেঞ্চুরিতেই ছিল মিশ্র অনুভূতি। জিম্বাবুয়ে ও ভারতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচই যে হয়েছিল টাই! এবার তার সেঞ্চুরি জেতালো উইন্ডিজকে, হোপের কাছে তাই বাকি দুটির চেয়ে এগিয়ে এটিই।
যে ইনিংসটা হোপ মনে রাখবেন। এদিনটা মনে রাখবেন, যেদিন তিনি আশা ছাড়েননি, যেদিন কাজে লেগেছিল তার মূলমন্ত্রটা।