• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    'ফাইনাল'টা একপেশে বানিয়ে ফেলল বাংলাদেশ

    'ফাইনাল'টা একপেশে বানিয়ে ফেলল বাংলাদেশ    

    তৃতীয় ওয়ানডে, সিলেট
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৮/৯, ৫০ ওভার (হোপ ১০৮*, স্যামুয়েলস ১৯, মিরাজ ৪/২৯, মাশরাফি ২/৩৪) 
    বাংলাদেশ ২০২/২, ৩৮.২ ওভার (তামিম ৮১*, সৌম্য ৮১, পল ২/২৭)
    বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী ও সিরিজ ২-১ এ জয়ী 


    টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয় সফরের উলটো ফল হয়েছিল বাংলাদেশে, ওয়ানডে সিরিজে হলো একইরকম। দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে ১-০ এর লিডটা খুইয়ে ফেলার পর তৃতীয় ওয়ানডেকে একপেশে বানিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে উইন্ডিজকে ১৯৮ রানে আটকে দেওয়ার পর তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ৮১ ও ৮০ রানের ইনিংসে ৬৯ বল ও ৮ উইকেট বাকি রেখেই জিতে গেছে স্বাগতিকরা। 

    রানতাড়ায় প্রথম ওভারে দুই চার মেরে ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছিলেন লিটন, তবে স্ট্রাইক-বদল আর স্ট্রোকপ্লের মাঝে ভারসাম্য করতে পারেননি। পাঁচ চার ও তিন সিঙ্গেলে ২৩ রান করার পর পলের শর্ট বলে পুলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে তার, ৪৫ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। এরপরের গল্প তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের। তিন নম্বরে ইমরুল কায়েস জায়গা হারিয়েছেন, সৌম্যর ইনিংস সে পজিশনকে চ্যালেঞ্জ জানালো আরও। 

    তামিম-সৌম্য মিলে সিলেটের এই উইকেটে রানতাড়াকে বানিয়ে ফেলেছিলেন অতি-সহজ। ৫ম ওভারের পর পায়ে টান পেয়ে ম্যাচ থেকে কেমার রোচের ছিটকে যাওয়া উইন্ডিজের দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও। তামিম ব্যক্তিগত স্কোরে শুরুতে এগিয়ে থাকলেও সৌম্য ধরে ফেলেছিলেন তাকে, একসময় এগিয়েও গিয়েছিলেন। ৮১ বলে করেছেন ৮০ রান, মেরেছেন ৫টি করে চার ও ছয়। এর মাঝে স্যামুয়েলসকে পরপর দুই ওভারে দুই ছয়ের পর ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের এক ওভারে মেরেছেন দুইটি, শেষটি দেবেন্দ্র বিশুকে। সবকটি ছয়ই এই বাঁহাতি মেরেছেন লং-অন থেকে লং-অফের মাঝ দিয়ে। পলের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন সৌম্য। 

    সৌম্যর মতো তামিমও ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৬২ বলে, ছয় না মারলেও তিনি চার মেরেছেন ৯টি। আগের ম্যাচে ফিফটির পরই থেমেছিলেন, তবে এদিন থাকলেন অপরাজিত। ৮১ রান করেছেন ১০৪ বলে, ওপেনিং সঙ্গী যেখানেই নামুন না কেন, তামিম যেন থাকছেন নির্বিকারই! সৌম্যর উইকেটের পর মুশফিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন তামিমই। 

    এর আগে একদিকে ছিলেন শেই হোপ, অন্যদিকে সব উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। তাদের ১৯৮ রানের মাঝে হোপ একাই করেছেন অপরাজিত ১০৮, যা ৫৪.৫৫ শতাংশ। এর আগের ম্যাচে হোপ করেছিলেন দলের ৫৭.০৩ শতাংশ রান। হোপের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারলন স্যামুয়েলসের, ১৯।

    শুরুতে মিরাজকে সামলাতে পারেননি অন্য উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা, মাশরাফির কাটারে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে তাদের, সাকিবের বিরুদ্ধে আক্রমণের ফলটাও ভাল হয়নি। অবশ্য হোপ যেন ব্যাটিং করছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কন্ডিশনে, একপ্রান্তে সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝেও তিনি ছিলেন নির্বিকার। মিরপুরের ইনিংসটিরই রেপ্লিকা যেন সিলেটের এটি, একসময় তো সঙ্গীর অভাবে সেঞ্চুরিটা মিস করবেন বলেও মনে হচ্ছিল! সাকিবকে ছয় মেরে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি অবশ্য ঠিকই পূর্ণ করেছেন এই ডানহাতি, আগের ম্যাচের মতো এদিনও বেশিরভাগ রানই এসেছে তার ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারে। 

    মিরাজের ৮ ওভারের প্রথম স্পেলে শিকার দুইটি- চন্দ্রপল হেমরাজ প্রায় হাফ-ট্র্যাকারে ব্যাকফুটে গিয়ে স্ল্যাশ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন, ড্যারেন ব্রাভো আরেকবার অস্বস্তিতে ভুগেছেন, হোপের সঙ্গে ৪২ রানের জুটির পর ২৬ বলে ১০ রান করে ফ্রন্টফুট সরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে মিস করে হারিয়েছেন লেগস্টাম্প। এর আগে দুই ইনিংসে তিনি করেছিলেন ৫১ বলে ১৯ ও ৪৩ বলে ২৭।

    দ্বিতীয় স্পেলে মিরাজ ফিরে নিয়েছেন আরও দুইটি- তার মধ্যে একটি তার ‘নিজস্ব সম্পত্তি’- হেটমায়ার, এই বাঁহাতি এ সিরিজে সাত ইনিংসে ছয়বারই আউট হলেন মিরাজের বলে, এবার হয়েছেন লাইন ধরে রাখা বলে এলবিডব্লিউ। টার্ন করা বলে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড উইন্ডিজ অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল, যেটা নিয়ে একচোট বিতর্ক করে গেছেন অতিরিক্ত খেলোয়াড় কার্লোস ব্রাথওয়েট। তাতে অবশ্য ভাগ্য বদলায়নি পাওয়েলের। এর আগে সাইফউদ্দিনের ফুললেংথের বলে শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন স্যামুয়েলস, স্টাম্প উড়ে গেছে রীতিমতো। ৩ রানে ৩ উইকেট হারানো সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি তারা।  

    সাকিবের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন রসটন চেজ, হোপের সঙ্গে আশাজাগানিয়া ৩৪ রানের জুটির পর। ফ্যাবিয়েন অ্যালেন প্রথম ১৪ বলে রান করতে পারেননি, ১৫তম বলে সাকিবকে ছয় মারার এক বল পর সুইপে আবার মারতে গিয়ে মিডউইকেটে সামনে ঝুঁকে পড়া মিঠুনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো হোপকে সঙ্গ দেওয়ার আশা দিচ্ছিলেন কিমো পল, মাশরাফির কাটারে তার স্টাম্প এলোমেলো হওয়ার আগে জুটিতে এসেছে ২৮ রান। এরপর ক্রিজে আটকে থেকে এলবিডব্লিউ হয়েছেন কেমার রোচ। শেষ ১০ ওভারে উইন্ডিজ তুলেছে ৪৭ রান। 

    তবে তামিম-সৌম্যর কাছে যথেষ্ট হয়নি সেটা, যথেষ্ট হয়নি হোপের একা লড়ে যাওয়া ইনিংস। যথেষ্ট হওয়া তো দূরের কথা, উইন্ডিজ তো করতে পারেনি লড়াই-ই!