২০১১ সালের পর থেকে প্রতি ম্যাচেই মাশরাফির মনে হতো, হয়তো এবারই...
সরাসরি কিছু বলেননি। বিদায় শব্দটা উচ্চারণ করেননি একবারও। আগেই বলেছিলেন, বিশ্বকাপের শেষে ভেবে দেখবেন বিদায় বলবেন কি না। যদি হ্যাঁ-ই বলেন, তাহলে এটাই দেশের মাটিতে মাশরাফি বিন মুর্তজার শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচে নামার আগে কি আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করেনি তাঁর মনে? বা এই সিরিজেও অধিনায়ক আর খেলোয়াড় হিসেবে যেভাবে পারফর্ম করলেন, বিশ্বকাপের পরেও তো চাইলে খেলা চালিয়ে যেতে পারেন। মাশরাফি অবশ্য সিরিজ জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে কোনো ‘ফ্লাইটেই’ প্রলুব্ধ হলেন না, খোঁচা দিলেন না অফ স্টাম্পের বাইরে। বরং হাসতে হাসতেই বললেন, ২০১১ সালের পর থেকে প্রতি ম্যাচেই মনে হতো, এটিই হয়ে যেতে পারে তাঁর শেষ ম্যাচ।
খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠা অবশ্য স্বাভাবিক। এই সিরিজটা সম্ভবত অধিনায়ক আর খেলোয়াড় হিসেবে মাশরাফির জন্য সবচেয়ে বড় অগ্নিপরীক্ষা ছিল। রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দিয়ে তুমুল আলোচনায় ছিলেন, এতোদিনের ভালোবাসার পাশাপাশি মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এত ডামাডোলের মধ্যে মনযোগ কতটা ক্রিকেটে রাখতে পারবেন সেটাই ছিল প্রশ্ন। প্রথম ম্যাচ শেষেই উত্তরের ৫০ ভাগ দিয়ে দিয়েছিলেন। তখনই বলেছিলেন, ১৮ বছর ধরে খেলছেন, এতো সহজে ফোকাস নড়ে যাওয়ার কথা নয় তাঁর। কিন্তু এমন সিরিজ জয়ের পর রাজনীতির পাশপাশি খেলা চাইলে কি বিশ্বকাপের পরও চালিয়ে যেতে পারেন না?
মাশরাফি তা নিয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তবে স্বীকার করেছেন, এই সিরিজটা তাঁর কাছে অন্যকমই ছিল। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কথা প্রথম ম্যাচেই পরেই বলেছিলেন। আজ আবার বললেন, পরিস্থিতি যদি এমন না হতো তাহলে অন্তত একটা ম্যাচে বিশ্রাম নিতেন। কিন্তু অবসরের সিদ্ধান্তের কথা বলতে গিয়ে কিছুটা দার্শনিক হলেন, ‘সিদ্ধান্তের কথা বললে মানুষের জীবনে না ঘটে সেটা কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যেটা ঘটার সেটা ঘটবেই। আর যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা আপনার পক্ষে বা বিপক্ষে যাবে তাও জানে না।’
এরপরও প্রশ্নটা করা হলে মাশরাফি আবার আগেই কথাই বললেন, তাঁর ফোকাস এতোদিন খেলায় ছিল। এখন সেটা শেষ করে অন্য কিছুতে মন দেবেন। আবার খেলায় ফিরলে তখন হয়তো এটা নিয়ে ভাববেন।
কিন্তু আজ মাঠে নামার আগে কি শেষের একটা অনুভূতির তার মনের গভীরে কোথাও টোকা দেয়নি? মাশরাফি খানিকটা হেসেই বললেন, ‘২০১১ সালের পর থেকেই সিরিয়াসলি মনে হচ্ছিল, আল্লাহ না করুক যদি হাঁটুর কিছু হয়ে যায়...।’ তার আগেই হাঁটুতে সাতবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে, যেভাবে খেলেছেন সেটা বিস্ময়েরই বটে। মাশরাফি বললেন, শেষ-টেশ নিয়ে এখনও সেভাবে ভাবেননি, ‘শেষ কি না সেটা এখনই বলতে পারচি না। কখন এত গভীরভাবে ভাবিনি। সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আছে, সেসবের জন্য তৈরি হতে হবে। আর আগেই বলেছি, আমি ২০১৯ বিশ্বকাপের পরেই আমার সিদ্ধান্ত জানাব। যদি শেষ ম্যাচ খেলার পর মনে হয় থামা উচিত তাহলে আমি বলে দেব। আর যদি মনে হয় পারছি তাহলে রিভিউ করে বলব। আশা করি, সেটা দেশের মাটিতেই হবে। তার আগ পর্যন্ত আসলে এটা নিয়ে আমি ভাবতে চাই না।’ এরপরেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘আপনারা অত বিভ্রান্ত না হয়ে একটু রিল্যাক্সড থাকেন।’
বছরের শেষেও নিজের শেষ নিয়ে ধোঁয়াশাটা রেখেই দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।