• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    হেভি মেটাল ব্যাটিং, ক্ল্যাসিকাল সাকিবে সিরিজে সমতা বাংলাদেশের

    হেভি মেটাল ব্যাটিং, ক্ল্যাসিকাল সাকিবে সিরিজে সমতা বাংলাদেশের    

    বাংলাদেশ ২১১/৪, ২০ ওভার 
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭৫ অল-আউট, ১৯.২ ওভার 
    বাংলাদেশ ৩৬ রানে জয়ী 


    মিরপুরের শীতের বিকেলে প্রথমে হেভি মেটাল ব্যাটিং করলো বাংলাদেশ। লিটন দাসের লিড গিটার দিয়ে শুরু, এরপর বেস গিটার নিয়ে তাতে যোগ দিয়েছেন সৌম্য সরকার। সবশেষে মাহমুদউল্লাহর ভোকালের সঙ্গে ড্রামস নিয়ে ‘কোরাম’ পূর্ণ করেছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার ইনিংসে ছাড়িয়ে গেছে ২০০। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বেড়েছে এরপর, সাকিব আল হাসান শুরু করছেন স্পিন-ক্ল্যাসিকাল। ব্যাটিংয়ের ড্রামস ছেড়ে এবার যেন ধরলেন তানপুরা। উইন্ডিজরাও চালালেন হেভি-মেটাল ব্যাটিংয়ের চেষ্টা, তবে ততক্ষণে আবেশটা বদলে গেছে। সাকিবের মোহে তাই হারিয়ে গেছে সেসব।

    বাংলাদেশ ১০ ওভারে ৯৯ রান তুলেছিল ১ উইকেট, উইন্ডিজ তুললো ৩ উইকেটে ৯৭। তবে নিয়মিত উইকেট হারানো কাল হলো তাদের। শেই হোপের ১৯ বলে ৩৬ রানের পর রভম্যান পাওয়েলের ঝড়ো ফিফটিতে যথেষ্ট ঝঙ্কার ওঠেনি, কিমো পলের ১৬ বলে ২৯ রানও তুলতে পারেনি কিছুই। ৩৬ রানে জিতে ঠিকই সিরিজে সমতা এনেছে বাংলাদেশ। 


    লিটনে ইন্ট্রো

    কটরেলকে এক ওভারে লিটন মারলেন তিন চার, পরের ওভারে ব্রাথওয়েটকে পরপর দুই বলে দুই ছয়। প্রথমটা প্যাডের ওপর থেকে ফাইন লেগ দিয়ে, পরেরটা স্কয়ার লেগ দিয়ে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে। একটা সময় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন, ওশান থমাসের পর পর দুই বলে দুই ছয়ে। এরপর দুই ওভারে খানিকটা স্লথ হয়ে যান, শেষ পর্যন্ত ফিফটি পেয়েছেন ২৬ বলে, ব্রাথওয়েটকে চার মেরে। ৫৫ রানে একটা জীবনও পেয়েছিলেন, তবে থেমেছেন ৩৪ বলে ৬০ করে। তার আগে 'পারফেক্ট-কনসার্ট'-এর দারুণ ইন্ট্রোটা বাজিয়ে গেলেন লিটন, যা শুনেই বুঝা গেল, পরের সময়ে কী হতে চলেছে। তামিম শুরুতে ফিরলেও লিটনকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া সৌম্য করলেন ২২ বলে ৩২। 


    ‘টেকনিক্যাল-ফল্ট’ কাটিয়ে আবার ঝঙ্কার

    প্রথমে সৌম্য, কটরেলের লেংথ বলে টেনে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে কার্লোস ব্রাথওয়েটের দুই-দফার চেষ্টায় দারুণ ক্যাচ। সেই ওভারের শেষ বলে কটরেলের কাট-ব্যাক করে ঢোকা বলে বোল্ড লিটন। পরের ওভারে থমাসকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়লেন মুশফিক। ১০ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারালো বাংলাদেশ, উইন্ডিজ-পেসের জুজুটা যেন ফিরল আবার। সেই জুজু কাটাতে চারের নামতা পড়া শুরু করলেন মাহমুদউল্লাহ, মুখোমুখি প্রথম তিন বলেই কটরেলকে মারলেন চার। সাকিব ব্রাথওয়েটের ওভারে চার-ছয় মেরে দ্রুত পৌঁছে গেলেন বিশে। সেই ওভারে সাকিব একটা জীবন পেলেন, ব্রাথওয়েটের আবেদনে সাড়া না দিয়ে আম্পায়ার দিয়েছিলেন ওয়াইড। সুযোগটা হাতছাড়া করতে ছাড়েননি সাকিব, পলের পরের ওভারে মেরেছেন তিনটি চার। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৭১ রান, সাকিব-মাহমুদউল্লাহ ১৩ রান-রেটে ৭ ওভারে তুলেছেন ৯১। 


    ক্ল্যাসিকাল-সাকিব

    স্পিনে প্রথম ওভারে ব্রেকথ্রু পেয়েছিল উইন্ডিজ, নিজেকে এনে সেটা পেলেন সাকিব আল হাসানও। তার নিচু হতে থাকা বলে স্লগ করতে গিয়ে খাড়া ওপরে তুললেন নিকোলাস পুরান, পরের ওভারে মিরাজকে স্লগ করতে গিয়ে ডিপ-মিডউইকেটে ধরা পড়লেন শেই হোপ। হেটমায়ার-পুরানের জুটি জমছিল, দ্বিতীয় স্পেলে ফিরলেন সাকিব, করলেন জোড়া আঘাত। এবার টেনে মারতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দিলেন প্রথমে হেটমায়ার, এরপর আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে লিডিং-এজে শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়লেন ড্যারেন ব্রাভো। এরপরের ওভারে তার বেরিয়ে যাওয়া বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস করলেন ব্রাথওয়েট, তবে ক্রিজে পা ফেরানোর কথা যেন খেয়ালই ছিল না তার। বারকয়েকের চেষ্টায় গ্লাভসে জমিয়ে স্টাম্প ভাঙলেন মুশফিক, সাকিব তৃতীয় ওভারে পেলেন চতুর্থ উইকেট। মাঝে এক ওভারে রনি দিলেন ২০, পরের ওভারে লাইন ধরে রাখা বলে বোল্ড ফ্যাবিয়েন অ্যালেন। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট পেলেন তিনি। 


    স্পিন-ব্যান্ডের পেসার সদস্যরা 

    আবু হায়দার, ৮.২৫। সাইফউদ্দিন, ১০.৫০। মোস্তাফিজ, ১২.৫০। পেসাররা বোলিংয়ের তালটা ধরতে পারলেন না মোটেও। মোস্তাফিজ শেষে রভম্যান পাওয়েল ও কিমো পলকে ফেরালেন, প্রথমে এভিন লুইসের উইকেট দিয়ে ব্রেকথ্রু এনেছিলেন আবু হায়দার। তবে স্পিনারদের কাছে ম্লান হয়ে গেলেন তারা, বরং বলা ভাল- স্পিনারদের দারুণ পারফম্যান্সে পার হয়ে গেলেন তারা। সাকিব-মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ তিনজন মিলে ৭.২ ওভার করলেন, ৪৫ রানে নিলেন ৭ উইকেট!