বিপিএল দিয়েই উদাহরণ তৈরি করতে চান আশরাফুল
পাঁচ বছর আগে এই বিপিএল দিয়েই ফাঁস হয় তাঁর কেলেঙ্কারি। সেবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের হয়ে স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে মোহাম্মদ আশরাফুল। এর তিন বছর পর আবার ঘরোয়া লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, তবে বিপিএলের দরজা বন্ধই ছিল তাঁর জন্য। অবশেষে সেটি খুলে গেছে, এবার চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে অনুশীলন শুরু করেছেন আশরাফুল। মানছেন, বিপিএলে ভালো করলে তাঁর সামনে খুলতে পারে জাতীয় দলের দরজার। আর সেই বিপিএলেই প্রায়শ্চিত্ত করতে চান পুরনো পাপের।
২০১৩ সালে বিপিএলের ম্যাচ দিয়েই আশরাফুলের স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকাটা বেরিয়ে আসে প্রথম। এরপর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ ছিলেন তিন বছর। তার পর ঘরোয়া প্রথম শ্রেণি ও প্রিমিয়ার লিগে খেলার অনুমতি পেলেও বিপিএলের দরজা বন্ধই ছিল। আজ প্রথমবার অনুশীলন করেছেন চিটাগংয়ের হয়ে, শুভেচ্ছা বিনিময় করতেই বেশি পার হয়েছে এই দিনে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দেখা করেছেন, জাতীয় দলের পুরনো অনেক সতীর্থের সঙ্গে আলাপও করেছেন। আশরাফুল অবশ্য আশাবাদী, ‘'আমি যে অন্যায় করেছিলাম তার শাস্তি আমি পেয়েছি এবং সেটার কারণে কিন্তু আমি পাঁচ বছর নয় মাস বাইরে ছিলাম এই ফরম্যাট থেকে। যেহেতু আমি অন্যায় স্বীকার করেছি এবং প্রায়শ্চিত্ত পেয়েছি এবং গত দুটি বছর আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি। মোটামুটি ভালো ক্রিকেট খেলেছি, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ বলেন, বিসিএলের এই মৌসুমটি ভালো হয়েছে। সুতরাং আমি চেষ্টা করবো কারণ আমার যারা ভক্ত আছেন তাঁরা সকলেই অপেক্ষায় আছেন যেন আমি আবার ফিরে আসতে পারি কিনা। তাদের জন্য হলেও চেষ্টা করবো এই বিপিএলে ভালো খেলতে। এটাও একটা মনে করি যে আমাদের ক্রিকেটের জন্য ফিরে আসতে পারি, এটা একটি উদাহরণ তৈরি হবে যে দীর্ঘ সময় বাইরে থেকেও আবার পারফর্মেন্স দিয়ে ফিরে আসাটা এটাও একটা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।'’
গত বছর প্রিমিয়ার লিগে পাঁচটি সেঞ্চুরি করলেও দল কলাবাগানকে অবনমনের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি। আশরাফুল অবশ্য মনে করছেন, ওই সময় নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে তাঁর সেঞ্চুরিগুলো নজরে আসেনি, ‘সেভাবে যদি বলেন আমার নিষেধাজ্ঞা না থাকলে প্রিমিয়ার লীগে পাঁচটি সেঞ্চুরি নিয়ে হয়তোবা অনেক আলোচনা হতো। কিন্তু যেহেতু আমার নিষেধাজ্ঞা ছিলো এবং এই বিপিএল দিয়ে আমি আবারো খেলতে পারবো। আমার জাতীয় লীগটি খুব একটা ভালো হয়নি, তবে বিসিএলটি মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু আমার মূল ফোকাসটি ছিলো এই বিপিএলেই। কারণ এখানে ভালো কিংবা ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারলে অনেক সহজ হবে।’
বিপিএল মানে বড় মঞ্চ আর পাদপ্রদীপের আলোয় আসা। আশরাফুইল নিজেও সেটা জানেন ভালোমতোই, ‘হ্যাঁ, এটি সত্যি কথা যে, বাংলাদেশ দলের জার্সিটি আবারো পরতে চাই। সেটার জন্য সবথেকে বড় প্ল্যাটফর্ম এটি, আমি আগে থেকেই জানি এটি এবং সবাই জানে। আমি ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি এবং প্রথম দুই আসর বিপিএলে খেলেছিলাম। সেখানে চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ ছিলাম এবং ভালো খেলেছিলাম। চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে এবারও ভালো খেলার চেষ্টা করবো। দলটিও যেন ফলাফল পায় আমার পারফর্মেন্সের মাধ্যমে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।’
তাঁর অভিষেকের পর কেটে গেছে ১৮ বছর। আশরাফুলের বয়স এখনও অবশ্য ৩৫। তবে মনে করছেন, আরও চার-পাঁচ বছর অনায়াসে খেলে যেতে পারবেন, ‘যেহেতু আমি একজন ব্যাটসম্যান, সুতরাং আমি যদি ফিট থাকতে পারি, বিশ্বাস করি আরও চার-পাঁচ বছর খেলতে পারবো ইনশাল্লাহ। আপনি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দেখেন তাহলে দেখবেন অনেকেই আছেন এমন। সেটা নির্ভর করবে ফিটনেসের ওপরে। গত দুই বছরের থেকে আমি নিজেকে অনেক ফিট মনে করছি সবকিছুর দিক দিয়েই। ফিটনেস এবং পারফর্মেন্স ঠিক থাকলে যতো লম্বা সময় খেলা যায়। আর বাংলাদেশ দলে তো অবশ্যই খেলতে চাই। কারণ তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছি বাংলাদেশের হয়ে ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে হয়তো তখনও সুযোগ পেতে পারতাম। সামনে ২০১৯ বিশ্বকাপ রয়েছে, যদিও আমি সেটি নিয়ে চিন্তা করছি না। ’