আলিস-চমকে ঢাকার অবিশ্বাস্য জয়
স্কোর
ঢাকা ডায়নামাইটস ২০ ওভারে ১৮৩/৯ (পোলার্ড ৬২, সাকিব ৩৬, রাসেল ২৩; শফিউল ৩/৩৫, হাওয়েল/২৫, গাজী ২/২৮)
রংপুর রাইডার্স ২০ ওভারে ১৮১/৯ (রুশো ৮৩, মিঠুন ৪৯; আলিস ৪/২৬)
ফলঃ ঢাকা ২ রানে জয়ী
কাইরন পোলার্ড ঝড় তুললেন। রাইলি রুশো ছাড়িয়ে গেলেন তাঁকেও। কিন্তু অখ্যাত আল ইসলাম আলিস ঠিক করলেন দিনটা নিজের করে নেবেন। যে ক্যাচ দুইটি ছেড়েছেন, সেগুলো ডুবিয়ে দিতে পারত দিনটা। কিন্তু এর পর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ফিরিয়ে দিয়েছেন রাইলি রুশোক। এরপর অভিষেকেই করেছেন হ্যাটট্রিক, বিপিএলের ইতিহাসেই যা তৃতীয়। তার চেয়েও বড় কথা, শেষ ওভারে ১৪ রান যখন দরকার, তখন বল করে এনে দিয়েছেন ২ রানের জয়।
শেষ ওভারেও যখন ১৪ রান দরকার, প্রথম দুই বলে দুই চার মেরে শফিউল ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাচ। শেষ ৩ বলে দরকার ৫ রান, কিন্তু অপু রান করতে পারলেন না। শেষ বলে দরকার হলো ৪, কিন্তু শফিউল নিতে পারলেন ১ রান। কে জানত, অভিষেকেই আলিস এমন একটা শেষ ওভার করবেন?
অথচ ম্যাচটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল রংপুরের। শেষ ৫ ওভারে ৪২ রান দরকার, রুশো ছিলেন ক্রিজে। কিন্তু আলিসের বলে আউট হয়ে গেলেন রুশো। পরের ওভারে সাকিব ফেরালেন বোপারাকে। তবে আলিসের শো মাত্র শুরু তখন। এরপরের ওভারে শুরুতে ফেরালেন মিঠুনকে, পরের বলে মাশরাফি বোল্ড। ফরহাদ রেজা হ্যাটট্রিক বলে ক্যাচ দিলেন স্লিপে, আলিস টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেই প্রথম বোলার অভিষেকে পেলেন হ্যাটট্রিক। বিপিএলে এর আগের দুই হ্যাটট্রিক ছিল মোহাম্মদ সামি ও আল-আমিন হোসেনের।
তার আগে ১৮৩ রানের লক্ষ্যের জন্য যার দিকে সবচেয়ে বেশি তাকিয়ে ছিল রংপুর, তিনিই অবশ্য কিছু করতে পারলেন না আজ। ক্রিস গেইলের বিদায়টা অবশ্য এর চেয়ে নাটকীয় হতে পারত না। ছয় মারার পর এলবিডব্লু হয়েছিলেন শুভাগত হোমের বলে, কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন। পরের বলটা আবার মারলেন, ছয় হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে রাসেল অবিশ্বাস্যভাবে বলটা ছয় হয়ে যাওয়ার আগেই ফেরত পাঠান ভেতরে। টেলিপ্যাথিক যোগাযোগে জায়গামতো ছিলেন পোলার্ড, ছয়ের বদলে আউট গেইল, তার আগে দিলেন কাষ্ঠ এক হাসি।
তবে রুশো ঠিক করলেন ঝড়টা নারাইনের ওপর দিয়েই চালাবেন। এক ওভারে নিলেন ২২ রান, টি-টোয়েন্টিতেই নারাইন এর চেয়ে একবার মাত্র ওভারে বেশি রান দিয়েছেন। ২৯ বলে ফিফটি হলো রুশোর, এবারের আসরে দ্বিতীয়। তবে ঝড় তখনো চলছে। সাকিবের ওভারে পর পর দুই চার, এরপর রুবেল আর রাসেলকে মারলেন দুই ছয়। টুর্নামেন্টের প্রথম সেঞ্চুরিও হয়ে যাবে মনে হচ্ছিল। কিন্তু এর পরেই অভিষিক্ত আলিস ইসলামের বলে হলো সর্বনাশ, ৪৪ বলে ৮৩ রানের ইনিংসটা শেষ হলো স্টাম্পড হয়ে। কে জানত, সেখান থেকে ম্যাচ এমনভাবে ঘুরে যাবে!
তার আগে ঢাকার হয়ে ঝড়টা তুলেছেন কাইরন পোলার্ড। হজরতউল্লাহ জাজাই আজ কিছু করতে পারলেন না। সুনীল নারাইনও ব্যর্থ। দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নিলেন কাইরন পোলার্ড। ৩৬ বলে ৬২ রানের বিস্ফোরক একটা ইনিংস খেললেন। সাকিব আল হাসান তাতে সঙ্গ দিয়েছেন, আর শেষে আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটে দেখেছে আরেকটি ছোট্ট ঝড়। আর তাতেই ঢাকা পেয়েছে ১৮০ রানের পুঁজি।
টসে জিতে বোলিং নিয়েছিলেন রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দ্বিতীয় ওভারে প্রথম বলেই উইকেট সোহাগ গাজীর, ১ রান করে বোল্ড জাজাই। নারাইন মাশরাফির বলে দুই চার মেরে শুরু করেছিলেন, কিন্তু ওই পর্যন্তই। মাশরাফিই হাসলেন শেষ হাসি, পয়েন্টে ৮ রানে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন নারাইনকে। রনি তালুকদারের ৮ বলে ১৮ রানের ইনিংসটা শেষ হলো দুর্দান্ত এক ক্যাচে। এক্সট্রা কাভার থেকে অনেকটা দূড়ে যে ক্যাচ ধরলেন, এবারের বিপিএলের অন্যতম সেরাই। ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কাঁপছে ঢাকা।
মিজানুর ও সাকিব আল হাসান অবশ্য পালটা আক্রমণ করারই সিদ্ধান্ত নিলেন। দুজনের জুটিতে ৩১ রান উঠল দ্রুত। এরপর হাওয়েলের বলে ১৫ রানে এলবিডব্লু। এরপর পোলার্ড নামলেন, ম্যাচের মোড়ও ঘুরে যাওয়া শুরু ওখান থেকেই।
মিরপুরে ছুটির দিনে গ্যালারিভর্তি ২৫ হাজার দর্শক দেখলেন বল আছড়ে পড়ছে সীমানার ওপারে। পোলার্ডের বেশির ভাগ তোপ গেছে নাজমুল অপুর ওপর। প্রথম ওভারে দুই চার, পরের ওভারে অপুকে মারলেন তিন ছয়। দেখতে দেখতেই ২১ বলে পৌঁছে গেলেন ফিফটিতে, এবারের বিপিএলে যা সবচেয়ে দ্রুততম। শফিউলের বলে আরও একটি চার-ছয়ে পৌঁছে গেলেন ষাটের ঘরে। হাওয়েলের বলে ডিপ মিড অনে ক্যাচ দিলেন ৬২ রানে।
সাকিব অবশ্য দেখেশুনেই খেলছিলেন, শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৩৬ রান করে আউট হয়ে গেলেন। রাসেল অবশ্য ঝড় শুরু দিয়েছেন এর মধ্যেই, ফরহাদ রেজার বলে বিশাল দুই ছয় দিয়ে। শেষ ওভারে গিয়ে যখন আউট হলেন, ১৩ বলে করেছেন ২৩। অন্য পাশে কেউ সেভাবে ব্যাট চালাতে না পারায় ২০০ হয়নি ঢাকার, শেষ পর্যন্ত থামতে হয়েছে ১৮২ রানে।