সুপার ওভারে চিটাগংকে জেতালেন ফ্রাইলিঙ্কই
স্কোর
খুলনা টাইটান্স ২০ ওভারে ১৫১/৬ (মালান ৪৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৩; সানজামুল ২/৩৭)
চিটাগং ভাইকিংস ২০ ওভারে ১৫১/৮ (ইয়াসির ৪১, মুশফিক ৩৪; ব্রাথওয়েট ২/৩০, শরিফুল ২/৩১ )
ফলঃ ম্যাচ টাই, সুপার ওভারে ১ রানে জয়ী চিটাগং
এমন ম্যাচ আগে দেখেনি বিপিএল, কথাটা এখন বলাই যায়। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম টাইয়ের পর ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে, সেখানেও প্রায় টাই হতেই চলেছিল। শেষ পর্যন্ত এবারের বিপিএলে বলে-ব্যাটে উজ্জ্বলতমদের একজন রবি ফ্রাইলিঙ্ক সুপার ওভারে চিটাগংকে এনে দিয়েছেন ১ রানের জয়। টানা চার ম্যাচ হারল খুলনা, আর তিন ম্যাচে এটি চিটাগংয়ের দ্বিতীয় জয়।
খুলনার ছুঁড়ে দেওয়া ১৫১ রান তাড়া করে শেষ ওভারে চিটাগংয়ের দরকার ১৯ রান, ক্রিজে রবি ফ্রাইলিঙ্কের সঙ্গে নাঈম হাসান। বিস্ময়করভাবে তা করতে এলেন আরিফুল হক। প্রথম বলটা ডট হলো, পরের বলে নাঈম মারলেন ছয়। সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন ফ্রাইলিঙ্ককে, শেষ ৩ বলে দরকার ১৩ রান। ফ্রাইলিঙ্ক পর পর দুই বলে দুই ছয় মারলেন, শেষ বলে দরকার ১ রান। কিন্তু বলটা ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না, উল্টো রান আউট হয়ে গেলেন। খুলনা টাইটান্স ও চিটাগং ভাইকিংসের ম্যাচটা টাই হলো, বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম দেখল সুপার ওভার।
সুপার ওভারে বল করতে এলেন জুনাইদ খান, প্রথম তিন বলের মধ্যে দুইটি চার মারলেন ডেলপোর্ট ও ফ্রাইলিঙ্ক। কিন্তু এর পরেই জুনাইদ ফিরে এলেন দারুণভাবে, চতুর্থ বলে বোল্ড করলেন ফ্রাইলিঙ্ককে। পঞ্চম বলে মুশফিক স্লোয়ার বাউন্সারে নিলেন ১ রান, শেষ বলে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে মাত্র ১ রান ইলেন ডেলপোর্ট। চিটাগং নিল ১১ রান, শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ১২ রান।
খুলনার হয়ে ডেভিড মালান আর ব্রাথওয়েট নামলেন, দ্বিতীয় বলে মালান নিলেন চার। শেষ ৩ বলে দরকার ৫ রান, চতুর্থ বলে রান আউট ব্রাথওয়েট। পরের দুই বলে স্টার্লিং নিতে পারলেন ৩ রান, চিটাগং পেল ১ রানের জয়।
তার আগে চট্টগ্রামের হয়ে মোহাম্মদ শাহজাদ দ্বিতীয় ওভারে পর পর দুই ওভারে দুই চার মেরে শুরু করেছিলেন, কিত্নু টিকতে পারলেন না বেশিক্ষণ। জুনাইদ খানের বলে আউট হয়ে গেলেন ১০ বলে ১০ রান করে। মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় সুযোগ পেয়ে ইয়াসির আলী জানান দিলেন, ঘরোয়া লিগে তাঁর ওপর আলাদা করে চোখ রাখতে হবে। বিসিএল, জাতীয় লিগ থেকে ইমার্জিং কাপ সবখানেই রান পাছেন। জুনাইদকে পুল করে মারলেন চার, স্টার্লিংয়ের বল ইনসাইড আউট খেলে মারলেন দারুণ একটা ছয়। ক্যামেরন ডেলপোর্টের সঙ্গে জুটিটা জমে উঠছিল, কিন্তু ১৬ বলে ১৭ রান করে আউট হয়ে গেলেন তাইজুলের বল।
ইয়াসির অবশ্য ততক্ষণে স্বচ্ছন্দ। ফিফটিটা যখন পেয়ে যাবেন মনে হচ্ছিল, তখনই ভুলটা করে ফেললেন। শরিফুলের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন ৩৪ বলে ৪১ রান করে। সিকান্দার রাজা কোনো রান না করেই আউট, সমীকরণটা হঠাৎ কঠিন হয়ে গেল চিটাগংয়ের জন্য। মুশফিক ছিলেন, প্রিয় স্লগ সুইপে দুইটি ছয়ও মেরেছিলেন। অন্য পাশে মোসাদ্দেক হোসেন অবশয তাঁকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারলেন না, আউট হয়ে গেলেন ১২ রান করে। কিন্তু তিন ওভারে যখন ৩২ রান দরকার, মুশফিকের হঠাৎ করেই মতিভ্রম। ব্রাথওয়েটকে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিলেন, ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস শেষের সঙ্গে আরও নিভু নিভু চাটগাঁর আশার প্রদীপ। কিন্তু ফ্রাই;ইঙ্কের ১৩ বলে ২৩ রানের ইনিংসে চিটাগং পেল নতুন প্রাণ।
তার আগে খুলনা টাইটানসের শুরুটা মন্দ হচ্ছিল না বটে, কিন্তু গতকালের সেই হেভি মেটাল ব্যাটিং দেখা গেল কই? পল স্টার্লিং ও জুনাইদ সিদ্দিকী শুরুটা দারুণ করেছিলেন, ৩ ওভারের মধ্যে তুলে ফেলেছিলেন ৩০ রান। এর পরেই ছন্দপতন। নাঈম হাসানের দুর্দান্ত এক ওভারে আউট হলেন স্টার্লিং, ১০ বলে ১৮ রান করে।
এরপরেই হঠাৎ করে যেন স্লথ হয়ে গেল খুলনার ইনিংস। জুনাইদ ৬ বলে ১৬ রান করে ফেলেছিলেন, শেষ পর্যন্ত আউট হলেন ১৫ বলে ২০ রান করে। রবি ফ্রাইলিঙ্ক এবারের বিপিএলে উইকেট নিয়েই যাচ্ছেন, আজ জুনাইদ তাঁর প্রথম শিকার। ৪১ রানে ২ উইকেট হারাল খুলনা, এরপর মাহমুদউল্লাহ ও ডেভিড মালান হাল ধরলেন।
উইকেট ছিল মন্থর, দুজনের ব্যাটে রান তাই খুব বেশি আসছিল না। দুজন তৃতীয় উইকেটে ৭৭ রান যোগ করলেন বটে, তবে তা এসেছে প্রায় ১১ ওভারে। মালান আবু জায়েদের বলে ছয় মেরেছিলেন, বড় শট বলতে ওই একটিই। শেষ পর্যন্ত আউট হলেন ৪৩ বলে ৪৫ রান করে। কার্লোস ব্রাথওয়েট নেমে আউট হতে পারতেন দ্বিতীয় বলেই, কিন্তু ফাইন লেগে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন খালেদ, উলটো বানিয়ে দিয়েছেন চার। পরের বলে ছয় মেরেছেন ব্রাথওয়েট, কিন্তু চিটাগংয়ের আফসোস বড় হতে দেননি। ৫ বলে ১২ রান করে আউট হয়ে গেছেন সানজামুলের ওভারে, পরের বলেই ৩১ বলে ৩৩ রান করে মাহমুদউল্লাহ আউট। শেষ দিকে শান্ত-আরিফুলরা পারলেন নবা রান রেট বাড়িয়ে নিতে, খুলনা শেষ পর্যন্ত করল ১৫১। কে জানত, সেই ম্যাচের পর এমন নাটক হবে?