পুরান-ঝড়ও থামাতে পারল না ঢাকার উড়ান
ঢাকা ডায়নামাইটস ১৭৩/৭,২০ ওভার (রনি ৫৮, নাঈম ২৫*, তাসকিন ৩/৩৮, তানভীর ১/২১)
সিলেট সিক্সারস ১৪১/৯, ২০ ওভার (পুরান ৭২, তাসকিন ১৮*, রুবেল ৩/২২, সাকিব ২/৩৪)
ডায়নামাইটস ৩২ রানে জয়ী
শুধু এই শটটার কথা ভাবুন। রুবেলের শর্ট অফ আ লেংথ বলে ফ্রন্টফুট সরিয়ে ব্যাট চালালেন, বল লং-অফ পেরিয়ে ছয়। পরের বলে রুবেল গেলেন ফুললেংথে, স্লাইস করে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছয় এবার। নিকোলাস পুরান মিরপুরে ছয়-বৃষ্টি নামিয়েছিলেন আজ। তিনি সীমানা উড়ালপথে ছাড়িয়ে গেলেন ৯ বার। তবে এর আগে শুরুর চার ব্যাটসম্যানই সীমানা পেরিয়ে যেতে চেয়ে ধরা পড়েছেন ভেতরেই। তাদের তৈরি করা গর্তের ওপর দাঁড়িয়ে পুরানের ৪৭ বলে ৭২ রানের ইনিংসটাও তাই যথেষ্ট হলো না সিলেটের। তাসকিন আহমেদের দারুণ এক ওভারে প্রথম ইনিংসে দারুণভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরও তারা আটকাতে পারলো না ঢাকার জয়রথ। চার ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত অপরাজিত ডায়নামাইটস তাই উড়ছেই।
১৭৪ রানের লক্ষ্যে সিলেটের শুরুটাই হলো হতাশাজাগানিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার সুইপ করে সাকিবকে ছয় মারার পর আবার একই চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে পোলার্ডের হাতে দিলেন ক্যাচ। এরপর লাইনে ধরা পড়েছেন আরও তিনজন- শুভাগত হোমের বলে আফিফ হোসেন, সুনীল নারাইনের বলে লিটন দাস, সাকিব আল হাসানের বলে নাসির হোসেন। ৬ ওভারে ৩৭ রান তুলতে সিলেটের নেই ৪ উইকেটে।
এরপরও সাব্বির যেন পরিস্থিতি বুঝলেন না, রুবেল হোসেনকে তেঁড়েফুঁড়ে মারতে এসে এজড হলেন তিনি। ৩৭ রানেই ৫ম উইকেট হারালো সিলেট। কাপালি বোল্ড হলেন রুবেলের নীচু হওয়া বলে, ৫৬ রানের মাথায়। সোহেল তানভীরও মারতে গিয়েই আউট হয়েছেন, তবে পার্থক্য, যেদিক মারতে গিয়েছিলেন বল এজড হয়ে গেছে তার বিপরীতে, পয়েন্টে ধরা পড়েছেন আলিসের বলে। আগের ম্যাচে ঢাকার বিস্ময়-বোলার এদিনও ছিলেন অসাধারণ, পিচের ধীরগতির সঙ্গে তার কৌশলি বোলিং মিলেমিশে হয়েছে একাকার। ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৪ রান।
পুরান ঝড় শুরু হয়েছে এরপর। একটি ছয় যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছিল আরেকটিকে, বল হচ্ছিল ‘নিখোঁজ’। তার সঙ্গটা উপভোগ করছিলেন তাসকিন আহমেদ, তবে ঢাকার জয়ের সঙ্গে সিলেটের পার্থক্য যে শুধু ওই পুরানের উইকেটই, সেটা তখন পরিস্কার। রুবেলকে দুই ছয়ের পর শর্ট বলে হুক করতে গিয়ে আকাশে তুললেন বল, ঢাকা আরেকবার উড়লো আকাশে। রুবেল ৩ ওভারে শেষ পর্যন্ত দিয়েছেন ২২ রান, নিয়েছেন ৩ উইকেট। পুরানের আগে শুভাগতর বলে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন সন্দিপ লামিচানে।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিং করা ঢাকার শুরুটা অবশ্য ভাল ছিল না। আগের দুই ম্যাচ ঝড় তোলা হযরতউল্লাহ জাজাই এবার ফিরেছেন শুরুতেই। সোহেল তানভীরের স্লোয়ারে ক্লিপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন ইনিংসের চতুর্থ বলে। ৬ষ্ঠ ওভারে নাসির দিয়েছেন ১৫ রান, দুই চারের সঙ্গে নারাইন মেরেছেন একটি ছয়, পাওয়ারপ্লেতে বোলিংয়ের ঠিক লেংথটা খুঁজে পাননি নাসির। এর আগে নারাইনের বিপক্ষে একটা রিভিউ ব্যর্থ হয়েছে সিলেটের, বলে পড়েছিল লেগস্টাম্প লাইনের বেশ বাইরে। পাওয়ারপ্লেতে উঠেছিল ৫০। অবশেষে থেমেছেন নারাইন, কাপালিকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ২১ বলে ২৫ রান করে। ভেঙেছে রনি তালুকদারের সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি।
রনি অন্যপাশে ঝড় তুলেছিলেন আগেই। মিডউইকেটে তাসকিনকে ছয় মেরে শুরু করেছিলেন, এরপর তাকে দারুণ টাইমিংয়ে মেরেছেন দুই চার। লামিচানেকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মেরেছেন ছয়। সবচেয়ে বড় ঝড়টা তুলেছিলেন ১২তম ওভারে। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে লং-অফ দিয়ে ছয়ের পর টানা তিন চার- এর মধ্যে প্রথমটি দিয়ে ছুঁয়েছেন ফিফটি। আরেকবার ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে লং-অনে নিকোলাস পুরানের দারুণ ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে রনি করেছেন ৩৪ বলে ৫৮ রান।
কিছুটা রনির মতোই (তবে বেশ দ্রুত) পরিণতি হয়েছে সাকিবের। আল-আমিনকে জোড়া চারের পর আবার তুলে মারতে গিয়ে লিডিং-এজড হয়েছেন তিনি, অনেক ওপরে ওঠা ক্যাচটা ভাল নিয়েছেন উইকেটকিপার লিটন দাস। সাকিব করেছেন ২৩, ১৭ বলে। রংপুরের সঙ্গে ম্যাচের মতো মোটামুটি একইরকম অবস্থায় নিজেদের আবিষ্কার করেছিল ঢাকা, ১৪ ওভার শেষে ১২৩ রান, ক্রিজে কাইরন পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেল। তবে তাসকিনের ১৫তম ওভার বদলে দিল সব। তাসকিন সে ওভারে দিলেন ৪ রান। তবে রানসংখ্যার কথা ভুলে যান, তাসকিন নিলেন ৩ উইকেট, ৫ বলের ব্যবধানে।
প্রথমে ফুললেংথের বলে চেক শট খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন রাসেল, প্রথম দফায় যেটাকে দেখে মনে হচ্ছিল বাম্প-বল। ফুললেংথ থেকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন পোলার্ডও। শুভাগত হোমকে ড্রাইভের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন, তিনি হয়েছেন এজড।
তবে সেখান থেকেও ঢাকা ১৭৩ পর্যন্ত গেছে নুরুল হাসানের ১০ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ও মোহাম্মদ নাইমের ২৩ বলে ২৫ রানের ইনিংসে। শেষ ওভারে ১৬ রান তুলে ইঙ্গিতটা দিয়ে রেখেছিল ঢাকা, এ ম্যাচ সহজে ছাড়ছে না তারা।
পুরান ঝড়ের পরও শেষ পর্যন্ত জয়টা তো সহজই হলো তাদের!