ধীরগতির উইকেটের ফাঁদ পেরিয়ে খুলনার প্রথম জয়
খুলনা টাইটানস ১২৮/৯, ২০ ওভার (আরিফুল ২৬, মালান ১৫, মিরাজ ২/২১, সানি ২/২৫)
রাজশাহী কিংস ১০৩ অল-আউট, ১৯.৫ ওভার (মিরাজ ২৩, সানি ১৫, তাইজুল ৩/১০, জুনাইদ ৩/২৬)
খুলনা ২৫ রানে জয়ী
ধীরগতির উইকেট টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের কাছে ফাঁদের মতো। বড় শটের ইচ্ছা যেন দমিয়ে রাখতে হয় জোর করে, অপেক্ষা করতে হয় আরও বেশি। যে অপেক্ষাটা করতে চাইলেন না রাজশাহীর ব্যাটসম্যানরা। ১২৯ রানের লক্ষ্যেও তাই তারা থামলেন জয় থেকে ২৫ রান দূরেই। আর খুলনা পেলো টানা চার ম্যাচ হারার পর প্রথম জয়। সিলেটের ধীরগতির উইকেট পক্ষে এলো তাদের।
খুলনার বোর্ডে বেশি রান জমা নেই, তবে রাজশাহীর আগের ম্যাচগুলোর ব্যাটিংও খুব আশাজাগানিয়া ছিল না। এবার ওপেনিংয়ে এলেন লরি এভান্স, তবে পার্থক্যটা গড়তে পারলেন না। তিনি পুল করতে গিয়ে মিসটাইমিংয়ে ধরা পড়েছেন সরাসরি মিড-উইকেটে। তিনে এসেছিলেন মিরাজ, রাজশাহীর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ‘টাচ’-এ তাকেই মনে হচ্ছিল। ছয় মারলেন আপারকাটে, ব্যাকফুট পাঞ্চে চার মারলেন। চতুর্থ ওভারে ক্যাচ তুলেও বেঁচে গেলেন ব্রাথওয়েট ও শরিফুলের ভুল বুঝাবুঝিতে। শেষ পর্যন্ত তাইজুলকে স্লগ করতে গিয়ে দিয়েছেন ক্যাচ, ১৬ বলে ২৩ রান করে। এক বল পর বলের পিচিংয়ে না যেতে পেরে লং-অনে ব্রাথওয়েটের হাতে ধরা পড়েছেন সৌম্য, ব্যর্থ হয়েছেন আরেকবার। এর আগেই মুমিনুল হককে প্লাম্ব এলবিডব্লিউ করে ব্রেকথ্রু দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ৬ ওভারে রাজশাহী তুলতে পেরেছিল মাত্র ৩৩, ৪ উইকেটে।
এরপরও স্বস্তিতে ছিলেন না রাজশাহীর কেউ। জাকির স্লগ করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন মাহমুদউল্লাহর বলে, তাইজুলকে কাট করতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড রায়ান টেন ডেসকাটে। ১৬তম ওভারের শুরুতে জুনাইদকে চার মেরে বাঁধটা ভাঙতে চেয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ান জঙ্কার, তবে লো-ফুলটসে তুলে মারতে গিয়ে হয়েছেন ক্যাচ। পা আটকে গিয়েছিল ব্রাথওয়েট, শেষ পর্যন্ত বেশ অদ্ভুতভাবে বসে পড়ে সম্পন্ন করেছেন তার তৃতীয় ক্যাচ।
ধীরে ধীরে বাড়ছিল শুধু প্রয়োজনীয় রান-রেট, এমনকি ৫ম ওভারের পর রানরেটটা ছয়ের ওপরে নিয়ে যেতেই পারেনি রাজশাহী। উদানা এরপর ক্যাচ দিয়েছেন ভিসের বলে, রাব্বি হয়েছেন রান-আউট, আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যাচ দিয়েছেন আরাফাত সানি। তাইজুল শেষ পর্যন্ত নিয়েছেন ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট, মাহমুদউল্লাহ ছিলেন আরও কিপটে, ৪ ওভারে ২ উইকেট নিতে তিনি খরচ করেছেন মাত্র ১০ রান। জুনাইদ ৩ উইকেট নিয়েছেন ২৬ রানে।
এর আগে বোলিংয়ে রাজশাহী ছিল দারুণ, সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও অসাধারণ। দ্বিতীয় ওভারেই উদানার বদলানো লেংথে ধোঁকা খেয়েছিলেন জহুরুল ইসলাম, চার ও ছয় মারার পর। পরের ওভারে সফল মিরাজ, এবার তার ফ্লাইট বুঝতে পারেননি জুনাইদ সিদ্দিক। পাওয়ারপ্লেতে খুলনা তুলেছিল ৪৪ রান।
পাওয়ারপ্লের পর রাজশাহী আরও চেপে ধরেছিল খুলনাকে, রান করতে খুলনা ব্যাটসম্যানদের যেমন কষ্ট হয়েছে, তারা হারিয়েছে উইকেটও। মিরাজকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ফিরেছেন ডেভিড মালান, আরাফাত সানিকে তুলে মারতে গিয়ে লরি এভান্সের সামনে ঝুঁকে নেওয়া দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। খুলনার দুর্দশা বেড়েছে নাজমুল হোসেনের রান-আউটে, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে ছুটে এসে সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙেছেন মুমিনুল হক। সে ওভারে আরাফাত সানির বলে এলবিডব্লিউ কার্লোস ব্রাথওয়েটও, আর্ম বলে ব্যাট নামাতে দেরি করেছেন তিনি।
১৪ থেকে ১৭- এই ৪ ওভারে খুলনা তুলেছে ২৪ রান, মূলত আরিফুল হকের ব্যাটিংয়ে। শেষ ওভারে মুস্তাফিজের সরাসরি থ্রো-তে রান-আউট হওয়ার আগে তিনি করেছেন ২৭ বলে ২৬, শেষ পর্যন্ত যে ইনিংস হয়ে উঠেছে দারুণ মূল্যবান। শেষ ওভারে মোস্তাফিজ মাত্র ৩ রান দিলেও আগের দুই ওভারে খুলনা তুলেছিল ১৯ রান।