• বিপিএল ২০১৯
  • " />

     

    সাব্বির-তাসকিনকে ছাপিয়ে শেষ হাসি রেজার

    সাব্বির-তাসকিনকে ছাপিয়ে শেষ হাসি রেজার    

    সিলেট সিক্সারস ১৯৪/৪, ২০ ওভার (সাব্বির ৮৫, পুরান ৪৭*, মাশরাফি ২/৩১) 
    রংপুর রাইডার্স, ১৯৫/৬, ১৯.৩ ওভার (রুশো ৬১, ডি ভিলিয়ার্স ৩৪, তাসকিন ৪/৪২) 
    রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী 


    শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৪। ১৯তম ওভারে মেহেদি হাসান রানার বলে মাশরাফি ও রেজা মিলে তুললেন ১৯ রান! শেষ বলে ছয় মেরে শেষ ওভারের জন্য রেজা রাখলেন মাত্র ৫ রান। কাপালিকে এরপর তৃতীয় বলে চার মেরে জয় নিশ্চিত করলেন রেজাই। রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে মোস্তাফিজের শেষ ওভারে চারটি বল ডট দিয়েছিলেন তিনি, এবার যেন শাপমোচন করলেন সেটারই! ৬ বলে ১৮ রানের ক্যামিওতে নিশ্চিত করলেন রংপুরের জয়। আর সিলেট পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটাও হার দিয়েই শেষ হলো ‘ঘরের দলে’র, ১৯৪ রানের সম্বল নিয়েও। অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার আগে তাই হারই সম্বল ওয়ার্নারের।

    সিলেটের ইনিংসটা ছিল সাব্বিরময়, আর শেষে পুরান-ঝড়ের। শুরুতে লিটন বেশিক্ষণ টেকেননি, আগের ম্যাচের মতোই ছয় মারার পরের বলেই হয়েছেন আউট, এবার মাশরাফির বলে। আফিফের সঙ্গে সাব্বিরের জুটিটা জমছিল ভালই, তবে ৪১ রান ওঠার পর আফিফ হলেন রান-আউট। ওয়ার্নার ধীরগতির ছিলেন, তবে সাব্বিরকে সঙ্গ দিয়েছেন ভালই। ওয়ার্নারের পর নিকোলাস পুরানের সঙ্গে সাব্বির তুলেছিলেন ঝড়। শেষ ৪ ওভারে ৬১ রান তুলে সিলেট গেছে ১৯৪ রান পর্যন্ত। 

    রংপুরের চারজন বিদেশীর ওপর নির্ভর করছিল অনেক কিছু। গেইল শুরুতেই ইরফানের বলে লিডিং-এজে ফিরলেন শূন্যতে। হেলস করলেন ২৪ বলে ৩৩। বেশ কয়েকটি জীবন পেয়ে রুশো করলেন ৬১। ডি ভিলিয়ার্স গিয়ার বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তবে রুশোর পর তাকেও ফিরিয়ে সিলেটকে ম্যাচে ফেরালেন তাসকিন আহমেদ। অবশ্য পার করাতে পারলেন না। 

    আজ যে শেষ হাসি রেজারই হবে!


    সাব্বিরের প্রত্যাবর্তন 

    আগের ৬ ইনিংস মিলিয়ে মোট ৫৬ রান ছিল সাব্বির রহমানের। এক ইনিংসেই ছাড়িয়ে গেলেন সেটা। মাশরাফিকে চার মেরে শুরু করেছিলেন। এরপর ফরহাদ, নাহিদুল, সোহাগ, গেইল, শফিউল- ছয় মারলেন সবাইকেই, মোট ছয়টি। ৩৪ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন, পরের ১৭ বলে করলেন ৩৫। শফিউলকে ব্লকহোল থেকে তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে ধরা পড়েছেন রুশোর হাতে। বিপিএলে শেষ যেবার ৫০ ছুঁয়েছিলেন, সাব্বির সেবার করেছিলেন সেঞ্চুরি। ২০১৬ সালে রাজশাহী কিংসের হয়ে, বরিশাল বুলসের বিপক্ষে। অবশ্য ফলটা একই থাকলো সাব্বিরের জন্য, সেবার হেরেছিল কিংস, এবার হারল সিলেট! 

    ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত রংপুর 

    সাব্বির-আফিফ চুরি করতে গিয়েছিলেন সিঙ্গেল, কাভার থেকে রুশোর ডিরেক্ট থ্রোতে আফিফ হলেন রান-আউট। এরপর দুইটি দারুণ ক্যাচ নিলেন অ্যালেক্স হেলস ও রুশো। মাশরাফিকে মিডউইকেট দিয়ে তুলে মারতে গিয়েছিলেন ওয়ার্নার, বাঁদিকে লাফিয়ে উঠে ক্যাচ নিয়েছেন হেলস। শফিউলের বলে ডানদিকে ছুটে সাব্বিরের ক্যাচটা ভাল নিয়েছিলেন রুশো। আফিফের যে ক্যাচটা রেজা মিস করলেন, সেটাও মিড-অন থেকে অনেকদূর ছুটে গিয়েছিলেন তিনি, আঙ্গুল গলে বেড়িয়ে গেছে অবশ্য সেটা।  

    পিচ্ছিল সিলেট 

    প্রথমে রুশোর লোপ্পা ক্যাচ মিস করলেন উইকেটকিপার জাকের আলি, রুশোর রান তখন ১। বারকয়েকের চেষ্টায়ও সেটা গ্লাভসে পুরতে পারেননি জাকের। ১২ রানে আবার রুশোর ক্যাচ ফেললেন তিনি, এবার লামিচানের বলে। সাব্বিরের ডিরেক্ট থ্রোটা লাগলেও রান-আউট হতে পারতেন রুশো। সেই শেষ নয়, রুশোর লোপ্পা ক্যাচ এরপর মিড-অনে ফেললেন নিকোলাস পুরান, শুধু তাই নয়, বল তার হাতে লেগে ছিটকে হলো চারও! এর আগে রুশোর বিরুদ্ধে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ডিংয়ের আবেদনও করেছিল সিলেট, সেটা অবশ্য বিফলেই গেছে। সিলেট এরপর ম্যাচের মাঝেই বদলালো উইকেটকিপার, জাকেরের বদলে এলেন লিটন দাস। তাসকিনের বলে সেই লিটনই রুশোর ক্যাচটা নিলেন, তবে ততক্ষণে ৩৫ বলে ৬১ রান করে ফেলেছেন রুশো। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের পার্থক্যও গড়ে দিয়েছে সেটাই। 

    তাসকিন দ্য ম্যান 

    প্রথম বল অফস্টাম্পের অনেক বাইরে, রুশো আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ডেকে আনলেন বিপদ। এরপর তাসকিন দিলেন মিঠুনকে ইয়র্কার, ডট। এরপরের বলে লেগবাই। ডি ভিলিয়ার্সকে প্রথম বলটা দিলেন শর্ট, ক্ল্যাসিক ডি ভিলিয়ার্স সেটা টেনে পুল করে মারলেন চার। পরের বলে ইয়র্কার, পায়ের পাতা থেকে ক্লিপ করে ডি ভিলিয়ার্স নিলেন ডাবল। এরপর শর্ট অফ আ লেংথ, জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ডি ভিলিয়ার্স মিস করে গেলেন পুরোপুরি। বোল্ড! শেষ ওভার করতে এলেন, মিঠুন তাকে মারলেন ছয়। পরের বলেই মিসটাইমিংয়ে ক্যাচ দিলেন মিঠুন। শেষ বলে বোল্ড নাহিদুল, আরেকবার উড়ান শুরু করলেন তাসকিন! শুধু পার করাতে পারলেন না সিলেটকেই!