এভান্সের পর রাজশাহীর পেসারদের চাপে পিষ্ট কুমিল্লা
রাজশাহী কিংস ১৭৬/৩, ২০ ওভার (এভান্স ১০৪*, ডেসকাটে ৫৯*, ডওসন ২/২০)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ১৩৮ অল-আউট, ১৮.২ ওভার (বিজয় ২৬, তামিম ২৫, রাব্বি ৪/১০, ডেসকাটে ২/১৫, মোস্তাফিজ ১/৮)
রাজশাহী ৩৮ রানে জয়ী
লরি এভান্সের সেঞ্চুরি, রায়ান টেন ডেসকাটের সঙ্গে তার ১৪৮ রানের জুটির পর পেসারদের তোপে কুমিল্লার বিপক্ষে ৩৮ রানের বড় জয়ে পেয়েছে রাজশাহী কিংস। ১৭৭ রানের লক্ষ্যে কুমিল্লাকে চেপে ধরার বড় কাজটা করেছেন রাজশাহীর তিন পেসার- মোস্তাফিজ, রাব্বি ও ডেসকাটে। তিনজন মিলে ৮.৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৭ উইকেট! শেষদিকে আফ্রিদি-ডওসন কুমিল্লাকে পার করানোর স্বপ্ন দেখালেও মোস্তাফিজ-রাব্বি সেটাকে বাস্তবে রুপ দিতে দেননি। ইনিংসের শেষ ১৩ বলে কুমিল্লা তুলতে পেরেছে ৬ রান, উইকেট হারিয়েছে ৪টি।
৭ ম্যাচে এটি চতুর্থ জয় রাজশাহীর, পয়েন্ট টেবিলে তারা উঠে এসেছে চারে। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়েও রানরেটে রাজশাহীর চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছে কুমিল্লা।
এর আগে রাজশাহীর ইনিংস ভোল পাল্টেছে কয়েক ধাপে। প্রথম ধাপে শুরুটা হয়েছিল শ্লথগতির, ৬.১ ওভারের মাঝেই ৩ উইকেট হারানোটা চাপে ফেলেছিল তাদের। লরি এভান্স ও রায়ান টেন ডেসকাটের জুটি প্রথমে গড়েছিল ভিত। ৫ ওভারে রান ছিল ১৬, আফ্রিদিকে ৬ষ্ঠ ওভারে ৩ চার মেরে সেটা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন এভান্স। এরপর দুজনেরই মনযোগ ছিল স্ট্রাইক বদলের দিকে। ১৩তম ওভার শেষে রাজশাহীর স্কোর ছিল ৩ উইকেতে ৭০। ১৪তম ওভারে থিসারা পেরেরাকে তিন ছয়ে ঝড়টা তুললেন এভান্স।
শেষ ৪২ বলে এভান্স-ডেসকাটে মিলে তুললেন ১০৬ রান। ১৭তম ওভারে দুজন রিয়াজকে মেরেছেন ২ ছয়। শেষ ওভারে গিয়ে এভান্স পূর্ণ করেছেন সেঞ্চুরি, ডেসকাটে করেছেন ফিফটি। দুজনের জুটি ১৪৮ রানের, যা এই মৌসুমে যে কোনও উইকেটেই সর্বোচ্চ। রাজশাহী গেছে ১৭৬ পর্যন্ত।
এভান্সের প্রথম
১০, ১*, ০, ২, ০- বিপিএলে এর আগের ৫ ইনিংসে এভান্সের স্কোর। ইংল্যান্ডের ভাইটালিটি ব্লাস্টে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগেও আলো ছড়িয়েছিলেন, সেখানে ছিল তিন ফিফটি। বিপিএলে এসে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন এই ডানহাতি। কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচে জ্বলে উঠলেন, সেটাও ধাপে ধাপে। প্রথম ৩৬ বলে করেছিলেন মাত্র ৩৭। ফিফটিতে গেলেন ৪০ বলে। পরের ফিফটি তিনি করলেন মাত্র ২১ বলে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১০৪ রানে, ৬২ বল খেলে। টি-টোয়েন্টিতে এভান্সের এটিই প্রথম সেঞ্চুরি। গত বছর সাসেক্সের হয়ে সমারসেটের বিপক্ষে ৯৬ রানই ছিল এর আগে সর্বোচ্চ। এভান্সের সেঞ্চুরিটি বিপিএলের এবারের আসরের প্রথম, সব মিলিয়ে ১৩তম।
ফিরে এলেন ডেসকাটে
২০১৩ সালে চিটাগং কিংসের হয়ে খেলতে এসেছিলেন বিপিএল, সে মৌসুমে ১৩ ইনিংসে করেছিলেন ৪৩২ রান, ফিফটি করেছিলেন তিনটি। এরপর খেলতে এসেছেন ঢাকা ডায়নামাইটস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে। ৯ ইনিংস খেলেছিলেন দুই দলের হয়ে, সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ৪৫। এবার রাজশাহী কিংসের হয়ে প্রথম খেলতে নামলেন রংপুরের বিপক্ষে, আজকের আগ পর্যন্ত তিন ইনিংসে করেছিলেন- ১৪, ১৩, ১৬। এভান্সের জ্বলে ওঠার দিনে নিজেকেও মেলে ধরলেন ডেসকাটে। ৫৯ রানে অপরাজিত থাকলেন, ৪১ বলে। পরে এ মৌসুমে প্রথমবার এলেন বোলিংয়ে, নিলেন এনামুল হক ও জিয়াউর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট।
আফ্রিদির মোস্তাফিজ-রহস্য
কাটারে আফ্রিদিকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন মোস্তাফিজ। ১৫তম ওভারে চার বল মুখোমুখি হলেন আফ্রিদি, ব্যাটে লাগাতে পারলেন শুধু শেষ বলে, সেখান থেকে এলো সিঙ্গেল। মাঝে কাইস আহমেদের শেষ ৪ বলে আফ্রিদি নিলেন ১৪ রান। ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজ এলেন আবার, প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে দিলেন ডওসন। টানা চার বলই মিস করে গেলেন আফ্রিদি, তবে মোস্তাফিজের বিস্ময় জাগিয়ে একটি ওয়াইড দিলেন আম্পায়ার। বৈধ পঞ্চম ডেলিভারিটা ব্যাটে লাগাতে পারলেও রান এলো না, শেষ বলে আফ্রিদি নিলেন একটি সিঙ্গেল।
মরণঘাতি পাঁচ বল
ইমরুল প্রথম বলেই মেরেছিলেন ছয়, পরের বলে চার। ইমরুল ঝড় তুলছিলেন, থামলেন কাইসের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে। রাজশাহীর অনেক বড় হুমকি হতে পারতেন যে থিসারা পেরেরা, তিনি ফিরলেন প্রথম বলেই, আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে। কাইস অবশ্য হ্যাটট্রিকটা পেলেন না। এরপর কুমিল্লাকে অসম্ভবের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন আফ্রিদি-ডওসন। ১৮তম ওভার করতে এলেন রাব্বি, প্রথম বলে আফ্রিদি পরিণত হলেন ক্রিশ্চিয়ান জঙ্কারের দারুণ ক্যাচে। তৃতীয় বলে ক্যাচ দিলেন ডওসনও, ঠিক পরের বলে সাইফউদ্দিন। ম্যাচে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করলেন রাব্বি। সেটা পেলেন না, তবে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে রাখলেন দারুণ অবদান!