লো-স্কোরিং রোমাঞ্চে চিটাগংকে জেতালেন ফ্রাইলিঙ্ক
ঢাকা ডায়নামাইটস ১৩৯/৯, ২০ ওভার (সাকিব ৩৪, শুভাগত ২৯, ডেলপোর্ট ৩/২৫, ফ্রাইলিঙ্ক ২/১৯)
চিটাগং ভাইকিংস ১৪৫/৭, ১৯.৫ ওভার (মোসাদ্দেক ৩৩, ডেলপোর্ট ৩০, ফ্রাইলিঙ্ক ২৫*)
চিটাগং ৩ উইকেটে জয়ী
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৬, প্রথম বলটা সিঙ্গেল নিয়ে সানজামুল ইসলাম স্ট্রাইক দিলেন রবি ফ্রাইলিঙ্ককে। ৩ ওভারে ২৫ রান দেওয়া আন্দ্রে রাসেলের বদলে সাকিব ভরসা রেখেছিলেন ৩ ওভারে ১৬ রান দেওয়া মোহর শেখের ওপর। ফ্রাইলিঙ্ক সে ভরসা উড়িয়ে দিলেন এভাবে- ছয়, দুই, ছয়, ছয়! ১৩৯ রানের সম্বল নিয়ে রঙ বদলানো ম্যাচে ঢাকাকে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার মূল কৃতিত্ব সাকিব আল হাসানের। তবে তার ১৬ রানে ৪ উইকেটের দারুণ বোলিং ফিগারও যথেষ্ট হলো না, ‘ফিনিশ’টা করলেন ফ্রাইলিঙ্কই।
রানতাড়ায় পাওয়ারপ্লেতে চিটাগং হারিয়েছিল ৩ উইকেট, অবশ্য উঠেছিল ৫১ রান। এরপর শনাকাকে দ্রুতই ফিরিয়েছিলেন সাকিব, তবে মোসাদ্দেক-মুশফিকের জুটিতে ঠিক পথেই ছিল চিটাগং। রুবেলের শর্ট বলে প্রলুব্ধ হয়ে তুলে মারতে গিয়ে আউট মুশফিক, বিপদটা যেন নিজে ডেকে আনলেন তিনি। সাকিব এরপর ফেরালেন নাঈমকে, মোসাদ্দেক হলেন রান-আউট। সব গিয়ে ঠেকলো ওই ফ্রাইলিঙ্কের ওপর, শেষটা যিনি করলেন দারুণ স্টাইলে!
এর আগে শুরুতেও ছিলেন ওই ফ্রাইলিঙ্কই। প্রথম ওভারেই তার বলে বোল্ড হয়েছিলেন রনি তালুকদার। ৯ বলে ১৮ রান করা সুনীল নারাইনের পরিণতিও একই। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করছিলেন হেইনো কুন, আবু জায়েদের এক ওভার বদলে দিয়েছে দৃশ্যপট। ৯ম ওভার তিনি করেছেন উইকেট-মেইডেন, কুন বোল্ড হওয়ার পর দারওয়িস রাসুল দিয়েছেন ক্যাচ। সাকিব-নুরুলের জুটিতে এরপর উঠেছে ৩৯ রান, আবারও ঢাকার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আরেক অভিশপ্ত ওভার। এবার ডেলপোর্টের বলে ফিরেছেন সাকিব, সে ওভারেই তাকে অনুসরণ করেছেন নুরুল হাসান সোহানও। পরের ওভারে আন্দ্রে রাসেলের উইকেটে ঢাকা খেই হারিয়েছে আরও বেশি, শুভাগত হোমের ১৫ বলে ২৮ রানের ক্যামিওর পরও তারা যেতে পেরেছে ১৩৯ রান পর্যন্ত, এই মৌসুমে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
সেটি নিয়েও শেষ ওভার পর্যন্ত গেল তারা, চিটাগংকে ৫ম জয় থেকে বঞ্চিত করতে পারলো না অবশ্য। এক ম্যাচ কম খেলেই চিটাগংয়ের পয়েন্ট এখন ঢাকার সমান ১০।
ডেলপোর্ট-বিস্ময়
ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিংটা একেবারে অনিয়মিত নয় ক্যামেরন ডেলপোর্টের জন্য। এর আগে ১৭৬ টি-টোয়েন্টিতে ৫০টি উইকেট ছিল তার। বিপিএলে প্রথম ৪ ম্যাচে বোলিং করেননি, চিটাগংয়ের আগের ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুলের গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট। মাহমুদউল্লাহর উইকেট দিয়ে ডেলপোর্ট কাটিয়েছিলেন ৮ ইনিংসে উইকেটশূন্যতা। এদিন নিলেন ৩ উইকেট, ২৫ রানে। সাকিব আল হাসান তার ফুলটসে দিলেন ক্যাচ, নুরুল হাসান হলেন স্টাম্পড। আর শেষে মোহাম্মদ নাঈম হলেন বোল্ড। এর আগে ডেলপোর্ট শুধু একবার টানা দুই ইনিংসে নিয়েছিলেন দুই বা তার বেশি উইকেট, ২০১৭ সালে লিস্টারশায়ারের হয়ে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ২ উইকেট নেওয়ার পরের বোলিং ইনিংসেই নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টের সে স্মৃতিটাই ফিরিয়ে আনলেন যেন তিনি।
শুভাগতর দুই রকম দিন
প্রথমে ক্যামিও খেললেন, বোলারদের লড়াই করার স্কোর এনে দেওয়ার পেছনে সাকিব-সোহানের সঙ্গে অবদান তারও। এরপর ফিল্ডিংয়ে চমক দেখালেন শুভাগত হোম। প্রথম ওভারে রাসেলের বলে লিডিং এজড হয়েছিলেন শাহজাদ, কাভারে সামনে ডাইভ দিয়ে তিনি নিলেন দারুণ ক্যাচ। উজ্জীবিত শুভাগতকে দ্বিতীয় ওভারেই বোলিংয়ে আনলেন সাকিব, তবে বোলিংয়ে দিনটা অবশ্য নিজের করে নিতে পারলেন না এই অফস্পিনার। ক্যামেরন ডেলপোর্ট সে ওভারে তুললেন ১৬ রান। এরপর রুবেলের বলে ইনফিল্ডে ডাইভ দিয়ে আরেকটা দারুণ ফিল্ডিং করলেন শুভাগত, বাঁচালেন চার। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসিটা হাসা হলো না তার।