হেলস, গেইল, ডি ভিলিয়ার্সে ছুটছে রংপুর
খুলনা টাইটানস ১৮১/৬, ২০ ওভার (শান্ত ৪৮, ভিসে ৩৫, রেজা ৪/৩২, মাশরাফি ১/১৭)
রংপুর রাইডার্স ১৮৩/৪, ১৯.৩ ওভার (হেলস ৫৫, গেইল ৫৫, ইয়াসির ২/৪৭)
রংপুর ৬ উইকেটে জয়ী
এবি ডি ভিলিয়ার্স এলেন, তাতেই যেন রংপুর রাইডার্স ছুটতে শুরু করল। শুরুতে ফরহাদ রেজা পেলেন ৪ উইকেট। এরপর রান করতে ভুলে যাওয়া গেইল আর হেলস পেলেন ফিফটি, আর ডি ভিলিয়ার্স তো আছেনই। খুলনার ১৮১ রানও তাই রংপুর টপকে গেল ৬ উইকেট হাতে রেখে। বিপিএলের শীর্ষ চারের লড়াইটা জমে উঠল আবার, রাজশাহী কিংসকে টপকে শীর্ষ চারে উঠে এলো রংপুর।
এবারের বিপিএলে ১৮১ রান মানে ম্যাচ জয়ের মতোই। কিন্তু রংপুরের যে ব্যাটিং লাইন আপ, তাতে সেটা হয়ে গেল অনেক কম। অ্যালেক্স হেলস সেটি আরও কম মনে করাচ্ছিলেন। বিপিএলটা ভাল যাচ্ছিল না এবার, প্রথম তিন ম্যাচে রান ছিল ১৫। আগের পেয়েছিলেন ৩৩, অবশেষে আজ হেলস হাজির স্বমূর্তিতে। সেটি এমনই ভয়ংকর, গেইলও বনে গেলেন দর্শক। হেলস যখন ২৬ বলে ফিফটি করে ফেলেছেন, রংপুর ৬ ওভারে করে ফেলেছে ৫৮। গেইলের রান তখন কত শুনবেন? মাত্র ৪!
হেলস অবশ্য ঝড়টা বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারলেন না। ২৯ বলে ৫৫ রান করে বোল্ড হয়ে গেলেন ইয়াসির শাহর বলে, গেইল অবশ্য তার আগের দুই বলে মেরেছেন দুই ছয়। কিন্তু এক রামে রক্ষা নেই, তায় আবার সুগ্রীব দোসর। এবি ডি ভিলিয়ার্স এসে খুলনার দুঃখ বাড়ালেন আরও। ইয়াসিরকে রিভার্স সুইপে চার মেরে শুরু, পরের ওভারে ভিসেকে মারলেন ছয়। পরের ওভারেই আবার ইয়াসিরকে ছয়, এক ওভার পর ইয়াসিরের তৃতীয় ওভার থেকে নিলেন ১৪ রান। যখন মনে হচ্ছিল খেলাটা শেষ করে আসবেন, তখনই মাহমুদউল্লাহর বলে ২৫ বলে ৪১ রানে হয়ে গেলেন এলবিডব্লু। রংপুরের অবশ্য ১২ ওভারেই তখন হয়ে গেছে ১২০ রান।
গেইল তখনও অবশ্য ঘুমিয়েই আছেন, শেষ পর্যন্ত আড়মোড়া ভাঙলেন মাহমুদউল্লাহর বলে। রংপুরের জয়টা তখন একটু কঠিন হতে শুরু করেছে, ৪ ওভারে দরকার ৪৩ রান। গেইল ওই ওভারে মারলেন তিন ছয়, আবার লক্ষ্যটা বানিয়ে ফেললেন মামুলি। ৩৪ বলে পেয়ে গেলেন ফিফটি, এবারের বিপিএলের প্রথম। খেলাটা অবশ্য শেষ করে আসতে পারলেন না। ৪০ বলে ৫৫ রানে আউট হলেন ভিসের দুর্দান্ত এক ক্যাচে, বাকি কাজটা সহজেই সেরেছেন রুশো আর মিঠুন। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৬, তিন বলেই সেটি নিয়েছে রংপুর।
তার আগে আশাই দেখছিল খুলনা। জুনাইদ সিদ্দিকী এখন পর্যন্ত বিপিএলে খুলনার সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান, তবে আজ তিনিও পারলেন না কিছু করতে। প্রথম ধাক্কাটা খুলনা খেয়েছে প্রথম ওভারেই, মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম ওভারেই ৪ রান করে ফিরে গেছেন আল আমিন। জুনাইদ সোহাগ গাজীকে চার-ছয় মেরে ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন, কিন্তু কাটা পড়লেন আনলাকি থার্টিনে। ফরহাদ রেজাকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন রাইলি রুশোকে।
এরপর খুলনা রানের চাকাটা দ্রুত সচল হতে শুরু করে। ব্রেন্ডন টেলর দেখালেন, তাঁর ওপর আগেই কেন আস্থা রাখা উচিত ছিল খুলনার। ফরহাদ রেজাকে দুই চার মেরে শুরু, নাজমুল ইসলাম অপুকেও দুই চার মারলেন এক ওভারে। অন্য পাশে নাজমুল হোসেন শান্ত এবারের বিপিএলে প্রথমবারের মতো হয়ে উঠলেন অশান্ত, অপুর এক ওভারে মারলেন দুই ছয়। ৯ ওভার শেষে খুলনার রান ৭৮।
কিন্তু দশম ওভারে গিয়ে ছন্দপতন, গেইলের বলে লং অনে ক্যাচ তুলে দিলেন টেলর। ২০ বলে ৩২ রানের ইনিংসটাও থেমে গেল। শান্ত অবশ্য ফিফটি পেয়ে যাবেন বলে মনে হচ্ছিল। অন্য পাশে মাহমুদউল্লাহও টেলর যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে শুরু করলেন। ১৫ ওভার শেষে খুলনার রান ১৩৪, ২০০-ও তখন সম্ভব মনে হচ্ছিল। কিন্তু ফরহাদ রেজার ১৬তম ওভারেই নেই দুজন। দ্বিতীয় বলে ডিপ মিডউইকেটে ২০ বলে ২৯ রানে ক্যাচ তুলে দিলেন মাহমুদউল্লাহ, পরের বলে ৩৫ বলে ৪৮ রান করে আউট শান্ত।
আরিফুল আরও একবার ব্যর্থ, আউট ৬ রান করে। এরপর দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নিলেন ডেভিড ভিসে, ১৯তম ওভারে রেজাকে মারলেন দুই ছয়। ভিসে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত রইলেন ১৫ বলে ৩৫ রানে, খুলনা পেল ১৮১ রানের পুঁজি। ফরহাদ রেজা পেলেন ৪ উইকেট। কিন্তু দিন শেষে তা আর যথেষ্ট হলো না।