হেলস-রুশো তাণ্ডবে রংপুরের রেকর্ডময় জয়
স্কোর
রংপুর ২০ ওভারে ২৩৯ (হেলস ১০০, রুশো ১০০*; রাহী ২/৩৫)
চিটাগং ২০ ওভারে ১৬৭/ ৮ (ইয়াসির ৭৮, মাশরাফি ৩/৩৪)
ফলঃ রংপুর ৭২ রানে জয়ী
জানুয়ারির শান্ত সমুদ্রসৈকত, কোথাও কোনো ঝড়ের চিহ্ন নেই। কিন্তু কোনো কিছু জানান না দিয়েই সাগরিকায় তুমুল তুফান। অ্যালেক্স হেলস আর রাইলি রুশো মিলে যা করেছেন, তাতে আসলে ঝড়-টড় এসব শব্দও কম হয়ে যায়। বিপিএলের ইতিহাসে এর আগে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২০১৩ সালে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের করা ২১৭ রান। আজ স্বাগতিক চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে সেই রান পেরিয়ে রংপুর রাইডার্স পৌঁছে গেছে ২৩৯ রানের পর্বতে। হেলস সেঞ্চুরি পেয়েছেন, পরে রুশোও ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক। বিপিএলের ইতিহাসে এই প্রথম একই ইনিংসে দুজন পেলেন সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে অবশ্য এই কীর্তি আছে আরও দুবার। ২০১১ সালে ফ্রেন্ডস টি-টোয়েন্টিতে গ্লস্টারশায়ারের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন হামিশ মার্শাল ও কেভিন ওব্রায়েন। আর ২০১৬ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরুর হয়ে জোড়া বেঁধে সেঞ্চুরি করেছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স ও বিরাট কোহলি। এই রান তাড়া করে চিটাগং পথ হারিয়েছে দ্রুতই, শেষ পর্যন্ত ৭২ রানের বড় হারই মেনে নিতে হয়েছে।
শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি রংপুরের, ক্রিস গেইল আরও এক ম্যাচে ব্যর্থ। আবু জায়েদ রাহীর করা দ্বিতীয় ওভারেই এলবিডব্লু হয়ে গেছেন ২ রান করে। প্রথম ২ ওভারে রান উঠল ছয়, তৃতীয় ওভারে ফ্রাইলিঙ্কের বলে দুই চারে শুরুটা করলেন গেইল। ফ্রাইলিঙ্ক অবশ্য ওই ওভারেই চোট পেয়ে আর বল করতে পারলেন না। চট্টগ্রামের জন্য যেটি আরও বড় আঘাত হয়ে এসেছে। হেলস অবশ্য ততক্ষণে খুনের মেজাজে চলে গেছেন, খালেদের এক ওভার থেকে নিয়েছেন ২২ রান। ২২ বলে পেয়েছেন ফিফটি, দেখতে দেখতে ৭৫ রান করে ফেলেছেন ৩৪ বলে।
রুশো অবশ্য তখনো হেলসের ইলেকট্রিক গিটারের সঙ্গে ড্রামস শুরু করেননি। একটু পরে যোগ দিলেন তাতে, রবিউলের এক ওভারে ২২ রান নিয়ে তিনিও তরবারি নিয়ে হাজির। ওই ওভারেই অবশ্য রুশোর সহজ ক্যাচ ফেলে দিলেন সানজামুল, তার আগে ২৯ বলে রুশো পেয়ে গেছেন ফিফটি। জীবন পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগালেন দু হাত ভরে।
এর মধ্যে হেলস ঢুকে গেছেন নব্বইয়ে। দুই বছর আগে এই চট্টগ্রামেই হেলস পেয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই ম্যাচে ১১৬ রানের সেই ইনিংসে প্রায় একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কাকে। এর পর ট্রেন্ট ব্রিজে নটিংহামশায়ারের হয়ে সেঞ্চুরি ছিল তাঁর। এবারের বিপিএলের ফর্মটা ভালো যাচ্ছিল না, স্বরূপে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন আগের ম্যাচে। আজকের ম্যাচে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছেন, ৪৭ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। তার পরেই আউট হয়ে গেছেন, ৪৮ বলে ঠিক ১০০ রানের ইনিংসে ছিল পাঁচটি ছয় ও ১১টি চার।
ওদিকে রুশোর অবশ্য থামাথামি নেই। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলেন নব্বইয়ে। এর মধ্যে ডি ভিলিয়ার্স ক্রিজে এসেছেন, রাহীর বলে ১ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরেও গেছেন। তবে রুশো নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম তিন অঙ্ক পেয়ে গেছেন খানিক পরেই। ৫১ বলে পেয়েছেন সেঞ্চুরি, তাতে ছিল ছয়টি ছয় ও আটটি চার। শেষ পর্যন্ত ২৩৯ রানে থেমেছে রংপুর। তাতে গেইল আর ডি ভিলিয়ার্সের মিলিত অবদান ৩!
প্রায় অসম্ভবের পেছনে তাড়া করে চট্টলার শুরুটা খারাপ হয়নি, জহুর আহমেদের ঠাসা গ্যালারিও পেয়েছে উদযাপনের বেশ সুযোগ। মোহাম্মদ শাহজাদ দুই ছয়ে শুরু করেছিলেন, কিন্তু ১২ বলে ২০ রান করে বোল্ড ফরহাদ রেজার বলে। সিকান্দার রাজা টেকেননি বেশিক্ষণ, মুশফিকুর রহিম শফিউলের এক ওভারে আশাটা জিইয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ১০ বলে ২২ রানে মুশফিকের ইনিংসের শেষে প্রায় শেষ হয়ে যায় সেটি।
তারপর চিটাগংয়ের ইনিংস মানে ইয়াসির আলী রাব্বির জাত চেনানো। এই বিপিএলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন ভালোমতোই, আজ সেঞ্চুরির দিকেই এগুচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংসে জানান দিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেকজন সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান এসে গেছেন। তবে ‘গরর ফুয়ার’ খেলা দেখার জন্য খুব বেশিক্ষণ ছিলেন না কেউ, চিটাগংয়ের ইনিংসের মাঝামাঝি সময়েই ফাঁকা হতে শুরু করেছে গ্যালারি। শেষ পর্যন্ত যখন ১৬৭ রানে থেমেছে, মাঠ তখন প্রায় ফাঁকা।