রান-প্রসবা চট্টগ্রামে শেষ হাসি মোস্তাফিজদের
রাজশাহী কিংস ১৯৮/৫, ২০ ওভার (চার্লস ৫৫, জঙ্কার ৩৭, এভান্স ৩৬, খালেদ ২/৩২, আবু জায়েদ ১/২৪)
চিটাগং ভাইকিংস ১৯১/৮, ২০ ওভার (ইয়াসির ৫৮, শাহজাদ ৪৯, সিকান্দার ২৯, মোস্তাফিজ ৩/২৮, মিরাজ ২/২৫)
রাজশাহী রানে জয়ী
চিটাগংয়ের শেষ ভরসা হয়ে ছিলেন সিকান্দার রাজা। তার ক্যামিও টিকিয়ে রেখেছিল তাদের। রাজশাহীর ভরসার নাম অবশ্যই মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যাপারটা যখন শেষ ওভারের সমীকরণ! ১৩ রান প্রয়োজন ছিল, প্রথম বলেই রাজার কাছে কোনও জবাব ছিল না মোস্তাফিজের ইয়র্কারের। রাজা ফিরলেন, আরেকটি জাদুকরি শেষ ওভার করলেন মোস্তাফিজ। উড়তে থাকা চিটাগংকে আগেরদিন মাটিতে নামিয়ে এনেছিল রংপুর। এবার রাজশাহীর ‘কিং’দের কাছেও আটকে গেল ‘ভাইকিং’রা। ১৯৯ রানের জবাবে তারা থেমেছে ১৯১ রানে। এ জয়ের পরও অবশ্য শীর্ষেই আছে চিটাগং, ১২ পয়েন্ট নিয়ে। ১০ ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে রাজশাহী পাঁচে।
১৯৯ রানের লক্ষ্যে ইঙ্গিতটা প্রথম ওভারেই দিয়ে রেখেছিলেন শাহজাদ, রাব্বির সে ওভারেই উঠলো ২২ রান। মিরাজ এসে দিলেন মাত্র ৩ রান, পরের ওভারে ডেলপোর্টের উইকেটসহ মোস্তাফিজ দিলেন ৬। তবে শাহজাদ ঝড় থামলো না শীঘ্রই, মিরাজ এসে যতক্ষণে তাকে ফেরালেন, তার আগেই আফগান ব্যাটসম্যান করেছেন ২২ বলে ৪৯ রান। পাওয়ারপ্লেতে চিটাগং তুলেছিল ৬১ রান।
ইয়াসির আলি ছিলেন দারুণ, এবার বিপিএলে করলেন তৃতীয় ফিফটি। সৌম্য সরকারকে বোলারস ব্যাকড্রাইভে মারা ছয় বা আরাফাত সানির ওপর চড়াও হওয়া ইয়াসিরের ব্যাটে ঠিকরে পড়ছিল আত্মবিশ্বাস। তবে শেষ হাসিটা হাসলেন সানি, তাকে স্লগ করতে গিয়ে ইয়াসির হলেন বোল্ড। ৩২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন, ২৪ রানের মাথায় মুশফিকের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউটও হতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত থামলেন ৩৮ বলে ৫৮ রান করে।
পরের ওভারের প্রথম বলে রাব্বিকে ছয় মেরে রাজশাহীর অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন মুশফিক, তবে রাব্বির দুই ডট বলে যেন মনযোগটা হারিয়ে ফেললেন। পরের বলে সরে গিয়ে স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন ২০ বলে ২২ রান করে। এর আগে ইয়াসিরের সঙ্গে তার জুটি চিটাগংকে ঠিক পথেই রেখেছিল, তবে অসময়ে তার উইকেটে চাপে পড়লো ‘স্বাগতিক’রা। এরপর আশা দিলেন রাজা, ১৭তম ওভারের আগে ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৪৪, ডেসকাটের ওভারে উঠলো ১৭ রান। রাব্বি অবশ্য পরের ওভারে ফিরলেন ভালভাবেই, ৮ রান দিয়ে নিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরানের উইকেট।
এরপর তো শেষ ওভারে মোস্তাফিজের ওই জাদুর গল্প!
১ম ইনিংসে গল্পটা ছিল চার্লস, ডেসকাটে, জঙ্কারদের।
৪র্থ ওভারে নাঈমকে সৌম্য মেরেছিলেন তিন চার, এর আগে পরে যে সময় থাকলেন, খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। তার দুইটি শট পড়েছিল ফিল্ডারের ঠিক আগে। খালেদ আহমেদের কমিয়ে আনা লেংথে আগাভাগেই শট খেলে বল আকাশে তুলে ধরা পড়েছেন লং-অফে।
জনসন চার্লস আজই প্রথম নেমেছেন রাজশাহীর হয়ে, নেমেই করলেন ফিফটি। রাজশাহীর প্রথম ছয় মেরেছিলেন তিনিই, ১০ম ওভারে সিকান্দার রাজার লং-হপে পুল করে। ক্যামেরন ডেলপোর্টকে মেরেছেন আরেকটি। লরি এভান্সের সঙ্গে চার্লসের জুটিতে উঠেছে ৭০ রান, এভান্স মেরেছেন তিন বাউন্ডারি। খালেদের অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে আউট হওয়ার আগে এভান্স করেছেন ২৯ বলে ৩৬ রান। চার্লস ৪০ বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি, ফিরেছেন আবু জায়েদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে।
তার আগেই নাঈম হাসানের এক ওভারে রায়ান টেন ডেসকাটে মেরেছেন তিন ছয়, এরপর আবু জায়েদকে মেরেছেন আরেকটি। রান-আউট হওয়ার আগে ডেসকাটে করেছেন ১২ বলে ২৭। ডেসকাটের পর বাকি কাজটা সেরেছেন ক্রিশ্চিয়ান জঙ্কার, যার ইনিংসটি ছিল ঘটনাবহুল।
জঙ্কার দুইবার তুলেছিলেন ক্যাচ, দুইবারই মিস করেছেন সিকান্দার রাজা, লং-অন থেকে ছুটে এসে। এরপর জঙ্কার মুখোমুখি হয়েছেন রবিউলের দুই বিমারের, যার শেষটি শেষ ওভারে। এর আগে প্রথম দুই বলে রবিউলকে দুই ছয় মেরেছেন জঙ্কার, রবিউল নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাকি ওভার পূর্ণ করেছেন ডেলপোর্ট। সব মিলিয়ে শেষ ওভারে উঠেছে ২৪ রান, রাজশাহী শেষ ৫ ওভারে তুলেছে ৭৮ রান।