• বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিক মুহুর্ত
  • " />

     

    ১৯৭৫ : ভিভের খুনে হাত

    ১৯৭৫ : ভিভের খুনে হাত    

    এই লোকটাকে স্রেফ হিসাবের বাইরে রাখা যায় না। 

    ১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ১৩৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন, তবে তার আগে ১৯৭৫ এ প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে তিনি আউট হয়েছিলেন মাত্র ৫ রান করে। তবে সে ম্যাচেও ভিভ রিচার্ডস এনেছিলেন ম্যাচ নির্ধারণী মুহুর্ত- গুরুত্বপূর্ণ তিন সময়ে তিনটি দারুণ ফিল্ডিংয়ে তিনটি রান-আউটে পথ হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, তিনটিই করেছিলেন রিচার্ডস। যার মধ্যে দুটি ছিল আবার সরাসরি থ্রো-তে। রানতাড়ায় অস্ট্রেলিয়া কাটা পড়েছিল রিচার্ডসের খুনে হাতেই! 

    লর্ডসে সেদিন যেন নতুন পথে যাত্রার জন্য তৈরি হয়েছিল ওয়ানডে ক্রিকেট। তখনও ঘাসে বসার অনুমতি ছিল ক্রিকেটের মক্কায়, ক্যারিবীয়রা মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরো ভেন্যু। ইউটিউবে সে ম্যাচে বিবিসির ব্রডকাস্টিংয়ে কান পাতলে এখনও শুনবেন, ভেসে আসছে বাজনা। বাদ্য। আর কিছু একটা হলেই উঠছে শোর। 

    প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে খেই হারিয়েছিল একটু ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ক্লাইভ লয়েডের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত তারা গিয়েছিল ৮ উইকেটে ২৯১ রান পর্যন্ত। ৮২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন ‘বিগ সি’, আউট হওয়ার আগে ১২ চার ও ২ ছয়ে ৮৫ বলে করেছিলেন ১০২ রান। 

    রানতাড়ায় ২৫ রানে রিক ম্যাককোস্কারকে হারালেও অ্যালান টার্নার ও ইয়ান চ্যাপেল ঠিকপথেই রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। বোলিংয়ে এলেন পার্ট-টাইমার লয়েড। ১ উইকেটে ৮১ রানে ব্যাটিং করছে অস্ট্রেলিয়া, টার্নার অপরাজিত ৫৩ বলে ৪০ রানে। চ্যাপেল মিডউইকেটে খেললেন, রিচার্ডস দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু দূরে। ক্ষণিকের জন্য দুই ব্যাটসম্যানই ইতস্তত করলেন, এরপর শুরু করলেন দৌড়। রিচার্ডস ছুটলেন, বল তুললেন, ‘বোলিং’য়ের থ্রোয়ের মতো করলেন তাক করলেন স্টাম্পে। স্টাম্প এলোমেলো, টার্নার আউট। রিচার্ডস দুহাতে তালি দিলেন, মুখে বিস্তৃত হাসি  নিয়ে। যেন পরিকল্পনা সফল হয়েছে তার। 

    ইয়ানের সঙ্গে এরপর যোগ দিলেন তার ভাই গ্রেগ। দুইটি বাউন্ডারি মারলেন, বেশ দৃঢ়ই দেখাচ্ছিল তাকে। আবার খেললেন ইয়ান, এবার পয়েন্টে অ্যান্ডি রবার্টসের বলে। সেখানে সতীর্থর সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হলো রিচার্ডসের, বল গেল দুজনের মাঝখান দিয়ে। প্রথমে রান নিতে চাননি দুই ভাই, মিসফিল্ডে নিতে গেলেন। রিচার্ডস কয়েক পা সরে গিয়ে তুললেন বল, এবার তার দৃষ্টিসীমায় এক স্টাম্প। বলটা বেরিয়ে এলো, ভাঙলো স্টাম্প। ১১৫ রানে তৃতীয় উইকেট গেল অস্ট্রেলিয়ার। 

     

     

    তাতে অবশ্য খুব একটা দমলেন না ইয়ান চ্যাপেল, ডগ ওয়াল্টার্স তাকে সঙ্গও দিচ্ছিলেন ভালই। ফিফটি হলো চ্যাপেলের, ওয়াল্টার্সের সঙ্গে তার জুটি ফিফটি ছোঁয়ার অপেক্ষায়। ২১ ওভার বাকি, অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে ১৬২ রান নিয়ে বেশ ভাল অবস্থায়। আবার বোলিংয়ে লয়েড, এবার চ্যাপেল খেললেন মিড-অনের বাঁয়ে করে। রিচার্ডস ক্ষণিকের জন্য গুবলেট পাকালেন বলটা ঠিকঠাক তুলতে গিয়ে, চ্যাপেল নিতে চাইলেন সে সুযোগটাই। ভুলটাও করলেন সেখানেই। শেষ মুহুর্তে ডাইভ দিয়েছিলেন, তবে তার আগেই রিচার্ডসের বুলেট-গতির থ্রো ছুটে এসেছে লয়েডের হাতে, তিনি ভেঙেছেন স্টাম্প। ধারাভাষ্যে রিচি বেনো বললেন, ‘দ্য ওল্ড রুল অফ নেভার রান অন আ মিসফিল্ড স্টিল হোল্ডস গুড।’ 

     

    রিচার্ডস প্রথমে দর্শকের দিকে ঘুরলেন দুহাত মেলে। এরপর মুখভঙিটার অর্থ এমন- ‘মিশন কমপ্লিট’। 

    আর যেন মনে করিয়ে দিলেন, ভিভ রিচার্ডসকে আপনি ঠিক হিসাবের বাইরে রাখতে পারবেন না আসলে। 


    এরপর যা ঘটেছিল- 

    মূলত ইয়ান চ্যাপেলের উইকেটের পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল অস্ট্রলিয়া। তবে শেষ উইকেটে জেফ থমসন ও ডেনিস লিলি অসম্ভব স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। শেষ উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেছিলেন ৪১ রান। ৮ বল বাকি থাকতে থমসন রান-আউট হওয়াতে প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল ১৭ রানে। সে ইনিংসে রান-আউট হয়েছিলেন মোট পাঁচজন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।