• বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিক মুহুর্ত
  • " />

     

    ২০০৭: মালিঙ্গার চারেও রূপকথা হলো না শ্রীলংকার

    ২০০৭: মালিঙ্গার চারেও রূপকথা হলো না শ্রীলংকার    

    টনি ক্রেগ তখনো উত্তেজনায় কাঁপছেন। তাঁর স্বভাবসুলভ মেঘমন্দ্র স্বরে বলছিলেন, ‘আরেকটুর জন্য ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য গল্পটা লেখা হতে পারত আজ। যা হয়েছে, ক্রিকেট এমন কিছু দেখেনি আগে।’

    প্রভিডেন্সে সেদিন যা হয়েছিল, তার মতো কিছুই আগে পরে দেখেনি আর ক্রিকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সুপার এইটে শ্রীলংকার ছুঁড়ে দেওয়া ২০৯ রান তাড়া করে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় জিতেই যাচ্ছিল। জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে প্রোটিয়ারা, হাতে তখনও উইকেট পাঁচটি। শন পোলক আর জ্যাক ক্যালিস ক্রিজে, ওভার বাকি ছয়টি। দর্শকেরাও মাঠ ছাড়ার জন্য আড়মোড়া ভাঙছেন, ম্যাচ তো প্রায় শেষই। মাহেলা জয়াবর্ধনে বল দিলেন লাসিথ মালিঙ্গাকে। বলেছিলেন, ‘কিছু একটা কর’।

    মালিঙ্গা কথাটা একটু বেশিই আক্ষরিক অর্থে নিয়ে নিয়েছিলেন! ৪৫তম ওভারের প্রথম চার বলে কিছু করতে পারলেন না, পঞ্চম বলটা স্টাম্পের ওপর দারুণ একটা স্লোয়ার। পেস বুঝতে পারলেন না পোলক, লেগ স্টাম্প এলোমেলো! পরের বলে অ্যান্ড্রু হল ক্রিজে, এবার অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরে আরও একটি স্লোয়ার। হল সেটি খেলতে গিয়েছিলেন সাধারণ ডেলিভারি হিসেবেই, ওখানেই বোকা বনলেন। টাইমিং হলো না ঠিকঠাক, কাভারে উঠে গেল সহজ ক্যাচ।

     

    তারপরও অশনী সংকেতটা দেখেনি আফ্রিকা, তিন উইকেট তো ছিলই। সবচেয়ে বড় কথা ক্যালিস তো ছিলেনই , স্রেফ একটা চার হলেই হয়। পরের ওভারে হলো এক রান, ৪৭তম ওভারে ক্রিজে ক্যালিস। মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক চান্স, বলটা করলেন অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের। ক্যালিস স্কোয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। হ্যাটট্রিক! হঠাৎ করেই অসম্ভবের স্বপ্ন দেখতে শুরু করল শ্রীলংকা। পরের বলে ক্রিজে এনটিনি, এবার দারুণ এক ইয়র্কারে মালিঙ্গা এলোমেলো করে দিলেন স্টাম্প। চার বলে চার উইকেট নিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কখনো দেখেনি এমন কিছু। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ব্যাটসম্যান শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট ক্রিজে, ওই ওভারেই মালিঙ্গার ইয়র্কারে আউট হতে হতেও বেঁচে গেলেন। কোনোমতে সেই ওভার পার করে দিলেন ল্যাঙ্গেভেল্ট, তবে প্রোটিয়াদের তখনও দরকার ২ রান।

     

     

    পরের ওভারটাও দুর্দান্ত করলেন চামিন্ডা ভাস, ল্যাঙ্গেভেল্ট এবারও কীভাবে যেন পার পেয়ে গেলেন। ৪৯তম ওভারে আবার মালিঙ্গা, এবার স্ট্রাইকে রবিন পেটারসেন। প্রথম বলটা একটুর জন্য আউটসাইড এজ হলো না, পরের বলটা লাগল ব্যাটের কানায়। তবে স্লিপকে ফাঁকি দিয়ে সেটি হয়ে গেল চার, ম্যাচটা হাত থেকে ফসকে যেতে যেতেও ধরে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯২-তে বৃষ্টি, ৯৯তে ডোনাল্ড-ক্লুজনারের পাগুলে দৌড়, ২০০৩ এ ভুল হিসেব; ক্রিকেট প্রোটিয়াদের মতো আর কারও হৃদয় এতোবার ভাঙ্গেনি। তবে সেদিন কোনোমতে ক্রিকেট বিধাতাকে দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছিল, ‘নট টুডে’।

    এরপর কী ঘটেছিল?

     শ্রীলংকা ম্যাচটা হেরে গেল, তবে পেল দারুণ এক টনিক। যে প্রেরণা তাদের পৌঁছে দিল ফাইনালে। দক্ষিণ আফ্রিকার যাত্রা অবশ্য থেমে গেছে সেমিফাইনালে। শ্রীলংকাও শেষ পর্যন্ত আর জিততে পারেনি, অ্যাডাম গ্রিলক্রিস্টের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ২০০৭ বিশ্বকাপটা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার।