১৯৭৯ : কিং যেদিন 'রাজা' হয়েছিলেন
ক্যারিয়ারটা সে অর্থে প্রস্ফুটিত হয়নি তার। ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজে যোগ দিয়ে সেটা হোঁচট খেয়েছিল। আর দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘রেবেল ট্যুর’ এ গিয়ে তো শেষই হয়ে গিয়েছিল মোটামুটি। তবে সবচেয়ে বড় মঞ্চের সবচেয়ে বড় দিনে কলিস হয়ে উঠেছিলেন ‘কিং’। লর্ডসে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে কলিস কিংয়ের ইনিংস এমনকি ঢেকে দিয়েছিল ‘কিং’ ভিভ রিচার্ডসকেও। বিশ্বকাপ ফাইনাল কিংকে বানিয়েছিল আক্ষরিক অর্থেই ‘একদিনের রাজা’।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ৯০ মিনিটের মাঝেই পথ হারাতে বসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডেসমন্ড হেইন্স, গর্ডন গ্রিনিজ, আলভিন কালিচরণ, ক্লাইভ লয়েড- একে একে ফিরলেন সবাই। ৯৯ রানেই নেই ৪ উইকেট। ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে যোগ দিলেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান কিং। মাথায় ক্যাপ নেই। গায়ে সুয়েটার।
এরপর যা হলো, তা স্রেফ ৭৭ মিনিটের এক ‘হত্যাযজ্ঞ’। রিচার্ডসের সঙ্গে কিংয়ের রুদ্ধশ্বাস এক জুটিতে পিষ্ট হলো ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ, তবে সে জুটিতে রিচার্ডস শুধুই পার্শ্বনায়ক।
উইকেট পড়ে গেছে, উঁকি দিচ্ছে লাঞ্চের বিরতি। রিচার্ডস চেয়েছিলেন দেখেশুনে খেলতে। সে অনুযায়ী পরামর্শও দিয়েছিলেন কিংকে। তবে তিনি সেদিন পরামর্শ নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না যেন, “আমি জিওফ্রিকে (বয়কট) জিততে দিচ্ছি না কোনোমতেই। লিগে সে কোনও ছাড় দেয় না, এখানে তাকে ছাড়ব কেন?”
কিং ছাড়লেন না কাউকেই।
বোলিংয়ের সময় মুখে একটা মেকি হাসি ছিল বোথামের। তবে শীঘ্রই সেটা মিলিয়ে গেল। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে ইয়ান বোথামকে কাট করে চার মারলেন কিং। পার্ট-টাইমাররা তো আরও ছাড় পেলেন না। শীঘ্রই রিচার্ডস বুঝে গেলেন, তাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। তিনিই বরং চুপচাপ থাকার পথটা বেছে নিলেন। দুজন মিলেই ‘ক্ষ্যাপাটে’ হলে তো ঝুঁকিটা বাড়বে, এর চেয়ে একজন শান্তশিষ্ট থাকাই ভাল। কলিস কিং সেদিন রিচার্ডসকেও ‘শান্ত’ করে রেখেছিলেন!
বব উইলিস সেদিন ছিলেন না, ইংলিশ অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলিকে তাই ভরসা করতে হয়েছিল পার্ট-টাইমারদের ওপর। গ্রাহাম গুচ এলেন। প্রথম বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে চার। লাঞ্চের আগে বোথামকে এলোপাথাড়ি হুক করতে গিয়ে এজড হয়েছিলেন কিং, সেটা চার হয়েছিল। তবে ইনিংসে কিংয়ের মিসহিট ছিল ওই একটিই। ১২৫ রানে ৪ উইকেটে লাঞ্চে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কিংয়ের রান ছিল ১৯।
লাঞ্চের পর তিনি হয়ে উঠলেন আরও উন্মাতাল। ওয়াইন লারকিনসকে পাঠালেন মাউন্ড স্ট্যান্ডের দ্বিতীয় তলায়। সে শট দিয়ে ফিফটি এলো তার। এরপর আরেকটা। এবার লং-অন দিয়ে। সেদিকেই বুনো উল্লাসে মেতেছে ক্যারিবীয় সমর্থকরা। বয়কট এলেন। তাকেও দর্শকদের মাঝে পাঠালেন কিং। ইংল্যান্ড অসহায়। লারকিনস দুই ওভারে দিলেন ২২। গুচ ৪ ওভারে ২৭। বয়কট ৬ ওভারে ৩৮।
কিংয়ের যখন ফিফটিও হয়নি, রিচার্ডস পৌঁছে গিয়েছিলেন নব্বইয়ে।
ফিল এডমন্ডসের বলে স্কয়ার লেগে ডেরেক রেন্ডলের হাতে যখন কিং ধরা পড়লেন, তখনও রিচার্ডস নব্বইয়ের ঘরেই। ৬৬ বল। ৭৭ মিনিট। ১০ চার। ৩ ছয়। ৮৬ রান। দুজনের জুটিতে ১২১ বলেই এলো ১৩৯ রান। ওদিকে অধিনায়ক লয়েড জেনে গেলেন, এই ইনিংসের পর তাদেরকে হারাতে পারবে না কেউ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেদিন হারেনি।
এরপর জীবনে আরও ১৪ হাজারের ওপর দিন গেছে কিংয়ের। তবে ২৩ জুন, ১৯৭৯ সালে লর্ডসের সেই দিনের মতো আর আসেনি হয়তো।
কিং যে সেদিন রাজা হয়ে উঠেছিলেন।
এরপর যা ঘটেছিল-
কিংয়ের কারণে শান্ত হয়ে ছিলেন রিচার্ডস। তবে তিনি ফেরার পর আর থাকলেন না। এরপর আরও ৪৮ রান যোগ করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, রিচার্ডস ছাড়া বাকিরা মিলে করেছিলেন ৫ রান।