• বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিক মুহুর্ত
  • " />

     

    ১৯৭৯ : কৌশলগত কারণে ক্যাচ ফেলেছিলেন লয়েড?

    ১৯৭৯ : কৌশলগত কারণে ক্যাচ ফেলেছিলেন লয়েড?    

    ‘বাছা, বিশ্বকাপটাই হাত থেকে ফেলে দিলে তো!’ 

    ১৯৯৯ বিশ্বকাপে হার্শেল গিবসকে বলা (বা না বলা) স্টিভ ওয়াহর কথাটা ক্রিকেট রূপকথারই অংশ। ক্যাচ মিসের সঙ্গে ম্যাচ হারার সম্পর্কটা যেন ধূমপান আর ক্যান্সারের- অন্য অনেক কারণে ক্যান্সার হলেও অনেক বড় একটা দায় নিতে হয় ধূমপানকেই। অবশ্য গিবসের সেই ভয়ঙ্কর মিসের বছর বিশেক আগে বিশ্বকাপ জেতাতে সহায়তা করেছিল একটা ক্যাচ মিস। গিবসকে বলা ওয়াহর সেই (সম্ভাব্য) কথাটার মতোই প্রচলিত আছে, সেদিন ইচ্ছা করেই জিওফ বয়কটের ক্যাচটা ফেলেছিলেন ক্লাইভ লয়েড। এ কথার সত্যতা অবশ্যই নিশ্চিত হয়নি, তবে লয়েড পরে স্বীকার করেছিলেন, তেমন হলে সেটা খুব একটা ‘খারাপ কৌশল হতো না’! 

    ভিভ রিচার্ডসের সেঞ্চুরি আর কলিস কিংয়ের রাজকীয় ইনিংসে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৮৬ রানের জবাবে শুরুটা ধীরস্থির আর দৃঢ়ই ছিল দুই ইংলিশ ওপেনার মাইক ব্রিয়ারলি ও জিওফ বয়কটের। চা-বিরতি পর্যন্ত কোনো উইকেট যায়নি তাদের, উন্নতিটা হচ্ছিল ধীরে ধীরে। এমনকি রিচার্ডসের পার্ট-টাইম বোলিংকেও তারা খেলছিলেন বেশ সতর্কতার সঙ্গে, রিচার্ডস সেদিন ১২ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ রান। 

    অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, কলিন ক্রফট, জোয়েল গার্নারদের সমন্বয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণের শুরুর বিষটা গায়ে মাখেননি ব্রিয়ারলি-বয়কট। তবে তাদের ইনিংসে লেগেছিল ‘রান-রেট’-এর ‘স্লো পয়জন’। দুজন খেলছেন, সঙ্গে তো গড়াচ্ছে ওভার। প্রয়োজনীয় রান-রেটটা বাড়ছে তাই ধীরে ধীরে, ম্যাচ থেকে ইংল্যান্ড ছিটকে যাচ্ছে ধীরে ধীরে কোনও উইকেট না হারিয়েও! 

     

    বাউন্সারে বেসামাল বয়কট, ১৯৭৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে

     

    দুই অঙ্কে পৌঁছাতেই বয়কটের লেগেছিল ১৭ ওভার। চা-বিরতির পর রিচার্ডসকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলতে গিয়ে মিসটাইমিং করে ফেললেন তিনি। ওয়াইড মিড-অনে ছিলেন লয়েড। ফিল্ডিংয়ে দিনটা সুবিধার যাচ্ছিল না তার সেদিন, যদিও ফিল্ডার হিসেবে তিনি ছিলেন দারুণ। এর আগেই প্রথম স্লিপে লয়েড ফেলেছেন ব্রিয়ারলির ক্যাচ। 

    স্কয়ার লেগে ছিলেন ক্রফট। তিনি নিশ্চুপই ছিলেন। তবে ক্যাচ ওঠার পর থেকেই চিৎকার করছিলেন রবার্টস, ‘ড্রপ ইট, ড্রপ ইট’! বয়কটের ব্যাটিংয়ের ধরনটাই ছিল এমন, রবার্টসও চেয়েছিলেন তিনি যাতে ব্যাটিং করেন পুরো ৬০ ওভারই। লয়েড তার কথা শুনলেন কিনা জানা নেই। তবে হাত উঁচু করলেন তিনি, বলটা গিয়ে লাগল তার এক তালুতে। এরপর বেরিয়ে গেল। লয়েড নিচে নামতে থাকলেন, বলটা তার এখানে-সেখানে লেগে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিল মাটিতে। লয়েড ততক্ষণে আধশোয়া। বলটা তুলে এরপর ছুঁড়ে মারলেন হতাশায়। 

     

     

    আসলেই হতাশা? ক্যাচ মিসের পর ক্রফট দুই ধরনের শব্দ পেয়েছিলেন মাঠজুড়ে। আর্তনাদ আর উল্লাস। তার মনে হয়েছিল, ক্যারিবীয়রাই উল্লাস করছেন, ইংলিশরা করছেন আর্তনাদ! অবশ্য অনেকদিন বাদে ব্যাপারটার দিকে তাকালে একটু অন্যরকম মনে হয় গর্ডন গ্রিনিজের কাছে। বয়কটের যা সামর্থ্য, তাতে তার ক্যাচ মিস করাটা কোনও কাজের কথা নয়। অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারতেন তিনি। 

    অবশ্য সেটা সেদিন করা হয়নি বয়কটের। যতক্ষণে ব্রিয়ারলির সঙ্গে তার জুটি ভেঙেছে, ততক্ষণে ইংল্যান্ডের প্রয়োজনীয় রান-রেট পেরিয়ে গেছে সাড়ে সাতেরও বেশি। গ্রিনিজ সম্ভাব্য ক্ষতির কথা মনে করিয়ে দিলেও তাই শেষ পর্যন্ত লয়েডের সেই মিসের ব্যাপারে হাসিমুখে বলেন, ‘যেটাই হোক, শেষ পর্যন্ত এটা আমাদের পক্ষেই এসেছিল।’ 

    আর লয়েড নিজে বলেন, ‘অনেকেই বলেন আমি তাকে ক্রিজে রাখতে ক্যাচটা ইচ্ছা করে ছেড়েছিলাম, আসলে সেটা সত্যি নয়। তবে এমনটা হলে সেটা কিন্তু বাজে কৌশল হতো না!’ 

    ক্যাচ মিস সবসময় ম্যাচ হারায় না, বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো ম্যাচ জেতাতেও সহায়তা করে! 


    এরপর যা ঘটেছিল- 
    শেষ পর্যন্ত হোল্ডিংয়ের বলে শর্ট মিড-উইকেটে আলভিন কালিচরণের হাতে ক্যাচ দিয়ে বয়কট ফিরেছিলেন, ১০৫ বলে ৫৭ রান করে। রানতাড়ায় মোমেন্টামটা আর পায়নি ইংল্যান্ড, গ্রাহাম গুচের ২৮ বলে ৩২ রানের মোটামুটি ক্যামিওর পরও। আর জোয়েল গার্নারের তোপে ইংল্যান্ড থেমে গিয়েছিল ৯ ওভার বাকি থাকতেই, টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।